শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বীমা বাধ্যতামূলক করা উচিত

সেবার মাধ্যমেই গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে চায় চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স-সাক্ষাৎকারে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক, এফএলএমআই

  |   রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২   |   প্রিন্ট   |   374 বার পঠিত

সেবার মাধ্যমেই গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে চায় চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স-সাক্ষাৎকারে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক, এফএলএমআই

দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের যাত্রা শুরুa হয় ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই। দেশ-বিদেশে সু-প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চার্টার্ড লাইফ শুরু থেকেই গ্রাহকদের দ্রুততার সাথে সকল বীমা সুবিধা দিয়ে আসছে। ওয়ান স্টপ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, অনলাইনে দাবি জমা, দাবি নিষ্পত্তি এবং ডিজিটাল চ্যানেলে দাবি পরিশোধ, অ্যাপস চার্টার্ড লাইফকে অন্যান্য বীমা কোম্পানি থেকে আলাদা করেছে। সম্প্রতি ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতির সঙ্গে দেশের বীমা খাত ও কোম্পানির নানা কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছেন চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক, এফএলএমআই। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন নাসির আহমাদ রাসেল।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: উন্নত বিশ্বের তুলনায় জিডিপিতে বাংলাদেশের বীমাখাতের অবদান খুবই কম। এর কারণ কী?

এস এম জিয়াউল হক: দেশের বীমাখাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নীতি ও এর প্রয়োগ বা নীতি বাস্তবায়ন করার প্রক্রিয়া। উন্নত দেশগুলোতে বীমা বাধ্যতামূলক। উন্নত বিশ্বে বীমাকে অন্যান্য মৌলিক চাহিদার মত সমান গুরুত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে বীমা বাধ্যতামূলক না হওয়ার কারণে কেউ স্বেচ্ছায় বীমা করতে আগ্রহী হয় না। সুতরাং আমাদের একটি নীতি থাকতে হবে। বীমাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিদেশগামী কর্মীদের বীমা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে সরকার, অথচ দেশত্যাগের আগে প্রবাসগামীর বীমা আছে কী না তা কর্তৃপক্ষ যাচাই করছে না। একটি প্রতিষ্ঠানে ৫০ জনের অধিক কর্মী হলে বীমা বাধ্যতামূলক। সবাই কী আদৌ সেটি মানছে ? ৬৮টি ব্যাংক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বীমার সাথে সম্পৃক্ত না হয়ে তাদের কর্মীদের জন্য আলাদা ফান্ড তৈরি করেছে।

এজন্যই নীতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি একটি চ্যালেঞ্জ। দেশের পোশাকশিল্প খাতে ৪২ লাখের মতো কর্মী রয়েছে। সরকার তাদের জন্য বীমা বাধ্যতামূলক করলে এক নীতিতেই এই ৪২ লাখ ব্যক্তি বীমার আওতায় চলে আসে। ১৪ লাখ সরকারি কর্মী রয়েছে। তাদের জন্যও বীমা বাধ্যতামূলক করা উচিত। যদি সব শিল্প কারখানা কর্তৃপক্ষকে বলা হতো কর্মীদের বীমা না করলে লাইসেন্স বাতিল, তাহলে তারা বীমা করতে বাধ্য হতেন। ফলে জিডিপিতে বীমার প্রবৃদ্ধি নিয়ে ভাবতে হতো না। এজন্য নীতি ও এর সঠিক প্রয়োগ জরুরি।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বাংলাদেশের বীমা খাতের আশার দিকগুলো কী?

