আদম মালেক | মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 305 বার পঠিত
করোনা ভাইরাসের কারণে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। কিছু প্যাকেজ বাস্তবায়নে ধীরগতি, কোনোটায় দ্রুত। কোনো প্যাকেজ বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে, কোনোটা শুরুই হয়নি। কোনো প্যাকেজ গ্রাহকরা পাওয়া মাত্র লুফে নিচ্ছে, কোনো প্যাকেজের খবর গ্রাহকের কানেই পৌঁছেনি। কোনো প্যাকেজ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ রয়েছে।
করোনা সংকট মোকাবেলায় ১ লাখ ১১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকার ২০টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। ব্যাংকিং খাতের ব্যাপক আগ্রহের কারণে অল্পসময়ের মধ্যে বড় শিল্পমালিকদের জন্য নির্ধারিত ১০ হাজার কোটি টাকা ফুরিয়ে যায়। এজন্য এ তহবিলের আকার ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। অথচ দু’বার সময় বাড়িয়েও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার এক-তৃতীয়াংশও বিতরণ হয়নি। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এ ঋণের খবরও জানেন না। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে প্রণোদনার অর্থ বিতরণে ধীরগতি। কর্মসৃজন কার্যক্রমের বিতরণ শূন্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া যায়।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বড়রা সবসময়ই ঋণে আগ্রহী। এর সুফল পাচ্ছে একটি খাত। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের নিয়ে কারো নজর নেই। এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ ক্ষুদ্র ও মাঝারিরাই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রণোদনার আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য নিয়ম-কানুন শিথিল করা হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে নানা ছাড় দেয়া হয়েছে। কোনো ব্যাংক যেন তারল্য সংকটে না পড়ে, সে জন্য আমানতের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমার হার (সিআরআর) দেড় শতাংশ কমানো হয়। অবশ্য প্রণোদনার টাকা আদায় হোক বা না হোক, ব্যাংকগুলোকে তা যথাসময়ে ফেরত দিতে হবে। কোনো ব্যাংক ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত হিসাব থেকে কেটে সমন্বয় করা হবে। এসব কারণে অনেক ব্যাংক এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণে হয়তো অনীহা দেখাচ্ছে।
রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের এপ্রিল-জুন সময়ের বেতন-মজুরি দিতে প্রথম গঠিত এ প্যাকেজ ছিল ৫ হাজার কোটি টাকার। ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে কারখানার মালিকরা ঋণ নিয়ে বেতন-মজুরি দিয়েছেন। রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) সুবিধা ৩৫০ কোটি ডলার থেকে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়। বিতরণ করা হয়েছে ৭৬ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি বাবদ ২৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ প্যাকেজের আওতায় করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৩ মাসে ৭৪ হাজার ৮০০ টন চাল দেয়ার কাজ শেষ করেছে খাদ্য অধিদফতর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ‘প্রাক-জাহাজিকরণ ঋণ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচির জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা। ১৩ এপ্রিল থেকে এ প্যাকেজের বাস্তবায়ন শুরু। কিন্তু এ তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়ন নিতে আবেদন জমা পড়েছে মাত্র একটি। অথচ ৩০টি ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এদিকে ৫ হাজার কোটি টাকার কৃষি পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন চিত্রও ভালো নয়। ৭ আগস্ট পর্যন্ত ৪৯৭ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে।
নিম্নআয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা তহবিল। এ পর্যন্ত ২৬৬ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে স্থগিত ঋণের আংশিক সুদ মওকুফ বাবদ সরকারের ভর্তুকি হিসেবে একটি প্যাকেজ রয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার। এ পর্যন্ত ৪৭টি আবেদন জমা পড়লেও কেউ টাকা পায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি প্যাকেজ রয়েছে। একটি হচ্ছে, কোভিড-১৯ এর কারণে সরাসরি কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীদের সংক্রমিত বা মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ। এ জন্য প্রণোদনা বাবদ ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সরাসরি কোভিড-১৯-এর সময়ে কাজের সঙ্গে জড়িত থেকে যেসব সরকারি কর্মচারী সংক্রমিত বা মৃত্যুবরণ করেন, গ্রেড ভেদে তারা আক্রান্তের ক্ষেত্রে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ এবং মারা যাওয়ার ক্ষেত্রে ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পাবেন। এ পর্যন্ত এক কোটি টাকা পেয়েছে দুটি পরিবার। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে যারা সরাসরি চিকিৎসায় নিয়োজিত, তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ রয়েছে। তাদের দুই মাসের মূল বেতনের সমান সম্মানী দেয়ার কথা থাকলেও কেউ কোনো টাকা পাননি।
কর্মসৃজন কার্যক্রমও হয়নি। এ প্যাকেজ ২ হাজার কোটি টাকার। কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা, কুটিরশিল্প, বিদেশফেরত শ্রমিকদের চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ দেয়া হবে। ৫০০ কোটি টাকা করে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনকে (পিকেএসএফ) টাকা দেবে সরকার। তারা স্বল্পসুদে গ্রাহকদের ঋণ দেবে। পিকেএসএফ ও অন্য তিন ব্যাংক ২৫০ কোটি করে ১ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, এ থেকে বিতরণ কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।
এদিকে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দিতে ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকার প্যাকেজ রয়েছে। ১৫ লাখ পরিবার এখনো টাকা পায়নি। বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের জন্য ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ রয়েছে, যা থেকে ৯৪৪ কোটি টাকার চাল, ৯৫ কোটি টাকার নগদ এবং ২৭ কোটি টাকার শিশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
Posted ১২:৫৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed