বুধবার ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারেও

সুদ স্থগিত করায় সঙ্কটে পড়তে পারে ব্যাংক খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ০৮ মে ২০২০   |   প্রিন্ট   |   496 বার পঠিত

সুদ স্থগিত করায় সঙ্কটে পড়তে পারে ব্যাংক খাত

সুদ হারের নয়-ছয় চালুর পর এপ্রিল ও মে মাসের সুদ স্থগিত (ব্লক) করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে দফায় দফায় পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়াসহ নানা কারণে বেশ চাপে ছিল ব্যাংকগুলো। এপ্রিল ও মে মাসের যে সুদ স্থগিত রাখা হবে, তার বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকী না পেলে বছর শেষে ভালো-মন্দ সব ব্যাংককেই দিতে হবে লোকসান। কোনো কোনো ব্যাংক অস্ত্ত্বি সঙ্কটেও পড়তে পারে। এসবের প্রভাবে মূল্য হারাবে ব্যাংকের শেয়ার। দেশের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি মূলধনধারী ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম কমলে সূচকের উপর অনেক বেশি প্রভাব পড়বে। তাতে মন্দায় আক্রান্ত বাজারের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে যাবে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নয়-ছয় ও করোনার প্রভাবে ইতোমধ্যে তাদের পরিচালন মুনাফা এক তৃতীয়াংশে নেমেছে। এখন দুই মাসের সুদ আদায়ও যদি স্থগিত থাকে তাহলে বেশিরভাগ ব্যাংককে ব্যাংককে লোকসানে পড়তে হবে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন জানিয়েছেন, তাদের প্রাথমিক বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে এপ্রিল ও মে মাসের সুদ আদায় স্থগিত থাকায় ১৪ হাজার কোটি টাকা আয় কমবে। এতে ছোট ব্যাংকগুলোর ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা এবং বড় ব্যাংকের ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে।
এই সিদ্ধান্তে যে শুধু ব্যাংকগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়, সরকারের রাজস্ব আয়ও কমবে। এই পরিমাণ অর্থ লোকসান না হলে সরকার সেখান থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কর পেতে পারতো।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা মাসরুর আরেফিন বলেছেন, নয়-ছয় সুদ হারের প্রভাবে এমনিতেই চলতি বছর তাদের ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৩০ শতাংশের মতো কমে যেত। দুই মাসের সুদ ব্লক হয়ে যাওয়ায় শুধু এর কারণেই তাদের পরিচালন মুনাফা কমবে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।
তিনি জানান, এপ্রিল ও মে মাস আমানতকারীদের ২১৪ কোটি টাকা সুদ দিতে হবে তাদের ব্যাংককে। সুদ বাবদ কোনো আয় না হলেও ব্যয় ঠীকই করতে হবে। এর ফলে বছর শেষে ব্যাংকের কর পরবর্তী মুনাফা (নীট মুনাফা) ঋণাত্মক ধারায় চলে যেতে পারেন বলে তার আশংকা। অর্থাৎ ব্যাংকটি লোকসানের শিকার হতে পারে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, বড় ব্যাংকগুলো মাসে সুদ বাবদ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আয় করে। নয়=ছয় সুদ হার কার্যকর হওয়ার পর তা কমে ২০০ কোটি টাকায় নেমেছে। দুই মাসের সুদ ব্লক হওয়ার কারণে তাদেরকে কার্যত লোকসানে পড়তে হবে।
যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একক মাসের হিসাবে এপ্রিলে পরিচালন মুনাফা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। সুদ ব্লকের কারণে বাকী অর্ধ্কওে হাওয়া হয়ে যাবে। লোকসানে পড়ায় অনেক ব্যাংকের মূলধনে আঘাত আসবে। এটি কোনো ব্যাংকের জন্যেই সহজ ব্যাপার নয়। কারণ মূলধনে আঘাত লাগলে সেই ব্যাংকের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো বেশ কঠিন।
ব্যাংকগুলো লোকসানে পড়লে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন তারা। তাদের ভাষ্য, কোনো ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য বেশি খারাপ হয়ে গেলে, বিশেষ করে লোকসানে চলে গেলে বিদেশী ঋণমান যাচাইকারী সংস্থাগুলো ব্যাংকগুলোর মান (জধঃরহম) কমিয়ে দেবে। তাবে বিদেশী ব্যাংকগুলো তাদের খোলা ঋণপত্র (Letter of Credit-LC) গ্রহণ করবে না। আর করলেও তার জন্য মাশুল নেবে অনেক বেশি, যা শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ঘাড়েই চাপবে।
ব্যাংকাররা মনে করেন, ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য সংকটের উত্তরণে সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত। এপ্রিল ও মে মাসের ব্লক করা সুদের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকী দেওয়া দরকার।
তাদের মতে, ব্যাংক না বাঁচলে ব্যবসা তথা অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখাও বেশ কঠিন। তাই অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
উল্লেখ, গত ১ মার্চ থেকে ব্যাংকে সুদ হারের নয়-ছয় চালু হয়েছে। অর্থাৎ তখন থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরণের ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ নিতে পারছে ব্যাংকগুলো। আর আমানতের বিপরীতে দেওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ। নানা কারণে এখানে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় যথেষ্ট বেশি। তাই সুদ হারের ৩ শতাংশ ব্যবধানে (Spread ) মুনাফা করা একেবারেই কঠিন। কারণ দেশের অনেক ব্যাংকে পরিচালন ব্যয় ৩ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত।
এর মধ্যেই গত ৩ মে এক নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোকে সব ধরনের ঋণে এপ্রিল ও মে মাসের সুদ আদায় স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এটি এখন সমস্যা কবলিত ব্যাংকিং খাতের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত হয়ে উঠেছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ মে ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11190 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।