এস এম জিয়াউল হক : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে অগ্নি বীমা, সামুদ্রিক বীমা এবং ক্ষুদ্র ফাইন্যান্স-এর মাধ্যমে বীমার প্রসার ঘটছে। যার ফলে বীমা খাতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বীমা খাতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রবণতার অগ্রগতি সম্ভব সেটাই প্রমাণ করে। শিল্পোন্নয়নের ফলে অগ্নি ও সম্পত্তি বীমার পাশাপাশি শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ চাহিদা তৈরি হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। যার ফলে এসব বিষয়ে নিরাপত্তার জন্য সচেতনতা তৈরি করা গেলে বীমার চাহিদা এবং বীমা শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঘটবে।

 

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বীমা শিল্পে ইমেজ সংকট কাটিয়ে আস্থা ফিরিয়ে আনতে আপনার কোম্পানি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

এস এম জিয়াউল হক: বীমা খাতে ইমেজ ফেরাতে আমরা যথাসময়ে গ্রাহককে তার প্রাপ্য টাকা ফেরত দিচ্ছি। সব ধরনের সেবা ডিজিটালাইজড করেছি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করছি।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বাংলাদেশের বীমা খাতের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী এবং উত্তরণের উপায় কী?
এস এম জিয়াউল হক: বাংলাদেশের বীমা খাতের চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে বীমা কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র ক্যাপটিভ এজেন্সি এবং কমিশন সেলস মডেলের উপর নির্ভরশীল। যেখানে সারা বিশ্বে বীমা প্রচার ও বিপণন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল ব্যবহার করা হয়, সেখানে আমরা এজেন্ট এবং ব্রাঞ্চের উপর নির্ভরশীল। অথচ অনেক এজেন্ট ও ব্রাঞ্চ থাকলেও তাদের কার্যকারিতা সেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। গ্রাহকরা বীমা ক্রয়পদ্ধতি ও সুবিধা সম্পর্কে অসচেতন।  কোম্পানিগুলোও গ্রাহকদের কাছে সঠিকভাবে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করতে পারছে না। গ্রাহকদের রিনিউয়াল প্রিমিয়াম প্রদানে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতার অভাব। এজেন্টদের অবহেলা, অসততার কারণেও গ্রাহকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাছাড়া কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করাও দুরূহ।

এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ক্যাপটিভ মডেলের সাথে সাথে অন্যান্য ডিস্ট্রিবিউশন মডেল চালু করতে হবে। প্রোডাক্ট পরিকল্পনা ও পদ্ধতি সহজতর করতে হবে। ব্র্যান্ড ভ্যালু, বীমা সেবার পরিমাণ এবং গুণগতমানসহ সকল দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গ্রাহকদের একাধিক ধরনের বীমা নিরাপত্তা প্রদান করা। নতুন নতুন প্রোডাক্ট উদ্ভাবন যেমন- জীবন, স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনা, শস্য, গবাদিপশু, ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে নতুন পরিকল্পের মাধ্যমে বীমা সেবার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। উপযুক্ত পেমেন্ট ম্যাকানিজমের সাথে আপসেল করা। যেমন ডিজিটাল সেলস, লয়ালিটি সেলসের মাধ্যমে বীমা সেবার প্রসার।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: গ্রাহকদের কেন চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে পলিসির জন্য বেছে নেয়া উচিত?

এস এম জিয়াউল হক: চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে এজন্যই পলিসি করা উচিত কারণ, আমরা ডিজিটালাইজেশনকে একীভূত করে গ্রাহকের সেবাপ্রাপ্তিকে সহজ করেছি। গ্রাহক যেমন টাকা সহজে জমা দিতে পারছেন, তেমনি ফেরতও পাচ্ছেন সহজে। আমাদের ওয়ান স্টপ ডিজিটাল প্ল্যাটর্ফম, অ্যাপস, কাস্টমাইজ ওয়েবপেইজ সলিউশন রয়েছে। দাবি জমা, নিষ্পত্তি এমনকি পরিশোধও হচ্ছে ডিজিটাল চ্যানেলে। গ্রাহকের সঙ্গে পথ চলা সহজতর করতে আমরা প্রতিনিয়ত আইটি অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং নতুন আইটি সিস্টেম সংযোজন করছি। গ্রাহকরা যেকোনো মুহূর্তে চার্টার্ড প্রিয়জন অ্যাপসের মাধ্যমে প্রিমিয়ামের তথ্য জানতে পারছেন।

