শনিবার ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারের হুমকি আমলে নিচ্ছেন না চালকল মালিকরা

আদম মালেক   |   মঙ্গলবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   286 বার পঠিত

সরকারের হুমকি আমলে নিচ্ছেন না চালকল মালিকরা

চালের অস্বাভাবিক মূল্যে জনজীবনে নাভিশ্বাস। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ না করলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিতে বিচলিত নন চালকল মালিকরা। সরকারের হুমকিকে তারা আমলেই নিচ্ছে না। তাই সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্যে চাল বিক্রি করবে না বলেও সাফ জনিয়ে দিয়েছেন তারা।

নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং ধান-চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময়সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সরকারি গুদামে চাল না দিলে মিল-মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকারি গুদামে চাল না দিলে চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সরকার। প্রয়োজনে চাল আমদানি বাড়ানো হবে। মিলে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার পাঁচগুণ ধান-চাল মজুত কমিয়ে তিনগুণ করা হবে।

এদিকে সরকারের হুমকিকে পরোয়া করে না চাল ব্যবসায়ীর। সরকার নির্ধারিত ৩৭ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চালকল তারা। উল্টো পাট, বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের মতো রাইসমিল সেক্টরেও ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার দাবি তুলেছেন তারা। মিল-মালিকরা ধানের সঙ্গে চালের বাজারের দর সমন্বয় করার দাবিও জানিয়েছেন। তাই চাল দেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেননি মিল-মালিকরা।

মিল-মালিকরা বলছেন, গত বোরো মৌসুমে লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করা হয়েছে। করোনাকালে চালকল মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই এবার কোনোভাবেই ভর্তুকি বা লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করা সম্ভব নয়। সরকারের বেঁধে দেওয়া ৩৭ টাকা কেজি দরে এই মুহূর্তে চাল সরবরাহ করতে গেলে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে সাত টাকা লোকসান হবে। এ কারণে চলতি মৌসুমে সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহে চুক্তিতে যাচ্ছেন না মিল-মালিকরা।

সভায় খাদ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মিল-মালিকদের পক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী প্রস্তাব দেন দেশে সরকারিভাবে যে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এবার সেই লক্ষ্যমাত্রার ২০ শতাংশ চাল সরবরাহ করবেন তারা। তবে যদি ধানের দাম কমে, আবারো চাল দেওয়া হবে।
খাদ্যমন্ত্রী তার ওই প্রস্তাব শুনে বলেন, আমি বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দিচ্ছি এটা সম্ভব না।

এদিকে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে চাল বিক্রিতে কৃষকদেরও অনীহা। অ্যাপসের জটিল প্রক্রিয়া, বাজারমূল্যের চেয়ে সরকারের কম সংগ্রহমূল্য ও ঘুষের বিড়ম্বনা এর জন্য দায়ী। এসব কারণে চলতি আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকার চলতি আমন মৌসুমে ধানের সংগ্রহমূল্য কেজিতে ২৬ টাকা এবং চালের কেজিতে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারে ধানের কেজি ২৬ টাকা ৫০ পয়সা এবং চাল কেজি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাঠপর্যায়ের কৃষকরা জানান, বাজারের সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পারছি। এছাড়া সরকারের কাছে ধান-চাল বিক্রি করতে হলে সরকার নির্ধারিত অ্যাপসে আবেদন করতে হয়। এ জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাও অনেক কৃষকের পক্ষে সম্ভব নয়। একে তো কমদাম, অ্যাপসে জটিল প্রক্রিয়া, ফলে আমরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে যাব কেন?

সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে চাল বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে রংপুর প্রতিনিধি বলেন, রংপুরে এবারো সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ হিসেবে কৃষকরা জানান, একদিকে ধানের দাম বেশি, অন্যদিকে চাল সরবরাহ করতে খাদ্য বিভাগকে কেজিপ্রতি গড়ে ২-৩ টাকা ঘুষ দিতে হয়। গতকাল পর্যন্ত রংপুর সদরসহ জেলার ৮ উপজেলার কোথাও এক কেজি ধান কিংবা চাল কিনতে পারেনি। এ ব্যাপারে রংপুর জেলা খাদ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চালকল মালিকরা এখনও খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অটোমেটিক চালকল মালিক জানিয়েছেন, বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত ৩৭ টাকা দরে চাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ টাকা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। তবে বাজারে মোটা চালের কেজি এখন ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চালকল মালিকরা জানিয়েছেন একদিকে এখনও ধানের দাম বেশি, অন্যদিকে চাল সরবরাহ করতে খাদ্য বিভাগকে কেজিপ্রতি গড়ে ২/৩ টাকা ঘুষ দিতে হয়।
কোনো জায়গা থেকেই ভালো খবর আসছে না। নওগাঁয়ের অবস্থাও একই রকম।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান-চাল বিক্রি করলে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে গেলে শুকনা ধানকেও বলা হয় ভেজা। টাকার জন্য ব্যাংকে ঘুরতে হয় বেশ কয়েকদিন। সঙ্গে গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ লাগে। ফলে কৃষকরা আগ্রহবোধ করছেন না। নওগাঁ সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম জানান, সরকার ধান-চালের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন স্থানীয় বাজারে সেই ধান তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে নির্বাচিত কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11192 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।