বুধবার ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৬ হাজার কোটি টাকার ঋণে লেজেগোবরে অবস্থায় থারমেক্স গ্রুপ

আদম মালেক   |   বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   484 বার পঠিত

৬ হাজার কোটি টাকার ঋণে লেজেগোবরে অবস্থায় থারমেক্স গ্রুপ

ভালো নেই থারমেক্স গ্রুপ। দিনে দিনে বাড়িতেছে দেনা। এ ঋণে ব্যবসার আকার বড় হয়ে দুই ডজন কোম্পানি হয়েছে। আর এক ডজন ব্যাংকে কোম্পানিগুলোর কর্জ ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এক কোম্পানির জন্য ঋণ নিয়ে কখনো গড়ে তুলছে নতুন কোম্পানি কখনো শোধ করছে অন্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান লাভের মুখ দেখছে না। দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে বোঝা বইতে হচ্ছে। একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা। নিয়মিত ঋণ কিস্তি না পেয়ে উদ্বিগ্ন ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ ঋণের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকাই গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে। এছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়াসহ বেসরকারি ও বিদেশী কয়েকটি ব্যাংক থেকেও প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে থারমেক্স।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, যাত্রার প্রথম দশকে স্বাভাবিক গতিতেই বিকাশ হয়েছে থারমেক্স গ্রুপের। এ সময়ে গ্রুপটির ব্যাংকঋণ ও ব্যবসায়িক টার্নওভার বেড়েছে সমান্তরালভাবে। কিন্তু ২০১০ সাল পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করেই পালে হাওয়া লাগে থারমেক্সের। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকসহ অর্ধডজন বেসরকারি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিতে থাকেন আবদুল কাদির মোল্লা। বাড়াতে থাকে থারমেক্স গ্রুপের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। তৈরি পোশাক রফতানির পাশাপাশি টেক্সটাইল, সুতা, ডেনিম, ওভেনসহ বিভিন্ন খাতে সম্প্রসারিত হয় তার ব্যবসা। এক প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন হিসেবে নেয়া ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করেন অন্য প্রতিষ্ঠানে। এভাবেই গড়ে তোলেন প্রায় দুই ডজন কোম্পানি।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত থারমেক্সের ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার কোটি টাকার কম। ওই সময়ে শিল্প গ্রুপটির টার্নওভার ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এর পরের পাঁচ বছরে থারমেক্সের ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হলেও সে তুলনায় বাড়েনি ব্যবসা। উল্টো বস্ত্র ও সুতায় শত শত কোটি টাকার লোকসান গ্রুপটিকে খাদের কিনারে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। তিন বছর ধরে থারমেক্স গ্রুপের ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধও ছিল অনিয়মিত। প্রায় সব ঋণই ছিল খেলাপি হওয়ার পথে।

থারমেক্স গ্রুপকে ঋণ দেয়া ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীসহ নীতিনির্ধারণী ভ‚মিকায় থাকা ব্যাংকাররা বলছেন, বাছবিচার না করে থারমেক্স গ্রুপকে ঋণ দিয়ে চোরাবালিতে আটকা পড়েছেন তারা। অনেক চেষ্টা করেও এখন গ্রুপটির কাছ থেকে টাকা আদায় সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো অনাদায়ী সুদ যুক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে থারমেক্সের ঋণের পরিমাণ। বিপরীতে গ্রুপটির ব্যবসায়িক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে।

যদিও থারমেক্স গ্রুপের কর্ণধার আবদুল কাদির মোল্লার দাবি, থারমেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক পথেই আছে। এমনকি মহামারীর মধ্যেও গ্রæপের টার্নওভার বেড়েছে। তিনি বলেন, করোনার আগে থারমেক্স গ্রুপের টার্নওভার ছিল ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এখন এ টার্নওভার ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রণোদনার যে অর্থ পেয়েছি, তা দিয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছি। বাকি টাকা এখনো জমা আছে।

ব্যবসা ভালো থাকলে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, একেবারেই টাকা দিচ্ছি না এমন নয়। চেষ্টা করছি কিছু টাকা হলেও পরিশোধ করতে। ভালো-খারাপ মিলিয়ে ব্যবসা চলছে। বর্তমান অবস্থায় ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব নয়। ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার ওপর যে স্থগিতাদেশ চলছে, তা ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত হলেও বাড়াতে হবে। আবার বিদ্যমান ঋণগুলো পুনঃতফসিল করে দিতে হবে। অন্যথায় ঋণখেলাপি হয়ে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

থারমেক্স গ্রুপের পণ্য রফতানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে দুই বছর ধরে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে থারমেক্স গ্রুপের সুতা উৎপাদন ও ডায়িংয়ের পাঁচটি কারখানা ইউনিট থেকে সুতার প্রচ্ছন্ন রফতানি হয় প্রায় ৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের। এর পরের বছর ২০১৯ সালে ওই পাঁচটি ইউনিটে উৎপাদিত সুতা রফতানি হ্রাস পেয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। রফতানি কমার ধারা অব্যাহত রয়েছে চলতি বছরেও। এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রচ্ছন্ন সুতা রফতানির পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার।

অন্যদিকে ২০১৮ সালে থারমেক্স গ্রুপের কাপড় উৎপাদন ও ডায়িংয়ের চারটি কারখানা ইউনিট থেকে কাপড়ের সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন রফতানি হয় ৭ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এর পরের বছর ২০১৯ সালে ওই চারটি ইউনিটে উৎপাদিত কাপড় রফতানি ৬ শতাংশ কমে হয়েছে ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। আর চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৫ কোটি ৪১ লাখ ডলারের কাপড় রফতানি করেছে গ্রæপটি।

গ্রæপটির পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হলো আদুরী অ্যাপারেলস লিমিটেড। খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বছরে গড়ে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করেছে।

দুই দশক আগে সোনালী ব্যাংকের ৯৪ লাখ টাকার ঋণে মেশিন আমদানি করে পোশাকশিল্পের ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন আবদুল কাদির মোল্লা। ২০১০ সাল পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি-রফতানিসহ ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংককে ঘিরে। বর্তমানে আবদুল কাদির মোল্লার পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান গণমাধ্যমকে বলেন, থারমেক্স গ্রুপের ঋণগুলো আমার সময়ে দেয়া হয়নি। শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে সোনালী ব্যাংকে যোগদানের পর আমি পরিচালনা পর্ষদকে বলেছি, গ্রুপটিকে নতুন ঋণ না দিয়ে আগের ঋণ আদায় করতে। এরই মধ্যে থারমেক্সের ঋণের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। মূলত ঋণপত্রের দায় সমন্বয় না হওয়ার কারণে ফোর্সড লোন সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, আমরা গ্রুপটির ঋণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। পরিস্থিতির বিচারে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও গ্রুপটিকে প্রণোদনার অর্থ ছাড় দিতে হয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:০৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11191 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।