শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

এনসিসি ব্যাংকের এমডির আবেদন আবারও নাকোচ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০৪ আগস্ট ২০২০   |   প্রিন্ট   |   334 বার পঠিত

এনসিসি ব্যাংকের এমডির আবেদন আবারও নাকোচ

এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের পুনঃ নিয়োগের আবেদন আবারো নাকচ করা হয়েছে। গতকাল এরকম একটি আবেদন বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তদান্তাধীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

সোমবার বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি ব্যাংকটিতে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে এনসিসি ব্যাংকে বিদায় জানাতেই হলো মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে। গত ৩০ জুলাই ছিল তার প্রথম মেয়াদের শেষ দিন।

এর আগে একই কারণে পুনর্নিয়োগের আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সোমবার বলেন, মোসলেহ উদ্দিনের পুনঃনিয়োগ পুনঃবিবেচনার আবেদন নাকচ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত চিঠি বিকেলে ব্যাংকটিতে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের বিষয় যেহেতু তদান্তাধীন আছে এবং এ সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্ট এবং চূড়ান্ত ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এসে না পৌঁছানোয় এ পর্যায়ে আর নিয়োগ দেওয়া গেল না।

যমুনা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদ থেকে ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এনসিসি ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) পদে যোগ দেন মোসলেহ উদ্দিন। ২০১৭ সালের জুলাইতে তিনি এমডির দায়িত্ব পান। গত জুলাইয়ের শুরুতে মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে এনসিসি ব্যাংকের এমডি হিসেবে পুনঃনিয়োগে অনুমোদন দেয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়।

গত বছরের এপ্রিলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারে মোসলেহ উদ্দিন ও তার স্ত্রীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৪টি ব্যাংক হিসাব, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছয়টি মেয়াদি আমানত, সীমাতিরিক্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এবং শেয়ারবাজারে চারটি বিও হিসাব পরিচালিত হওয়ার তথ্য পায় বিএফআইইউ। এতে মোট ৩৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা (মার্কিন ডলার বাদে) অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।

বিএফআইইউর পর্যালোচনায় বলা হয়, মোসলেহ উদ্দিন কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় নৈতিকস্খলন, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ২(শ)(১) এবং ২(শ)(১৯)-এ বর্ণিত অপরাধ। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারে হিসাব খোলার সময় তিনি অর্থের উৎস সম্পর্কে অসত্য তথ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা ও বিনিয়োগ করেছেন, যা মানি লন্ডারিংয়ের ভাষায় প্লেসমেন্ট হিসেবেও পরিগণিত। সঞ্চয়পত্র ক্রয় বিধিমালার সর্বোচ্চ সীমা একের পর এক লঙ্ঘন করেছেন। নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে সাড়ে ছয় কোটি টাকার অধিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় ও মুনাফা উত্তোলন করেছেন, যা শুধু রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের শামিলই নয়, একটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নৈতিকস্খলনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ ধরনের একজন ব্যক্তির কাছে একটি ব্যাংক তথা আমানতকারীদের আমানত সুরক্ষিত নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়।

এ ছাড়া মোসলেহ উদ্দিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ২০১৮ সালে দাখিলকৃত আয়কর বিবরণীতে তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৮টি হিসাবের তথ্য গোপন করে মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে সরকারকে বঞ্চিত করেছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২(শ) ধারা মোতাবেক করসংক্রান্ত অপরাধ।

জানা যায়, ঐ সময়ই মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএফআইইউ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি তদন্ত চলাকালে সাময়িক বরখাস্ত পর্যন্ত করা হয়নি তাঁকে। ফলে ব্যাপক দুর্নীতি করেও গত ১৫ মাসের বেশি সময় স্ব-পদে বহাল তবিয়তে ছিলেন তিনি।

ব্যাংক কম্পানি আইনের ১৫(৪) ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত হন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যাংকের আমানতকারীদের ক্ষতিকর কার্যকলাপ রোধকল্পে বা জনস্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই এমডির বিরুদ্ধে ব্যাংক কম্পানি আইনের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

জানা যায়, বিএফআইইউর পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পাওয়ার পর মোসলেহ উদ্দিনের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তাঁর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। তিনি যে ব্যাখ্যা দেন তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এর প্রেক্ষিতে তাঁকে অপসারণ নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়। এরপর কয়েকদফা ব্যাখ্যা তলবের পাশাপাশি এনসিসির এমডিকে শুনানির জন্য ডাকা হয়। কয়েক মাস আগে কমিটি তাদের সুপারিশ গভর্নরের কাছে দাখিল করেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, স্টান্ডিং কমিটিতে শুনানি চলাকালে তিনি যখন দেখতে পান শেষ রক্ষা বুঝি আর হচ্ছে না, তখন তিনি আদালতে রিট করে অপসারণ প্রক্রিয়া আটকে দেন। আদালতে রিটে তিনি উল্লেখ করেন, যেহেতু তিনি বিএফআইইউর প্রতিবেদন পাননি, সেজন্য স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে চাহিদামত জবাব দিতে পারছেন না। আবার ঐ রিটের আদেশে আদালতও বিএফআইইউকে কোন প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলেননি। এতে রিট নিষ্পত্তিতে কালক্ষেপন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:০০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ আগস্ট ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।