বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০১৯ | প্রিন্ট | 474 বার পঠিত
পাঁচটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পাঁচ বছরের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিনটি কোম্পানি। দুটি কোম্পানি তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেবে। এছাড়া আগের বছরের তুলনায় লভ্যাংশের পরিমাণ বেড়েছে আরও দুটি কোম্পানির।
জুন-ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ হিসাব-বছরের (২০১৮-১৯) ঘোষণা করা লভ্যাংশ পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গত শনিবার পর্যন্ত জুন-ক্লোজিং ৩০টি কোম্পানি ২০১৮-১৯ হিসাব-বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১২টির লভ্যাংশের পরিমাণ বেড়েছে। বিপরীতে আগের বছরের তুলনায় লভ্যাংশ কমেছে পাঁচটির। নতুন তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানি এবার প্রথম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বাকি ১০টি কোম্পানির লভ্যাংশ অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশির ভাগ কোম্পানির লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি এবার তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। লভ্যাংশ ঘোষণা করা ৩০টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র তিনটি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের শুধু বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকি ২৭টি কোম্পানি হয় নগদ অথবা বোনাস শেয়ারের পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশও দিচ্ছে।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটে বোনাস লভ্যাংশের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপের কারণে এবার নগদ লভ্যাংশের প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধি খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। অবশ্য এর মধ্যেই কিছু কিছু কোম্পানি ভালো করছে।
চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার জন্য উৎসাহিত করতে বোনাস লভ্যাংশের ওপর করারোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বাজেটে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- কোনো কোম্পানির নির্দিষ্ট বছরের মুনাফার ৭০ শতাংশের বেশি রিটেইন আর্নিংস, রিজার্ভ বা সারপ্লাস হিসাবে রাখলে তার ওপরে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। অর্থাৎ কোম্পানির মুনাফার ৭০ শতাংশের বেশি রিজার্ভে রাখার ক্ষেত্রে পুরো অংশের ওপরে ১০ শতাংশ কর দিতে হবে।
এছাড়া নির্দিষ্ট বছরে নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা বা বিতরণ করলে, তার ওপরে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। আর নগদ লভ্যাংশ না দিলেও বোনাস শেয়ারের ওপরে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে- এমন বিধান করা হয়েছে।
বাজেটে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা বেড়েছে- এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেটে বোনাস লভ্যাংশের বিষয়ে করারোপের একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কারণে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। আর যদি কোনো কোম্পানির নগদের পাশাপাশি বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার পরিমাণ বেড়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে ওই কোম্পানি ভালো করছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবার লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে বড় ধরনের চমক দেখিয়েছে নর্দান জুট। গত বছর কোনো লভ্যাংশ না দিয়ে ‘জেড’ গ্রুপভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি এবার পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে শেয়ারহোল্ডাররা ১০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পাবেন। এর আগে ২০১৬-১৭ হিসাব-বছরে ২০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয় কোম্পানিটি। তার আগের বছর কোম্পানিটি থেকে ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পায় বিনিয়োগকারীরা।
নর্দান জুটের পাশাপাশি পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লি., ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, বিএসআরএম ও সামিট পাওয়ার। এছাড়া ডরিন পাওয়ার, এনভয় টেক্সটাইল ও ডেসকো চার বছরের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেবে। কোম্পানিগুলোর প্রতিটি নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর ইউনাইটেড পাওয়ার ও ডরিন পাওয়ার নগদের পাশাপাশি লভ্যাংশ হিসাবে বোনাস শেয়ারও দেবে।
এদিকে নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে জেনেক্স ইনফোসিস ৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেবে। রানার অটোমোবাইল ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেবে। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিলভা ফার্মাসিউটিক্যাল ৬ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসাবে দেবে।
অপরদিকে গত বছরের তুলনায় লভ্যাংশের পরিমাণ কমে যাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নূরানী ডাইং, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, অ্যাপেক্স টেনারি, ইবনে সিনা এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড।
লভ্যাংশ অপরিবর্তিত থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফারইস্ট নিটিং, রহিম টেক্সটাইল, ন্যাশনাল পলিমার, কেডিএস, আর্গন ডেনিম, জেএমআই সিরিঞ্জ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, একমি, বিডি ল্যাম্প ও মালিক স্পিনিং।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)- এর সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগকারীরা সবসময় কোম্পানি থেকে ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশা করেন। তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশের হার বাড়া ভালো লক্ষণ। আশা করা যায়, সার্বিক পুঁজিবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
Posted ২:৪৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed