শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’য় দুদক

বিবিএনিউজ.নেট   |   শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০   |   প্রিন্ট   |   252 বার পঠিত

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’য় দুদক

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে ইতোপূর্বে দুদকের দেয়া পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো এ খাতের দুর্নীতির লাগাম কিছুটা হলেও টেনে ধরা সম্ভব হতো।

তিনি বলেন, এরপরও কোভিড-১৯ এর চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। কমিশন অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে। অনুসন্ধানটি হতে হবে নির্মোহ ও পূর্ণাঙ্গ। মানুষকে সবকিছু জানাতে হবে। দুদক কোনোকিছুই গোপন করে না, করবেও না। বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ও দালিলিক প্রমাণাদির মাধ্যমে যেমন অপরাধীদের আমলে আনতে হবে তেমনি জনগণের কাছেও কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে। জনগণের এই প্রতিষ্ঠানটি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির দুর্নীতি, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি, সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে খাদ্যসামগ্রী আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে কমিশন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন আইনি কার্যক্রম (যেমন- মামলা দায়ের, অভিযোগপত্র দাখিল, গ্রেফতার, অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ, আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা হতে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ইত্যাদি) একটি বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দুদক চেয়ারম্যানকে অবহিত করার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

দুদকের গোয়েন্দা অনুবিভাগের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর স্বাক্ষরে প্রণীত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিশনের অনুমোদনক্রমে বিগত তিন মাসে ত্রাণ দুর্নীতি, সরকারি খাদ্যগুদামের খাদ্যসামগ্রী আত্মসাৎ, অবৈধভাবে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৩টি মামলা দায়ের করেছে কমিশন। প্রতিটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও নিয়োগ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার নিমিত্ত নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দ্রুততার সাথে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমান কমিশন প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক বেশকিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কমিশন ২০১৭ সালেই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছিল। ২০১৯ সালের প্রারম্ভে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির (১১টি) উৎস এবং তা নিয়ন্ত্রণে ২৫ দফা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ সংবলিত কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত একটি প্রতিবেদন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের নিকট হস্তান্তর করে ছিলেন।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এ সময় বলেন, অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশেই দুদককে আইনি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাস দুদকের দুজন কর্মকর্তার মূল্যবান জীবন কেড়ে নিয়েছে। এখনও ১৫ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অনেকের পরিবারের সদস্যরাও করোনায় আক্রান্ত। আমি তাদের সকলের রোগমুক্তি কামনা করি। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

তিনি আরও বলেন, ত্রাণ আত্মসাৎকারীদের আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম। তারপরও কতিপয় লোভী মানুষকে প্রতিরোধ করা যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এদেরকে আইনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ত্রাণ আত্মসাতের মামলাগুলোর আর্থিক সংশ্লেষ কম হলেও মামলাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মামলাগুলো নিখুঁতভাবে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই প্রকৃত অপরাধীরা যেন পার না পেয়ে যায়।

এছাড়া ঢাকা, সাতক্ষীরা, রংপুর , চট্টগ্রাম, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগেও কমিশন থেকে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়। এই ১১টি মামলায় সম্পৃক্ত ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। সংশ্লিষ্ট এসব অনুসন্ধান এখনও শেষ হয়নি। হয়তো আরও মামলা হবে, আরও প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হবে। মোদ্দা কথা, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির প্রতি করোনা প্রাদুর্ভাবের আগ থেকেই কমিশন সক্রিয় ছিল। সবমিলিয়ে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কমিশন শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণ করছে।

তিনি বলেন, দুদক ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছিল মূলত বিজনেস প্রসেস রি-ইজ্ঞিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবাপ্রাপ্তিতে জনগণের হয়রানি ও দুর্নীতি লাঘবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে সহযোগিতা করার জন্য। বেশকিছু প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নও করেছে। এখন কমিশন থেকে এসব কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। আমরা চাই সকলের সমন্বিত উদ্যোগে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত হোক।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৫:৫০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11186 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।