বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের মহীসোপানের দাবির বিরুদ্ধে ভারতের আপত্তি

  |   সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১   |   প্রিন্ট   |   326 বার পঠিত

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের মহীসোপানের দাবির বিরুদ্ধে ভারতের আপত্তি

আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সীমা নিয়ে যে বিরোধ ছিল তা মিমাংসা হয়েছে অনেক আগেই। সমুদ্র সীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালতের রায় নিজেদের পক্ষে পাওয়াটা বর্তমান সরকারের জন্য এক বিরাট সাফল্য। আন্তর্জাতিক আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা চিহ্নিত হয়।

এই রায়ের মাধ্যেমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ বিশাল এলাকায় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়। প্রাপ্ত সমুদ্র সীমার আকার প্রায় বাংলাদেশের আয়তনের কাছাকাছি। বিশাল সমুদ্র সীমায় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্র সকল প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। উল্লেখ্য, সমুুদ্র সীমা নিধারিত না থাকলে তা নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি হতে পারে।

সেই অবস্থায় কোনো বিদেশি কোম্পানি সমুদ্র সম্পদ আহরণের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চুক্তিভুক্ত হতে মোটেও আগ্রহী হয় না। বাংলাদেশের যেহেতু সম্পদ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব রয়েছে তাই সমুদ্র সম্পদ আহরণের জন্য অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে বিদেশে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

সমুদ্র সীমা চিহ্নিত হবার ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক জটিলতা দূর হয়েছে। কিন্তু তারপরও সমস্যা থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর সংশ্লিষ্ট দু’টি দেশ ভারত ও মিয়ানমার বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়ের বিষয়টি খুব একটা ভালো চোখে দেখছে না। তাই তারা নানাভাবে বাংলাদেশের অর্জন বাধাগ্রস্ত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ ২০১১ সালে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দফতর সিএলসিএস’এ মহীসোপান নির্ধারণের ব্যাপার আবেদন জানায়। গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে একটি সংশোধনী জমা দেয়। অনেকটা হঠাৎ করেই ভারত গত ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশের দাবির প্রতি আপত্তি উত্থাপন করে।

ভারত তাদের আবেদন বলেছে, বাংলাদেশ সমুদ্র পৃষ্ঠের যে বেস লাইনের ভিত্তিতে মহীসোপান নির্ধারণ করেছে তা ভারতের মহীসোপানের একটি অংশ। তাই তারা বাংলাদেশের দাবিকে আমলে না নেবার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। ভারতের এই আবেদনের কারণে বাংলাদেশের মহীসোপান নির্ধারণের জন্য গৃহীত কার্যক্রম বিলম্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এর আগে মিয়ানমারও বাংলাদেশের দাবিকৃত মহীসোপান নিয়ে জাতিসংঘের তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। তবে মিয়ানমার ভারতের মতো আপত্তি জানায় নি। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনে মহীসোপানের যে অংশটুকু প্রাপ্য তা থেকে কিছু অংশ তাদের বলে ভারত এবং মিয়ানমার উভয় দেশই দাবি করেছে।

এই দাবির প্রেক্ষিতে ভারত জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি উত্থাপন করেছে। কিন্তু মিয়ানমার এ ব্যাপারে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানায় নি। যদিও তারা তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। আগামীতে মিয়ানমারও যদি ভারতের মতোই জাতিসংঘে আপত্তি উত্থাপন করে আবেদন জানায় তাহলে বিস্মিত হবার কিছু থাকবে না। ভারত তাদের আবেদনে বাংলাদেশ যে বেসলাইনের উপর ভিত্তি করে মহীসোপান নির্ধারণ করেছে তাতে ভারতের মহীসোপানের কিছু অংশ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এছাড়া তারা আরো বলেছে, বঙ্গোপসাগরে যে গ্রে এরিয়া রয়েছে সে সম্পর্কে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দফতরকে কোনো তথ্য দেয় নি। উল্লেখ্য, গ্রে এরিয়ে হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের একটি ছোট এরিয়া যার আয়তন প্রায় ৯০০ বর্গ কিলোমিটার। এই গ্রে এরিয়ার পানিতে যে প্রাণিজ সম্পদ আছে যেমন-মাছ, ঝিনুক ইত্যাদি তার মালিক ভারত।

আর এই গ্রে এরিয়ার মাটির নিচে যে খনিজ সম্পদ রয়েছে তার মালিক বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব এডমিরাল মো. খোরশেদ আলম বলেন, ভারত যে দাবি উত্থাপন করে জাতিসংঘে আপত্তি জানিয়েছে সে সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যথাসময়ে উত্তর দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন মেনেই তার বেস লাইন নির্ধারণ করেছে। গ্রে এরিয়ো সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রে এরিয়ার অংশটুকু ওয়াটার কলামের সঙ্গে যুক্ত। এর সঙ্গে মহীসোপানের কোনো সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার সমুদ্র সীমার উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে এটা অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের এখানে থেমে থাকলে চলবে না। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। বিশিষ্ট সমুদ্র বিজ্ঞানি ড. কাউসার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় প্রাণিজ সম্পদ ছাড়াও প্রচুর গ্যাস এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদ পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আমাদের প্রথমেই একটি ব্যাপক জরিপ চালাতে হবে সমুদ্রে কী পরিমাণ সম্পদ আছে তা জানার জন্য। এজন্য বিদেশ থেকে একটি জরিপ জাহাজ সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণ সেই জাহাজটি এখনো সংগ্রহ করা হয় নি। সমুদ্রে কী পরিমাণ সম্পদ আছে তা জানা না গেলে কোনো দিনই বিদেশি উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগ করতে আসবে না। তিনি সমুদ্র সম্পদ আহরণের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানান।

বাংলাদেশ সেই সব সৌভাগ্যবান দেশের একটি যাদের রয়েছে বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকা। খাদ্য বিজ্ঞানিরা মনে করেন, আগামীতে সমুদ্রই হবে আমাদের খাদ্যের অন্যতম যোগানদাতা। কাজেই সমুদ্র সম্পদ আহরণের উপর বিশেষ জোর দিতে হবে। আমাদের যে গ্যাসের রিজার্ভ আছে তা দিয়ে আগামী ১০/১১ বছররের চাহিদা মেটানো যেতে পারে। তারপরও আমাদের দেশে গ্যাসের ক্রাইসিস দেখা দেবে। তাই সেই সংকট থেকে পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে এখনই আমাদের সমুদ্র সীমায় গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করা প্রয়োজন। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর যৌথ উদ্যোগে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।

এটা করা হলে স্থানীয় জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, যা আগামীতে এককভাবে সমুদ্র সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সমুদ্র সীমা চিহ্নিতকরণ বা মহীসোপান নির্ধারণই শেষ কথা নয়। দেখার বিষয় হচ্ছে সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারে আমরা কতটা পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে পারছি।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৩২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।