আদম মালেক | রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১ | প্রিন্ট | 479 বার পঠিত
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে জোয়ার দীর্ঘস্থায়ী নয়, যে কোনো সময় এতে ভাটা পড়তে পারে। আবার এ রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে মরিয়া বেসরকারি উদ্যোক্তারা। অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান থাকলেও ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত অনেক উদ্যোক্তার আমলনামা ভালো না। তাই রিজার্ভ থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ দান ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্লেষকদের দাবি, বাংলাদেশে রিজার্ভের জোয়ার অস্বাভাবিক। যে কোনো সময় ধস নামতে পারে। তবে এ রিজার্ভ দু:সময়ের বন্ধু। সরকার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিলে নিরাপত্তা নিয়ে তেমন প্রশ্ন আসবে না। কিন্তু বেসরকারি খাতে এ রিজার্ভ থেকে অর্থায়ন ঝুঁকিপূণ। কারণ ঋণ পরিশোধে সদাচারণ করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম। ঋণ নিয়ে ঋণ পুনর্গঠন, পুনঃতফসিল করেনি, এমন প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। এদের মধ্যে আছে অনেক ঋণ খেলাপি। কেউ কেউ আছে ঋণের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন অনেক অর্থনীতিবিদ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসে বিধ্বস্ত। প্রবাসীরা চাকরি হারিয়ে যে কোনো সময় দেশে ফিরে আসতে পারেন সে শঙ্কায় তাদের সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দেন।
তাছাড়া প্রণোদনার ২ শতাংশ সুবিধার আশায়ও অনেকে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান। এ কারণেই রেমিট্যান্সে জোয়ার, এ জোয়ার অস্বাভাবিক। তবে যে কোনো সময় ধস নামতে পারে। এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান থাকলেও অনেক উদ্যোক্তার আমলনামা ভালো নয়। তাদের মধ্যে আছে অনেক ঋণ খেলাপি। এদের কারণে ফারমার্স ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংকে অর্থ লোপাট হয়েছে। তাই রিজার্ভের ঋণ বেসরকারি খাতে হবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
জানা গেছে, রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। তারা ধরনা দিচ্ছে ব্যাংকের এমডি চেয়ারম্যানসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও অনেক কর্তা ব্যক্তির কাছে। কিন্তু খালি হাতে ফিরে এসেছেন। এবার তারা রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে দল বেঁধে ধরনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চান ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার বা আইপিপি খাতের বিদ্যুৎ উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে পুরোনো কেন্দ্রের জন্য যে বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে, তাও শোধ করতে চান রিজার্ভের ঋণে। গত সোমবার এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ)। এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়েও একই চিঠি দেয় সংগঠনটি।
এর আগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে রিজার্ভের ঋণের জন্য অনেক তদবির করেছে ওরিয়ন গ্রুপ। ঘুরেছে ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে। এক ব্যাংক থেকে ঋণ না পেয়ে গেছে আরেক ব্যাংকের কাছে। কিন্তু রিজার্ভের ঋণ মেলেনি।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৯০৬ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ চায় ওরিয়ন গ্রুপ। বাংলাদেশী মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার বা ৯ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিনিয়োগের জন্য রিজার্ভ থেকে ৮০ শতাংশ ঋণ আবেদন ওরিয়নের। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
গেল ২৬ জুলাই রুপালী ব্যাংকে আবেদন করে কোম্পানিটি। পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে এ ঋণ পাওয়ার আকাঙ্খা ওরিয়নের। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত রুপালী ব্যাংকের পর্যবেক্ষক এমডি সিরাজুল ইসলাম গত ১৩ আগস্ট রুপালী ব্যাংকের বোর্ড সভায় এ ঋণ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। কিন্তু তার বিরোধিতার পরও বোর্ডের কয়েকজন সদস্য ঋণ প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেন। এজন্য ১৯ আগস্ট প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রস্তাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩১ আগস্ট রুপালী ব্যাংককে ঐ প্রস্তাবের ওপর আরও বিস্তারিত বিবরণ চেয়ে রুপালী ব্যাংককে চিঠি লেখে। ১ মাস পর ৩০ সেপ্টেম্বর রুপালী ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ওরিয়ন গ্রুপকে অর্থায়নের দায়িত্বে অপারগতা জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়।
রুপালী ব্যাংকের প্রত্যাখ্যানের পর হাল ছাড়েনি ওরিয়ন গ্রুপ। কোম্পানিটি এবার ঋণের দায়িত্ব নিতে অগ্রণী ব্যাংকে যায়। ৬ অক্টোবর ওরিয়ন গ্রুপ অগ্রণী ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম , রিজার্ভ একটি দেশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি করে। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভারতের পরই বাংলাদেশের রিজার্ভ সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ। সংকট ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় রিজার্ভ রাখা হয়। সরকার চাইলে সরকারের কোনো কাজে এখান থেকে যৌক্তিক পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারে। তবে এখনই কাউকে ঋণ দেওয়ার চিন্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই।
Posted ১২:২৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy