শুক্রবার ১৭ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রশ্নের মুখে ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা

  |   সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   836 বার পঠিত

প্রশ্নের মুখে ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা

একসময়ে উদ্বৃত্তে থাকা ব্যাংক খাতের তারল্য এখন সংকটের মধ্যে রয়েছে। ৯টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মূলধন ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংকাররা। ফলে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণের ন্যূনতম হার কমে ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী, এই হার ১১ দশমিক ৮১৭ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যাসেল-৩-এর শর্ত অনুযায়ী এই হার ১১ দশমিক ৮১৭ শতাংশ হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য মতে, দেশের ব্যাংক খাতে ২০১৭ সালের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের এই হার ছিল ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০১৮ সালের মার্চ শেষে তা দাঁড়ায় ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। জুন শেষে তা আরও কমে দাঁড়ায় ১০ শতাংশে।

এই হার রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের পাঁচ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে দুই শতাংশে নেমেছে। পুরো ব্যাংক খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার কমেছে মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কারণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই হার আরও কমে আসতে পারে, যদি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ কমানোর পাশাপাশি আমানত সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে না পারে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই হার সংরক্ষণ করতে না পারলে বিদেশে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের মর্যাদা কমবে। তারল্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বিষয়টি উদ্বেগের সৃষ্টি করবে। খেলাপি ঋণের উচ্চহারই মূলত এই সমস্যার জন্য দায়ী। দ্রুতই এ সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন।’

জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানির আইন অনুযায়ী, দুই বছরের বেশি সময় ধরে মূলধন সংকটে থাকা ব্যাংককে একীভূত বা অবসায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু সরকারি ব্যাংকের মালিকানা সরকারের হাতে থাকায় আইনের প্রয়োগ নিয়ে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি তিন হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি তিন হাজার ৪৩৪ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ২৮৬ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৬৬২ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের আট হাজার ২০৫ কোটি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৬৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া বেসরকারি খাতের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এক হাজার ৫৪০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩০৮ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি টাকা।

ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মূলধন রাখতে পারছে দেশে কার্যরত বিদেশি ব্যাংকগুলো। দেশের ব্যাংক খাতের উন্নয়নে চার বছরের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আর্থিক দুরবস্থার কারণে প্রতি মুহূর্তে হোঁচট খাচ্ছে এই উদ্যোগ।

ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকের ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবিলায় ন্যূনতম মাত্রার চেয়ে বেশি হারে মূলধন সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ ঝুঁকি মোকাবিলায় যে কোনো ব্যাংকের উচ্চ মূলধন থাকা জরুরি। পূর্বে শুধু ঋণ ঝুঁকির বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে বলা হতো। বর্তমানে ঋণ, বাজার ও পরিচালন ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। এজন্য তারল্য ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষ হওয়া প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলোকে প্রতি তিন মাস অন্তর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মূলধন সংরক্ষণের তথ্য জমা দেয়। ডিসেম্বর মাসের তথ্য পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক ওইসব ব্যাংকের ব্যবসা বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এছাড়া জরিমানাও করতে পারে। মূলধন সংকটে ভুগতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে প্রতি বছরই সরকার মূলধন জোগান দিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সরকার ১৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকার মূলধন জোগান দিয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৫৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।