আইডিআরএ-তে আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের কোনো ক্লেইম, ম্যাচুউরিটি নিষ্পত্তি বাকী নেই। কোভিডকালেও আমরা সার্ভিস দিয়েছি। এসব সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের মাঝে আমরা আস্থার জায়গা তৈরি করেছি, যেটি এই ইন্ডাস্ট্রির একটি বড় দুর্বলতা। অনেকে অতিরিক্ত লাভের কথা বলে গ্রাহক আকৃষ্ট করেন। বীমা একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া। যেখানে মানুষজন তাদের অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তার জন্য বিনিয়োগ করে নিজেদের জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পত্তি এবং ব্যবসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। আমরা তো ব্যাংক নই। লাভ দেব কেন বলি! যারা উচ্চহারে লাভ ফেরত দেয়ার কথা বলছে তারা বীমা খাতকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এ খাতে কালিমা লেপন করছে। আমরা সেবা দিয়ে আস্থা অর্জন করতে চাই। আর্থিক নিরাপত্তা এবং দ্রুত সেবাই বীমার মূল লক্ষ্য।

 

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: আপনাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কতটা গ্রাহকবান্ধব?

এস এম জিয়াউল হক: চার্টার্ড প্রিয়জন অ্যাপস ব্যবহার করে গ্রাহকরা প্রিমিয়াম জমা, প্রিমিয়াম ক্যালকুলেশন, পলিসি ক্রয়, ক্লেইম, ক্লেইম স্ট্যাটাস, পলিসি স্ট্যেটমেন্টসহ সকল ধরনের ফরম ডাউনলোড করতে পারে।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: আপনাদের কী কী পলিসি রয়েছে?

এস এম জিয়াউল হক: আমাদের পলিসিগুলোর মধ্যে রয়েছে একক বীমা প্রকল্প, চার্টার্ড আল-বারাকাহ, গ্রুপ লাইফ অ্যান্ড হেলথ, অল্টারনেটিভ ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল, চার্টার্ড গ্রুপ এসএমই, চার্টার্ড নিরাপত্তা ও চার্টার্ড জনশক্তি বীমা।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: চার্টার্ড লাইফের ব্যবসায়িক অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাই।
এস এম জিয়াউল হক: বর্তমানে ৩২ টি জেলায় আমাদের কার্যক্রম চলছে। সেলস, ব্রাঞ্চ ও ইউনিট অফিস মিলিয়ে আমাদের ৫২ টি শাখা রয়েছে। সবমিলিয়ে ২ হাজার ২০০ কর্মী আামাদের সেলস টিমে কাজ করছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত আমাদের অ্যাকচ্যুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন ২১ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ২০২১ সাল পর্যন্ত লাইফ ফান্ড প্রায় ৩৭ কোটি। চার্টার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অ ক্রেডিট রেটিং অর্জন করেছে, যা আলফা ক্রেডিট রেটিং কোম্পানির মাধ্যমে সম্পন্ন করেছে। ২০২১ সালে আমাদের নেট প্রিমিয়াম ছিল ৫০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে কোম্পানির বিধিবদ্ধ বিনিয়োগ ৩৮ কোটি ৪৫ লাখ। গত বছরে আমাদের ইস্যুকৃত পলিসি ছিলো ১ হাজার ৪০২ টি, কর্পোরেট গ্রুপ বীমা পলিসি ৩১ টি। নবায়নকৃত পলিসি ছিলো ২৪ হাজার ২৯৮ টি। পুঁজিবাজারে আমরা আইপিও অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে এবং আমাদের অবস্থান জানিয়েছি, যা একটি চলমান প্রক্রিয়া।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতিকে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:৩৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।