শনিবার ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেপরোয়া হুমায়ুন কবির চক্র

বায়রা লাইফে প্রশাসকের রাজত্ব

এস জেড ইসলাম   |   রবিবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২১   |   প্রিন্ট   |   912 বার পঠিত

বায়রা লাইফে প্রশাসকের রাজত্ব

কোম্পানি পরিচালনায় নিয়মনীতি ভেঙে নিজের ইচ্ছেমাফিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পছন্দের লোকদের সাত খুন মাফ হলেও বিরাগভাজনদের ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসলেই শাস্তি। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রশাসক হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কিছু কর্মকর্তার বরাতে এমনটা জানা গেছে।
জানা যায়, বায়রা লাইফের সাবেক পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পায়

আইডিআরএ। এরপর গ্রাহকদের আমানত ও স্বার্থরক্ষায় গত বছরের ২৮ জুন প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েই যেন মুকুটহীন রাজা বনে যান বাংলাদেশ সরকারের সাবেক যুগ্মসচিব হুমায়ুন কবির। কর্মকর্তাদের রদবদল, দাবি পরিশোধে বিলম্ব, অপছন্দনীয় হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সুযোগ-সুবিধা বাতিল করে শোকজ করা এবং নিয়ম-বহির্ভূতভাবে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদবি ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া দায়িত্ব পাওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, ‘২০২০ সালের জুন মাসে নিয়োগ হলেও ওই বছরের জানুয়ারির একটি অফিসিয়াল ডকুমেন্টে তার স্বাক্ষর রয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় জুন মাসের আগে থেকেই তিনি ওই কোম্পানিতে দায়িত্ব পালন করছেন। সেক্ষেত্রে আইন ব্যত্যয়ের দায়ভার কার ওপর বর্তাবে, তা আপনারাই জানার চেষ্টা করুন।’ এর বাইরে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে অফিসিয়াল কাগজপত্রে নিজেকে প্রশাসকের পাশাপাশি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাও দাবি করে আসছেন হুমায়ুন কবির। গত বছরের ১০ জানুয়ারি কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (উন্নয়ন) জাহেদুল আলম ভূঁইয়াকে শোকজ করার নোটিশে শুধু প্রশাসক হিসেবে স্বাক্ষর করেন হুমায়ুন কবির। কিন্তু গত ৯ নভেম্বরের এক অফিস আদেশে তিনি প্রশাসকের পাশাপাশি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা দাবি করে স্বাক্ষর করেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সাবেক এ কর্মকর্তার এমন আইন ভঙ্গে খাত বিশ্লেষকদের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন।

এদিকে গ্রাহকের দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রশাসকের অন্যতম কাজ হলেও তা পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে। দায়িত্ব লাভের পরপরই গ্রাহকদের দ্রুত সময়ে দাবি নিষ্পত্তির পাশাপাশি দায় ও সম্পদের তালিকা তিন মাসের মধ্যে তৈরির বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সে তালিকা তৈরি হয়নি বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা দিনের পর দিন আইডিআরএসহ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও দাবির টাকা পাচ্ছেন না। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রাহকদের দাবি উত্থাপন বেড়ে চললেও তা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ফলে তাদের মাঝে এক ধরনের সংশয় তৈরি হচ্ছে, যা সার্বিক বীমাখাতকে নেতিবাচক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।

যে কারণে সময়মতো দাবি পরিশোধসহ সম্পদ ও দায়ের তালিকা করতে পারেননি। অথচ কর্মকর্তাদের বদলি-স্থানান্তরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন। গত ৯ নভেম্বরও অফিস আদেশের মাধ্যমে ৪ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। এর মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে সিন্ডিকেট তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে। এ চক্রের মুখ্য দায়িত্বে কোম্পানি সচিব ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা নূরুল আফছার এবং উন্নয়ন ও প্রশাসন বিভাগের জেভিপি বোরহান উদ্দিনের নাম শোনা গেছে। উন্নয়ন কর্মকর্তাদের পলিসির বিপরীতে কমিশনের টাকা পেতে এবং বদলি-স্থানান্তর ঠেকাতে বোরহান উদ্দিনের সাথে অবৈধ লেনদেন করতে হয় বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কোম্পানির এক কর্মকর্তা আইডিআরএর কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এরপরও বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসক হুমায়ুন কবির। তবে বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও পদত্যাগ করতে চাওয়ায় অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল আলম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এ প্রশাসক। এক্ষেত্রে জাহেদুল আলমের বিরুদ্ধে একই মোবাইল নম্বর একাধিক পলিসিতে ব্যবহার করা, অর্থাৎ ভুয়া পলিসি দেখিয়ে কমিশনের টাকা ভোগ করার এবং ফেনী সার্ভিসিং সেলে পি.আর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে। মূলত পূর্বেকার সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে ওই কর্মকর্তাকে যখন কর্মক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল, তখন চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে উল্লিখিত অভিযোগ এনে শোকজ করেন প্রশাসক হুমায়ুন কবির।

এ বিষয়ে জাহেদুল আলম ভূঁইয়ার সাথে কথা বললে জানান, শোকজের বিষয়টি আমি বলতে পারবো না। তবে যে অভিযোগগুলো জানতে পারলাম তার সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই। পলিসির বিপরীতে কমিশন মাঠকর্মী বা এজেন্টরা পায়। যদি মোবাইল নম্বর একাধিকবার ব্যবহার করে অধিক কমিশন নেয় সেটা সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মী করেছে। এখানে আমার কি দায় থাকতে পারে। তাছাড়া এটা অবলিখন বিভাগের দেখার কথা, আমার নয়। আবার পি.আরের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি, তা কিভাবে সম্ভব? পি.আর রশিদের কোথাও যদি আমার ভূমিকা না থাকে, তবে কিভাবে আমি টাকা আত্মসাৎ করলাম বুঝতে পারছি না।

আমি কোম্পানিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছি। কিন্তু বর্তমান প্রশাসক এসে আমাকে কমিশনের ভিত্তিকে কাজ করতে বলেন। পাশাপাশি আমার গাড়ি ও ড্রাইভার সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর যখন মার্কেটিং বিভাগে কাজ করার কথা বলি। কিন্তু সেখানেও আমাকে অন্য কোনো সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ না দিয়ে নতুন করে সংগঠন তৈরি করতে বলা হয়। তাই আমি এখন নিজ এলাকায় আছি। তবে শোকজ নোটিশের বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে আইডিআরএর পরিচালক (লাইফ) ও উপ-সচিব শাহ আলমের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, প্রশাসক হয়ে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা লেখা ও স্বাক্ষর করা সঠিক নয়। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। তবে দায়িত্ব লাভের আগেই প্রশাসক হুমায়ুন কবির কিভাবে অফিসিয়াল ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করেন এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

তবে এ নিয়ে প্রশাসক হুমায়ুন কবির, কোম্পানি সচিব ও সিএফও নূরুল আফছার এবং উন্নয়ন ও প্রশাসন বিভাগের জেভিপি বোরহান উদ্দিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো মতামত পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ওয়েবসাইটে উল্লিখিত ফোন নম্বরে কল দিলেও তা রিসিভ করেননি তারা।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৪৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।