নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০ | প্রিন্ট | 399 বার পঠিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্ব সম্ভবত বিগত একশ’ বছরের মধ্যে সব থেকে বড় সংকটের মুখোমুখি, কাজেই আমাদের সম্মিলিতভাবেই এই সংকট মোকাবিলা করা প্রয়োজন। আমাদের প্রতিটি সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব এবং অংশীদারিত্বের জন্য একটি পদ্ধতির প্রয়োজন।’ করোনা ভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থবহ কৌশল উদ্ভাবনসহ পাঁচ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে সম্মিলিত বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কোভিট-১৯ বিষয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল আঞ্চলিক কনফারেন্সে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) ‘দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাভাইরাস এবং অর্থনীতিতে এ সংক্রান্ত প্রভাব মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সম্মেলনে ‘কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশের আঞ্চলিক স্থিতিস্থাপকতা বিনির্মাণ’ বিষয়ে ভাষণ দেন।
তিনি ভাষণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রায় করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন। ডব্লিউইএফ প্রেসিডেন্ট বোর্গে ব্রেন্ডে সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ দেন। শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমরা জানি না এই মহামারি কতদিন থাকবে। এটা ইতিমধ্যেই অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সমাজকে সঠিক পথে আনতে হবে, এই ক্ষত এবং ভয় থেকে জনগণকে বেরিয়ে আসায় সহযোগিতা করতে হবে এবং সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে।
এই বিশ্ব ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যুদ্ধরত- উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন করোনা ভাইরাস আমাদের অস্তিত্বের প্রতিই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বেও কোন একটি দেশকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয় এবং বিচ্ছিন্নকরণ নীতিও আর কাজে আসবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব একটি সংকটময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ সময় তিনি পাঁচটি বিষয়ে সবাইকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। বিষয়গুলো হচ্ছে-
প্রথমত: সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে দারিদ্র্য এবং বৈষম্য দ্রুত বাড়বে। গেলো এক দশকে আমরা আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে এনেছিলাম। তাদের অনেকে এখন আবার আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। সুতরাং, বিশ্বকে মানবকল্যাণ, বৈষম্য দূরীকরণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা এবং কোভিড-১৯ এর আগের অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নতুন করে ভাবতে হবে।
দ্বিতীয়ত: আমাদের প্রয়োজন জি-৭, জি-২০ এবং ওইসিডির মতো সংগঠনগুলো হতে দৃঢ় ও পরিকল্পিত বৈশ্বিক নেতৃত্ব। জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকেও এগিয়ে আসা উচিত। আমি অধ্যাপক সোয়াবকে (বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরোমের প্রতিষ্ঠাতা) প্রশংসা করছি। কারণ তিনি সংক্রামক রোগগুলোকে ২০২০ এর বৈশ্বিক ঝুঁকি সম্পর্কিত প্রতিবেদনে অন্যতম মুখ্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সুতরাং, ফোরাম ও জাতিসংঘের উচিত সরকার এবং বিশ্ব ব্যবসাকে এ বিষয়ে একত্রিত করা এবং নেতৃত্ব দেওয়া।
তৃতীয়ত: আমরা ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা, কাজ ও উৎপাদনে পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছি। কোভিড পরবর্তী সময়ে, নতুন নীতি, স্ট্যান্ডার্ড ও পদ্ধতি দেখবো। ইতোমধ্যে আমরা দেখছি সরবরাহ চেইনে থাকা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডকে যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে না। সুতরাং, আমাদের এমন কৌশল ও বাস্তবমুখী সহায়তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন বাংলাদেশের মতো দেশগুলো টিকে থাকতে পারে।
চতুর্থত: অভিবাসী কর্মীরা বেকারত্বসহ অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি পার করছেন। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। সুতরাং, বোঝা ও দায়িত্ব শেয়ার করার মতো আমাদের এমন একটি অর্থপূর্ণ বৈশ্বিক কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
পঞ্চম: এই মহামারির সময়ে আমরা কার্যকরভাবে বেশকিছু ডিজিটাল প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার করেছি। যেমন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংক্রমণ চিহ্নিত করা। ভবিষ্যতের প্রস্তুতির জন্য আমরা বিভিন্ন সেক্টরে এই রকম উদ্ভাবনীমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রেসিডেন্ট বর্জ ব্র্যান্ডের স্বাগত ভাষণের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় সম্মেলন। পরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে ব্রিফ করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডা. পুনম খেত্রপাল সিং।
Posted ৪:১১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan