রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজধানীর ৪৯ এলাকা ‘রেড জোন’ ঘোষণা হতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১৩ জুন ২০২০   |   প্রিন্ট   |   400 বার পঠিত

রাজধানীর ৪৯ এলাকা ‘রেড জোন’ ঘোষণা হতে পারে

করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় সারা দেশ তিনটি জোনের (লাল, হলুদ, সবুজ) আওতায় নিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। এক্ষেত্রে সাধারণ ছুটি পরবর্তী গত ১৪ দিনের মধ্যে ঢাকা শহরের কোনো এলাকায় যদি প্রতি লাখে ৬০ জনের অধিক করোনা রোগী শনাক্ত হয় তবে তা রেড জোন হিসেবে লকডাউন করা হবে।

‘বাংলাদেশ রিস্ক জোন বেজড কোভিড-১৯ কন্টিমিনেট ইমপ্লেমেন্টশন স্ট্রাটেজি/গাইড’ শীর্ষক এ নির্দেশনা ৯ জুন চূড়ান্ত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মহামারিটি চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে বিস্তীর্ণভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে। এ গাইড বা নির্দেশনা অনুসারে অবিলম্বে সারা দেশে কার্যকর হবে বলে নিশ্চিত করেছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, রাজধানীর ৪৯টি এলাকায় ৬০ জনের বেশি নিশ্চিত করোনা রোগী রয়েছেন। সেই হিসাবে এসব এলাকা শিগগির লকডাউন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এসব এলাকা হচ্ছে- আদাবর, আগারগাঁও, আজিমপুর, বাবুবাজার, বাড্ডা, বনশ্রী, বনানী, বংশাল, বাসাবো, বসুন্ধরা, চকবাজার, ডেমরা, ধানমন্ডি, ইস্কাটন, ফার্মগেট, গেন্ডারিয়া, গ্রিনরোড, গুলশান, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, কল্যাণপুর, কলাবাগান, কাকরাইল, কামরাঙ্গীরচর, খিলগাঁও, লালবাগ, লালমাটিয়া, মালিবাগ, মিরপুর, মিরপুর-১, মিরপুর-১২, মগবাজার, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, মুগদা, পল্টন, রাজারবাগ, রামপুরা, রমনা, শাজাহানপুর, শাহবাগ, শ্যামলী, শান্তিনগর, শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও, উত্তরা, ওয়ারী।

গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কোনো এলাকায় গত ১৪ দিনের মধ্যে প্রতি লাখে ৬০ জন বা তার বেশি লোক সংক্রমণের শিকার হন তবে ওই এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে। তবে অন্য জেলার ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১০ জন নিশ্চিত ভাবে শনাক্ত হলেই সেটি রেড জোন বলে বিবেচিত হবে।

ঢাকা সিটির ক্ষেত্রে বিগত ১৪ দিনে কোনো এলাকায় ৩ থেকে ৫৯ জন নিশ্চিত করোনা রোগী থাকলে সেটি হবে ইয়েলো জোন। তবে ঢাকার বাইরের জন্য প্রতি লাখে ৩ থেকে ৯ জন রোগী থাকলেই সেটি ইয়েলো জোন বলে বিবেচিত হবে। একইভাবে কোনো এলাকায় ১৪ দিনের মধ্যে নিশ্চিত রোগী যদি ৩ জনের কম অথবা কোনো রোগী না থাকলে সেটি হবে গ্রিন জোন।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, শহরের কোনো এলাকায় রেড জোন ঘোষণা হলে সেখান থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। সব কাজ (ফ্যাক্টরি, অফিস) ঘরে বসেই করতে হবে। তবে গ্রাম এলাকায় কৃষি কাজ করতে বাধা নেই। অসুস্থ হলেই শুধু হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে।

জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার ব্যবস্থা থাকবে তবে সাইকেলসহ কোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। এমনকি নৌ, রেল বা সড়ক যোগাযোগও বন্ধ থাকবে। শহরাঞ্চলে মুদি ও ওষুধের হোম ডেলিভারি দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। গ্রামে নির্দিষ্ট সময় ধরে দোকান খোলা থাকবে। গ্রামে কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও শহরে সেটি থাকবে না।

ইয়েলো জোনের ক্ষেত্রে ৫০ ভাগ লোকবল নিয়ে অফিস বা ফ্যাক্টরি চালানো যাবে। তবে জনাকীর্ণ ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হবে। জরুরি চলাচলের ক্ষেত্রে একজন যাত্রী নিয়ে রিকশা, ভ্যান বা সিএনজি, ট্যাক্সি চলবে। নিজে অথবা আবাসিক ড্রাইভার থাকলে ব্যক্তিগত গাড়ি চালানো যাবে।

বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও ঢাকা শহরে এ হার সবচেয়ে বেশি। উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে এমন জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী অন্যতম।

এ রোগটি জনস্বাস্থ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে এবং এতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভয়ংকর ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। রোগটি ঢাকা শহর ও আশপাশের অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম শহরে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে।

জানা গেছে, ৮ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। যে সভায় জোনিং ব্যবস্থাটি তাৎক্ষণিক পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব রাজাবাজার এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ারী। এছাড়া তিনটিতে জেলা গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদীতে এলাকাভিত্তিক জোনিং করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে ঢাকা উত্তর সিটির পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন ঘোষণা করা হয়।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ১৮৮টি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। গত ১১ মার্চ করোনা ভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৪৭১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে আরও ৪৬ জনের। সবমিলিয়ে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ৮১ হাজার ৫২৩ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মোট মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৯৫ জনের।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৩৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৩ জুন ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।