| শনিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 1771 বার পঠিত
ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস সেবা চালু ও পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তনে একটি খসড়া কাঠামো প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের নেতৃত্বে গঠিত আহ্বায়ক কমিটি। উপযোগী কিছু পুরনো বাসের সঙ্গে ৪ হাজার নতুন বাস যোগ করে ছয়টি আলাদা কোম্পানি গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে এতে। তবে নতুন বাসগুলো কিনতে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণ চেয়েছেন মালিকরা। এজন্য খসড়া কাঠামোয় মালিকদের স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ দেয়ার সুপারিশ থাকছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে নতুন বাস কেনার জন্য মালিকদের ১২ থেকে ১৮ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে আসছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকঋণের সুদ, ভ্যাট, ট্যাক্স মিলিয়ে একটি বাসের পেছনেই বিপুল বিনিয়োগ করতে হয় মালিকদের। এ অবস্থায় বাস ক্রয়ে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হলে ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস সেবা প্রবর্তনে তেমন কোনো বাধা থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, কোম্পানিভিত্তিক বাস সেবা প্রবর্তনের আগে শহর থেকে মিনিবাস ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস তুলে দেয়ার সুপারিশও থাকছে কমিটির প্রতিবেদনে। এজন্য মালিকদের নির্দিষ্ট হারে ভর্তুকি দেয়ার সুপারিশও করা হবে। আর যেসব বাস মোটামুটি ভালো অবস্থায় আছে এবং বয়স পাঁচ বছরের নিচে, সেগুলো প্রয়োজনীয় মেরামত করে কোম্পানিতে যুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। এসব পুরনো বাসের সঙ্গে নতুন করে পর্যায়ক্রমে ৪ হাজার বাস কেনারও সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিটি।
কোম্পানিভিত্তিক বাস প্রবর্তনের লক্ষ্যে গঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দিন। কমিটির কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমরা একটা খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছি। বাস মালিক, মালিক-শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নিয়েই প্রস্তাবটি তৈরি করা হয়েছে। প্রায় তিন হাজার বাস মালিক আমাদের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন। পরিকল্পনা করছি, এসব মালিককে নিয়ে ছয়টি কোম্পানি গঠন করা হবে। বাসের রুট হবে ২২টি।
প্রস্তাবটিতে মালিকদের সম্মতির পাশাপাশি কিছু আপত্তির জায়গাও আছে। বিশেষ করে ছোট ছোট কোম্পানির বাস মালিকরা মনে করছেন, কোম্পানির মধ্যে চলে গেলে তাদের আয় কমে যাবে। পাশাপাশি ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ কমবে। বাড়বে বড় মালিকদের কাছে অধিগ্রহণ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি। এ প্রসঙ্গে ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ছোট কোম্পানির মালিকদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই। যেসব মালিকের একটা বা দুটো বাস থাকবে, তারা কিন্তু সেই কোম্পানিতে থেকেই বাসের সংখ্যাটি বাড়ানোর সুযোগ পাবেন। তারা যদি কোম্পানির ভেতরে থেকে বলেন, আমি আরো ১০টা গাড়ি যুক্ত করব, তাহলে সেই সুযোগটি কিন্তু তাদের থাকছে। অন্যদিকে যদি কোম্পানি মনে করে যে কোনো মালিকের আরো গাড়ি বাড়ানোর প্রয়োজন, তাহলে কোম্পানি থেকেই সেই বাস মালিককে বাস কেনার সুযোগ করে দেয়া হবে। কোম্পানিতে থাকলে ছোট মালিকরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। বরং তাদের আয় বাড়ার যথেষ্ট সুযোগ থাকবে।
নতুন বাস কিনতে মালিকদের স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে নতুন বাস কিনতে হলে ১২ থেকে ১৮ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হয়। এ অবস্থায় সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ চাইছেন মালিকরা। তাদের দাবিটি যৌক্তিক। খসড়া প্রস্তাবনায় তাদের এ দাবিকে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
শুধু স্বল্প সুদে ঋণ নয়, সরকারের তরফ থেকে ডিপো, টার্মিনাল ও পার্কিং এলাকা নির্মাণ করে দেয়ার দাবিও জানিয়েছেন মালিকরা। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহর সঙ্গে, যিনি গঠিত আহ্বায়ক কমিটিতেও সদস্য হিসেবে রয়েছেন। খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে গাড়ি কিনতে ঋণ দেয়া হবে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় মালিকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এছাড়া আমরা দাবি করেছি, সরকার আমাদের বাস ডিপো, টার্মিনাল ও পার্কিং প্লেস নির্মাণ করে দেবে। প্রয়োজনে আমরা সরকারের কাছ থেকে সেগুলো লিজ নেব। তবে দীর্ঘদিনেও এসব দাবি ঝুলে আছে।
অনেকটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ডিপো করার কথা ছিল, এখন পর্যন্ত সে রকম কিছু আমরা দেখতে পাচ্ছি না। পুরনো গাড়িগুলো সরকারের কিনে নেয়ার কথা, সেগুলোও হয়নি। এখন আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি, প্রস্তাবগুলো লিখিত আকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর।
এদিকে বিমানবন্দর-সায়েদাবাদ ও কুড়িল-পূর্বাঞ্চলে কোম্পানিভিত্তিক দুটি বাস করিডোর গড়ে তুলতে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এ দুই করিডোরে কোম্পানিভিত্তিক বাস করিডোরের ধারণাপত্র বিষয়ে সুপারিশের জন্য একটি কমিটি গঠন হয়েছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বর্তমানে এ পরীক্ষামূলক প্রকল্প ও কমিটির কার্যক্রম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিটিসিএর কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে ডিটিসিএর ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান বলেন, পাইলট প্রকল্পের একটা কনসেপ্ট ডিজাইন করা হয়েছে। এখন এটা বাস্তবায়নের পর্যায়ে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে বৃহৎ পরিসরে বাস ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা করা হচ্ছে, আমাদের পাইলট প্রকল্পটি ঢাকা দক্ষিণের সঙ্গে যুক্ত করে এগিয়ে নেয়া হবে। তবে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কিছুদিন আগে একই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আরেকটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। ডিএসসিসি মেয়রের নেতৃত্বে এ কমিটি কাজ করছে।
Posted ১:৪০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed