আদম মালেক | বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১ | প্রিন্ট | 608 বার পঠিত
করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় প্রণোদনার কৃষি ঋণ বিতরণে সরকারি ব্যাংকগুলো এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে আছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। আবার অনেক নতুন ব্যাংকের তৃণমূলে শাখা না থাকায় কৃষিঋণ বিতরণে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযোগ নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ বিতরণ করে অপারেটিং চার্জ দাবি করায় তা প্রত্যাখ্যাান করে বাংলাদেশে ব্যাংক। এ কারণে ২ বার সময় বাড়িয়েও প্রণোদনার কৃষি ঋণ সম্পূর্ণ বিতরণ হয়নি। যদি বাণিজ্যক ব্যাংকগুলো নিয়ম মেনে ঋণ বিতরণ করতো তাহলে অনেক আগেই প্রণোদনার ঋণ বিতরণ হয়ে যেতো। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘন তেমন গুরুতর নয়। অনেকটা বিপদসীমার নিচে। ঐ কর্মকর্তা আরো দাবি করেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতি আরোপিত নিয়মের ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভুল আছে। এ কারণে নিয়মের দোহাই দিয়ে কোনো কোনো ব্যাংকে প্রণোদনার ঋণ বিতরণ আটকে দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রণোদনার কৃষি ঋণ আমরা বিতরণে আমরা আন্তরিক। আমাদের ৩৭টি উপশাখাসহ ১৪৯ টি শাখা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ঋণ বিতরণ গতিশীল করার জন্য আমরা এনজিওদের দ্বারস্থ হচ্ছি। তবে ঋণ বিতরণে কৃষক পর্যায়ে সুদহার ৪ শতাংশ হওয়ায় সব এনজিও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর পরও ১৫টি এনজিওর মাধ্যমে প্রণোদনার ঋণ বিতরণ হচ্ছে।
করোনার আঘাত মোকাবিলার জন্য কৃষি খাতে সরকারের আর্থিক সহায়তা অর্থাৎ প্রণোদনার ঋণের দুটি প্যাকেজ চলমান। এ সব ঋণের কৃষক পর্যায়ে সুদহার চার শতাংশ। এ প্রণোদনার ঋণের অর্থ বিতরণকারী ব্যাংক অপারেটিং চার্জ হিসেবে সরকারের কাছে এক শতাংশ পাচ্ছে। বিতরণকারী ব্যাংক এ ঋণ বিতরণ করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতিবেদন জমা দিলে এক শতাংশ হারে অপারেটিং চার্জের অর্থ পাবে। কৃষিখাতে এ প্রণোদনা তহবিলের পরিমান ৫ হাজার কোটি টাকা। এ তহবিল থেকে মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মাছ চাষ, পোলট্রি ও ডেইরি এবং প্রাণিসম্পদ খাত পাবে চলতি মূলধন। এর বাইরে শস্য ও ফসল খাত যুক্ত করা হয়। ধান, গমসহ সব দানা শস্য, অর্থকরী ফসল, শাকসবজি চাষের জন্যও চার শতাংশ রেয়াতি সুদহারে ঋণ পাবেন কৃষক।
পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণার সময় নীতিমালায় বলা হয়, চলতি মূলধন পাবে মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মাছ চাষ, পোলট্রি ও ডেইরি এবং প্রাণিসম্পদ খাত। কৃষক ছাড়াও যেসব উদ্যোক্তা উৎপাদিত কৃষিপণ্য কিনে সরাসরি বিক্রি করে থাকেন, তারাও এই স্কিমের আওতায় ঋণ নিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এককভাবে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিতে পারবে না। ব্যাংক তা সর্বোচ্চ চার শতাংশ সুদে দেবে। এই ঋণ সর্বোচ্চ দেড় বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। প্রথম ছয় মাস কৃষক ঋণ পরিশোধে বিরতি পাবেন এবং পরের ১২ মাসে তা শোধ করতে হবে।
করোনার আঘাতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এপ্রিল মাসে কৃষি খাতে এ প্রণোদনা ঘোষণা করে। এ ঋণ বিতরণের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের কিছু বেশি ঋণ বিতরণ হয়। এরপর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ঋণের মাত্র ৫৫ শতাংশ বিতরণ সম্পন্ন হয়। এ কারণে তৃতীয়বারের মতো আরও তিন মাস সময় বৃদ্ধি করে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি খাতে প্রণোদনা ঘোষণার পর ঋণ বিতরণের জন্য ৪৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক চুক্তি স্বাক্ষর করে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রণোদনার কৃষিঋণ বিতরণে এগিয়ে থাকলেও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পিছিয়ে থাকে। ঋণ বিতরণের বিষয়টি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলেও বিতরণের ক্ষেত্রে অনেক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক নির্দেশনা মানছে না। এ ঋণ বিতরণে পরিমাণ ও এলাকা বেঁধে দিলেও অনেক ব্যাংক তা মানছে না। পরিমাণ ও বিতরণের ধরনের বাইরে গিয়ে ঋণ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অপারেটিং চার্জ দাবি করা হয়েছে। নিয়ম-বহির্ভূত হওয়ায় এ ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এ ধরনের নিয়ম-বহির্ভূত ঋণের পরিমাণ বিতরণ করা ঋণের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। টাকার অংকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
Posted ৬:১৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy