বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 731 বার পঠিত
অতিমূল্যায়িত শেয়ার নয়, এবার মূল্যায়িত বা ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেও মাশুল দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ২০১০ সালে পুঁজিবাজার পতনের প্রধান কারণ ছিল অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ। তখন বাজারে বেশিরভাগ শেয়ার অতিমূল্যায়িত ছিল। ফলে সেসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিপদ ডেকে এনেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এখন তার উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। এখন বাজারে ৯৫ শতাংশের বেশি শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য অর্থাৎ মূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এই শেয়ারে বিনিয়োগ করেও প্রতিনিয়ত লোকসানি হচ্ছেন তারা। ফলে ক্রমেই বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা ভারি হচ্ছে।
২০১০ সালে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় পিই রেশিও বা শেয়ারপ্রতি আয় ২৫ থেকে ২৯-এর মধ্যে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক ১৪তে পৌঁছায়। অর্থাৎ গড় পিই রেশিও বিবেচনা করতে গেলে এই সময়ে সব শেয়ারই অতিমূল্যায়িত ছিল।
সেই সময় অনেক শেয়ারের পিই ৪০ অতিক্রম করে। এক বছরের ব্যবধানে সিরামিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পিই অনুপাত ৪৫ দশমিক ৫০ থেকে বেড়ে ৯৬ দশমিক ৪৯-এ দাঁড়ায়। ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১০-এর জুন মাসের মধ্যে পাট খাতের পিই অনুপাত ১৫ দশমিক ৮৭ থেকে বেড়ে ৩৯ দশমিক ৩৩-এ দাঁড়ায়। একই সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পিই ছিল ৫২ দশমিক ৪৪-এ। এছাড়া ৩০-এর ওপরে পিই ছিল আরও কয়েকটি খাতের।
নিয়ম অনুয়ায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির মৌলভিত্তি দেখে বিনিয়োগ করা উচিত। বাজারে শেয়ারের মূল্য এবং কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয়ের অনুপাত বা পিই মৌলভিত্তির অন্যতম প্রধান দিক। কোনো কোম্পানির পিই অনুপাত যত কম, ওই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে ঝুঁকিও তত কম। অন্যদিকে বেশি পিই অনুপাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করা মানে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। সাধারণত ১৫ পর্যন্ত পিই থাকলে তা ঝুঁকিমুক্ত মনে হয়। ২০-এর ওপরে গেলে তা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে ২০০৯-১০-এ বিনিয়োগকারীরা গুজব ও হুজুগে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখে। যে কারণে দ্রুত বাড়তে থাকে সূচক। লেনদেন তিন হাজার কোটি ছাড়ায়। ডিএসইর সূচকও আট হাজার ৯১৮ পয়েন্টে চলে যায়। কিন্তু এই অবস্থা বেশিদিন অব্যাহত থাকেনি। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে হঠাৎ পতন নেমে আসে। যার মাশুল এখনও দিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। সেই সময় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তারা এখনও লোকসান কাটিয়ে ওঠতে পারেননি।
অন্যদিকে বর্তমানে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় পিই রেশিও রয়েছে ১৫। পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত ব্যাংকের পিই রেশিও অবস্থান করছে ৯-এ। এছাড়া অধিকাংশ খাতের পিই রেশিও রয়েছে ১৫-এর নিচে। এই বাজারে বিনিয়োগকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে অ্যাখায়িত করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু এই বাজারে বিনিয়োগ করেও ফল পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করেও প্রতিনিয়ত তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। সম্প্রতি বড় পতনে তারা আরও বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে কথা হলে লুৎফর রহমান নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ২০১০ সালে অতিমূলায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করে লোকসানের মুখে পড়েছিলাম। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই এখন মূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু ফল একই হচ্ছে। তখন অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করে লোকসান গুনেছি আর এখন মূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করে লোকসান গুনছি।
গত এক মাসের বাজারচিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন ঘটেছে ৪৪৯ পয়েন্ট। ১০ মার্চ সূচকের অবস্থান ছিল পাঁচ হাজার ৭১০ পয়েন্টে, যা নেমে এসেছে পাঁচ হাজার ২৬১ পয়েন্টে। এই সময়ের মধ্যে ৫০ পয়েন্টের বেশি সূচক কমেছে ছয় দিন। গত ১৮ মার্চ ডিএসইর প্রধান সূচক কমে ৫১ পয়েন্ট। পরে ২৪ মার্চ সূচকের পতন ঘটে ৫৮ পয়েন্ট। ৩১ মার্চ আবারও ৫৩ পয়েন্ট মাইনাস হয় এই সূচক। ৪ এপ্রিল সূচকের পতন হয় ৬১ পয়েন্ট। এর পরের দুই কার্যদিবসেও ৫০ পয়েন্টের বেশি সূচকের পতন হয়।
বাজারের এই পরিস্থিরির জন্য বাজার খেলোয়াড় এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়ী করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ বাজারসংশ্লিষ্টদের অনেকেই। তাদের মতে, আইসিবিসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে দূরে রয়েছে। অন্যদিকে বাজার খেলোয়াড়রা কিছু কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। যে কারণে পুঁজিবাজার তার আসল চিত্রে ফিরে আসতে পারছে না।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, বাজার একটি চক্রের হাতে বন্ধি রয়েছে। কিছু লোক বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা বাজার থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য এমন খেলা খেলছেন। কিছু কোম্পানির শেয়ার নিয়ে সবসময় কারসাজি চলছে। কিন্তু এতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বিএসইসি কর্তৃপক্ষ।
একই প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাজারের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। কেন এমন পতন হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এখনই বিষয়টি খতিয়ে দেখা।
Posted ৩:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed