মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে ‘নতুন দরিদ্র’ ২ কোটি ৪৫ লাখ

বিবিএ নিউজ.নেট   |   বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১   |   প্রিন্ট   |   239 বার পঠিত

দেশে ‘নতুন দরিদ্র’ ২ কোটি ৪৫ লাখ

মহামারি সংক্রমণের এক বছর পার হয়েছে। ঋণের জালে জড়িয়ে এবং সঞ্চয় হারিয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী দৈনন্দিন জীবন চালাতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে।

করোনাকালে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

টেলিফোনের মাধ্যমে দেশব্যাপী তিন ধাপে করা এই জরিপে কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতিপ্রকৃতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে এর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, শহুরে বস্তিতে করোনা-পূর্ব অবস্থার আয়ের চেয়ে এখনকার আয় ১৪ শতাংশ কম।

দেশে বিদ্যমান দারিদ্র্য সংকট নিয়ে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন গত ২০ এপ্রিল অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই ফলাফল তুলে ধরেন।
মহামারির কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। এদের মাঝে আছে হত-দরিদ্র এবং মাঝারি দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। এদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। এছাড়া রয়েছে দরিদ্র নয় কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা এক শ্রেণির মানুষ যাদের বলা হচ্ছে ভালনারেবল নন পুওর বা ভিএনপি। দেখা গেছে, দারিদ্রসীমার উপরে কিন্তু মধ্যম জাতীয় আয়সীমার নিচে থাকা এই শ্রেণির মানুষদের অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে সবচেয়ে ধীরগতিতে। গত জুনে দরিদ্র নয় কিন্তু সেই ঝুঁকিতে থাকা এই মানুষদের ৭২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিলো। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘নতুন দরিদ্র’ হিসেবে। সেই নতুন দরিদ্রদের ৫০ শতাংশ এখনও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের তালিকায় বিদ্যমান। এই হার শহরে ৫৯ শতাংশ এবং গ্রামে ৪৪ শতাংশ। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ১৪.৮ শতাংশ নতুন দরিদ্রদের এই হার বিগত বছরের জুনে ছিলো ২১.২ শতাংশ।

যদিও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিগত জুন মাস থেকে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারপরও কোভিডের আগে কাজ ছিলো কিন্তু এখন বেকার এমন মানুষ রয়েছে ৮ শতাংশ। কর্মহীনতার এই ধারা নারীদের জন্য বেশ আশঙ্কাজনক। কোভিডের আগে কর্মজীবী ছিলেন এমন নারীদের এক-তৃতীয়াংশ গত বছর জুন মাস থেকে এখনও বেকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার নেমে এসেছে ১৬ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ এ।

স্বল্প আয় এবং বেকারত্বের পাশাপাশি কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের প্রকৃতি বদলে যাওয়াটাও একটি বড় চিন্তার বিষয়। কোভিডের কারণে অনেককেই তাদের পেশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এদের অধিকাংশই ‘অদক্ষ শ্রমিক’ হিসেবে নতুন পেশা গ্রহণ করেছে। যেমন- অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক, বেতনভুক্ত কর্মী এবং কারখানার কর্মীরা দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেছে।

ড. ইমরান মতিন তার বক্তব্যে নারীদের কর্মহীনতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কম। আর কোভিড-সৃষ্ট এই অবস্থা নারীদের শ্রমবাজার থেকে আরও ছিটকে ফেলতে পারে।

তিনি আরও বলেন, পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণ করায় দরিদ্রদের দুরাবস্থা আরও বাড়ছে।

শুধুত্র কৃষিখাতই বলা চলে কোভিড-পূর্ব অবস্থার মতো ইতিবাচক অবস্থান গড়তে পেরেছে। শহরে আয়ের সুযোগ হ্রাস পাওয়ায় বস্তি থেকে গ্রামে চলে যাওয়ার ঘটনা প্রচুর ঘটেছে। গতবছর ২৭.৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়েছিলো যাদের ৯.৮ শতাংশ এখনও ফেরেনি। প্রাক-কোভিড অবস্থার তুলনায় আয় কমলেও খাবারের ব্যয় বাদে দৈনন্দিন যে ব্যয় সেটি গত জুন থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। ভাড়াবাড়িতে থাকা অধিকাংশ শহুরে দরিদ্রদের জন্য এটি নির্মম বাস্তবতা। সবার সঞ্চয় কমে গেছে আশ্চর্যজনকভাবে। ভিএনপি এবং দরিদ্র নয় এমন শ্রেণির মানুষদের সঞ্চয়ের পরিমাণ কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে নিচে নেমে গেছে। একইসাথে সব শ্রেণীতেই ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদিও কোভিড-কালে সামাজিক সুরক্ষা নামমাত্র ভূমিকা পালন করছে কিন্তু এটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। শহরের দরিদ্র শ্রেণী এবং ‘নতুন দরিদ্র’দের জন্য বর্তমানে থাকা সুরক্ষা কর্মসূচির পাশাপাশি কার্যকরী ও প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন ও তাৎপর্যপূর্ণ আরও কর্মসূচি হাতে নেওয়া উচিত।

দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়া নারী ও নতুন দরিদ্রদের সহায়তার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন ড. হোসেন জিল্লুর। তিনি জানান, সিএসএমই-সহ অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় পড়া খাতগুলোতে একটি পরিকল্পিত এবং জোর ধাক্কা দেয়া প্রয়োজন। শুধু তাই নয় তিনি অতিদ্রুত একটি জাতীয় সিএসএমই পুনরুদ্ধার কর্মসূচি প্রণয়নেরও আহ্বান জানান।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:১৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11190 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।