বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তলানিতে জনতা ব্যাংকের জনপ্রিয়তা

আদম মালেক   |   রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   431 বার পঠিত

তলানিতে জনতা ব্যাংকের জনপ্রিয়তা

এক সময় ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক। এখন জনতা ব্যাংকের জনপ্রিয়তা তলানিতে। ব্যাংকটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বয়ে চলছে পাহাড়সম খেলাপি ঋণ। খেলাপি আদায়ের সীমা বিপদসীমার উপরে। ব্যর্থ নির্ধারিত মূলধন পর্যাপ্ততা সংরক্ষণে। সার্বিক স্বাস্থ্য পরিমাপের মানদণ্ডে জনতা ব্যাংক শক্তিশালী অবস্থানতো দূরের কথা মোটামুটি ভালো অবস্থায়ও নেই। এটি প্রান্তিক মানে যা তেমন ভালো নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

২০১১ সালের দিকে যখন সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পায়, তখনও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতার অবস্থা অনেক ভালো ছিল। অথচ এখন এটি চলছে ধার-দেনা করে। এখনও বহু সূচকে ব্যাংকটি পিছিয়ে আছে। বাড়ছে পরিচালন ব্যয়, কমছে পরিচালন আয়। আমদানি রফতানি ও রেমিটেন্সেও নিম্নমুখী প্রবণতা। ৫ বছরের মধ্যে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় তলানিতে নেমেছে। ২০১৯ সালে এই ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৬ পয়সা। অথচ ২০১৫ সালে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ২৫ টাকা ১২ পয়সা। শেয়ারপ্রতি মূল্যও ভালো নয়। ২ বছরে জনতা ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য ৫১ টাকা ১২ পয়সা হ্রাস পায়। ২০১৭ সালে নিট সম্পদ মূল্য ছিল ২৬৮ টাকা ৩৬ পয়সা আর ২০১৯ সালে তা নেমে আসে ২১৭ টাকা ২৩ পয়সায়।

চলতি বছরের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকাই ছিল খেলাপি ঋণ। এসব খেলাপি ঋণের বড় অংশই জনতা ব্যাংকের, যার পরিমাণ ১৫ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। গেল মাসে জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এ তথ্য জানান। তাছাড়া খেলাপি আদায়েও জনতা ব্যাংকের অবস্থা হতাশাজনক। চলতি বছর জনতা ব্যাংকে ১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৩০ জুন পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র আড়াই কোটি টাকা। অথচ সোনালী ব্যাংক আদায় করেছে আড়াইশ কোটি টাকা। এদিকে ব্যাসেল-৩ অনুসারে মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থাকলে এর পরিমাণ ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এজন্য ব্যাংকটি ৩ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতির কবলে রয়েছে।

জনতা ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা, ২০১৯ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে আমদানি কমেছে ৯৪৫ কোটি টাকা। সে সময় ব্যাংকটির আমদানির পরিমাণ ২১ হাজার ৯৬ কোটি আর ২০১৮ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪১ কোটি টাকা। গেল বছর ব্যাংকটির রফতানির পরিমাণ ৯ হাজার ৪ কোটি টাকা, যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রবাহও পতনমুখী । ২০১৯ সালে ব্যাংকটি বৈদেশিক রেমিটেন্স আহরণ করেছে ৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা আর ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। পরিচালন আয়ের ক্ষেত্রেও জনতা ব্যাংকের চিত্রে পতনধারা। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির পরিচাল আয় ছিল ৭০৯ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা, যা বিগত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৫ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৭২ কোটি ৫ লাখ টাকা আর ২০১৭ সালে এই মুনাফা ছিল ১ হাজার ১৩৬ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পরিচালন আয় না বাড়লেও বাড়ছে জনতার পরিচালন ব্যয়। ২০১৯ সালে এই ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় বেড়েছে ৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এ সময় ব্যাংকটির পরিচালন ব্যয় ছিল ১ হাজার ৪০৩ কোটি ৮৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আর ২০১৮ সালে ছিল ১ হাজার ৩৯৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

ক্যামেলস রেটিং হচ্ছে ব্যাংকের সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিমাপের মানদণ্ড। ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা, সম্পদের মান, ব্যবস্থাপনা, উপার্জন ক্ষমতা, তারল্য প্রবাহ, বাজার ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীলতা- ৬টি সূচকের অবস্থার ভিত্তিতে এই রেটিং নির্ধারিত হয়।

এই রেটিংয়ে ৫টি ভাগ করা হয়। রেটিং ১ বা শক্তিশালী ভালো মান। রেটিং-২ এর অর্থ সন্তোষজনক। রেটিং-৩ পাওয়া ব্যাংককে মোটামুটি ভালো বলা হয়। রেটিং-৪ প্রাপ্ত ব্যাংককে বলা হয় প্রান্তিক মানের। অর্থাৎ এগুলোর অবস্থা ভালো নয়। আর সবচেয়ে খারাপ রেটিং হচ্ছে ৫, যাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে অসন্তোষজনক। জনতা ব্যাংকর জায়গা হয়েছে প্রান্তিক অবস্থায় থাকা ব্যাংকের তালিকায়।

সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই ঋণগুলো দেওয়া হয়েছে। জনতা ব্যাংকের শীর্ষ আট ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি গ্রুপ ২০১৮ সালে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে।

জানা গেছে, শীর্ষ আট ঋণখেলাপির মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে ‘অ্যাননটেক্স গ্রুপ’। বহুল আলোচিত এই গ্রুপের কাছে ব্যাংকের পাওনা ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। এই কোম্পানির কাছে জনতা ব্যাংকের আটকে আছে ৩ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ক্রিসেন্ট ও অ্যাননটেক্সকে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়। সেই ঋণের টাকা ফেরত না দিয়ে পরে আরও কয়েকগুণ টাকা হাতিয়ে নেয় গ্রুপ দুটি। ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ড. আবুল বারকাত।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:০১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।