বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 507 বার পঠিত
নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একাধিক উদ্যোগের পরেও লেনদেনে গতি ফেরেনি পুঁজিবাজারে। প্রতিনিয়তই বাজারে লেনদেন কমছে। এক হাজার কোটি টাকার গড় লেনদেন দুইশো কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
চরম আস্থা ও তারল্য সংকটের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এভাবে বাজার চলতে থাকলে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায় গত ৩১ জানুয়ারি ডিএসইর সাধারণ সূচক ছিল পাঁচ হাজার ৮২১ পয়েন্ট। গত সাড়ে চার মাসে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৯৬ পয়েন্ট। সময়ের মধ্যে সূচক কমেছে ৬২৫ পয়েন্ট।
অন্যদিকে, গত জানুয়ারি মাসে বাজারে গড় লেনদেন ছিল প্রায় হাজার কোটি টাকা। ১৫ মে পর্যন্ত কমে দাঁড়িয়েছে ২৫৫ কোটি টাকায়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগ শূন্য হয়ে পড়বেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
গত এক বছরে যে আইপিওগুলো বাজারে এসেছে সেগুলোর অনেকটাই অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে। প্লেসমেন্ট ও আইপিও বাণিজ্যের কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে প্লেসমেন্টের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে চলে গেছে। দুর্বল কোম্পানিকে উচ্চহারে প্রিমিয়াম দিয়ে বাজারে আনার কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, তারল্য সংকট ও বাজারে আস্থা না থাকায় লেনদেনে ভাটা পড়েছে।
তিনি বলেন, বাজারে এখন আস্থা শূন্যের কোটায় রয়েছে। যতগুলো আইপিও বাজারে এসেছে প্রত্যেকটিতেই বিনিয়োগকারীরা ঠকেছে। তারা ব্যালেন্স শিট এবং আইপিওর ওপর কোনো আস্থা রাখতে পারছে না বলেই বাজারের এমন চিত্র।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তারল্য বৃদ্ধি ও বাজারে ভালো কোম্পানিকে আনতে হবে বলে মনে করেন মিনহাজ মান্নান ইমন।
অপরদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে দূরে থাকা এবং প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাওয়ার কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কোনো ভূমিকা নেই। মার্চেন্ট ব্যাংক ও আইসিবি বাজারে কোনো ভূমিকা রাখছে না। যদিও বিএসইসি আইপিও বন্ধসহ প্লেসমেন্টের ওপরে রুল জারি করলেও ইতিমধ্যেই প্লেসমেন্টের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে চলে গেছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিস্ব হয়ে গেছেন। আস্থা সংকটের পড়ে তারা নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। যার প্রভাব বাজারে পড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
প্লেসমেন্টের কারণে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাওয়ায় তারল্য ও আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে তারল্য ও আস্থার সংকট বিরাজ করছে। প্লেসমেন্টের কারণে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
তবে এ সংকট কেটে যাবে জানিয়ে শাকিল রিজভী বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য প্রণোদনা থাকছে। আগামী বাজেটের পর বাজার ভালো হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে।
তিনি আরো বলেন, লেনদেন কমার আর কিছু নেই। এক হাজার কোটি টাকা থেকে কমতে কমতে এই অবস্থায় এসেছে, এখন লেনদেন বাড়বে।
শাকিল রিজভী বলেন, বাজার সূচক ও লেনদেন কমা বা বাড়ার সঙ্গে বিএসইসির কোননো সম্পর্ক নেই। বিএসইসির কাজ আইন করা এবং সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেটি দেখা। বাজারে বিনিয়োগ করতে হলে কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল দেখেই বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগ করতে হবে। ভালো কোম্পানি দেখে বিনিয়োগ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, বাজারে তারল্য ও আস্থার সংকট রয়েছে। এ থেকে উত্তোরণে শুধু প্রণোদনা দিলে চলবে না, সরকারের উচিত হবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে বাজারে লিস্টিংয়ে বাধ্য করা।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ভালো কোম্পানি এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করুন, তাহলেই লাভবান হবেন।
Posted ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed