শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইলের গুদামে অগ্নিকাণ্ড

৮৩ কোটি টাকার বীমা দাবি নিয়ে বিবাদে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   873 বার পঠিত

৮৩ কোটি টাকার বীমা দাবি নিয়ে বিবাদে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স

এক বছর আগে গাজীপুরে মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের ১ শতাংশও বীমা পলিসির আওতায় ছিল না বলে প্রতিবেদন দিয়েছে বীমা প্রতিষ্ঠান পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নিযুক্ত সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠান। এদিকে এ সম্পত্তি ২০১২ সাল থেকেই বীমা সুবিধার আওতায় রয়েছে দাবি করে বাকি প্রায় ৮৩ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পেতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে পুনঃজরিপের আবেদন জানিয়েছে মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত শুনানিতে দুপক্ষের বক্তব্য শুনেছেন আইডিআরএ কর্মকর্তারা।

আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, বীমা প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত সার্ভেয়ারের প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট উল্লেখ করে বীমাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানটি নতুন সার্ভেয়ার নিয়োগের আবেদন করেছে। শুনানিতে আমরা দুপক্ষের বক্তব্যই শুনেছি। তাদের কাছ থেকে কিছু নথিপত্রও এসেছে। কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছে।

পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স নিযুক্ত তৃতীয় পক্ষ জরিপ প্রতিষ্ঠান বাল্টিক কন্ট্রোল (বিডি) লিমিটেড ও দ্য সার্ভেয়ারসের যৌথ সার্ভে রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৮ সালের ৮ মার্চ ভোর ৩টায় গাজীপুর সদরের বানিয়ারচালা এলাকায় মোশারফ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের তৃতীয় গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয় ফায়ার ব্রিগেডসহ সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রতিবেদনে সার্ভেয়ার জানায়, ভবন, ফর্ক লিফট ও গুদামজাত তুলা মিলিয়ে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর মধ্যে ভবনের ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকার। এছাড়া গুদামে মজুদ ৭৯ কোটি ৫১ লাখ টাকার তুলা, এক-দেড় কোটি টাকার পলিয়েস্টার ও ভিসকোস এবং অবচয়-পরবর্তী দামের ভিত্তিতে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার ফর্ক লিফট বিনষ্ট হয়েছে।

সার্ভেয়ার রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৭ সালের জুনে সম্পাদিত বীমা চুক্তি অনুসারে, অল ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিস্ক পলিসির আওতায় গ্রুপটির ৭৮৬ কোটি টাকার সম্পদের বীমাকারী পাইওনিয়ার। এর মধ্যে মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইলের ইউনিট ১ ও এর গুদামে তালিকাভুক্ত সম্পদ-সম্পত্তির বিপরীতে বীমা পলিসি ছিল ১৫৫ কোটি টাকার, একই কোম্পানির ইউনিট ২ ও ৩ এবং সন্নিহিত গুদামের ২৭০ কোটি টাকার, পার্শ্ববর্তী পানামা কম্পোজিট টেক্সটাইলের ৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকার এন স্পিনিংয়ের ১৮২ কোটি ৮০ লাখ টাকার এবং কন্টিনেন্টাল স্পিনিং মিলসের ১২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার বীমা সুবিধা ছিল।

বীমা চুক্তির নথিপত্রের বরাত দিয়ে সার্ভেয়ার বলছে, বীমা সুবিধার আওতায় থাকা এ সম্পদগুলোর একটিও অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়নি। মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইলের তৃতীয় যে গুদামটি আগুনে পুড়ে গেছে, সেটি ইউনিট ১ কিংবা একই ছাদের নিচে থাকা ইউনিট ২ ও ৩ কোনোটির সঙ্গেই যুক্ত নয়। বীমা সুবিধার আওতায় থাকা এ দুই ইউনিটের সম্পদের মধ্যে শুধু পাঁচটি ব্যবহূত ফর্ক লিফট তৃতীয় ইউনিটের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বীমাগ্রহীতা শুধু এর বিপরীতেই ক্ষতিপূরণ পাবেন। তৃতীয় গুদামের ভবন, সেখানে রক্ষিত কাঁচামাল ও অন্য কিছুর বীমা দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।

ফর্ক লিফট বাবদ ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ থেকে অবশিষ্টাংশের মূল্য, স্ববীমা এবং আগে এ গ্রাহক ইউনিট ২-এর অন্য দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করায় অতিরিক্ত স্ববীমার অর্থ কেটে রেখে বীমাগ্রহীতা মাত্র ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য বলে মত দিয়েছে সার্ভেয়ার। ২০১২ সাল থেকেই মোশারফ গ্রুপকে বীমা সুবিধা দিয়ে আসছিল পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স।

এদিকে যৌথ প্রতিবেদনে দুই সার্ভেয়ার বীমা কোম্পানির স্বার্থরক্ষায় অসত্য মতামত দিয়েছে অভিযোগ করে আইডিআরএতে নতুন সার্ভেয়ার নিয়োগের আবেদন করেছে মোশারফ টেক্সটাইল। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন বিষয় উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এমএ মালেক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শুনানির পর পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মিজানুর রহমান বলেন, নিরপেক্ষ সার্ভেয়ার সাইট দেখে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে এবং বীমা চুক্তির আওতায় থাকা সম্পদের বিপরীতে বীমা দাবি নিষ্পত্তির বিষয়ে মতামত দেয়। মোশারফ গ্রুপ আমাদের পুরনো গ্রাহক। তবে আমরা নির্দিষ্ট পদ্ধতির বাইরে যেতে পারি না। অগ্নিকাণ্ডের শিকার তৃতীয় গুদামটি বীমা চুক্তির আওতায় ছিলই না। ২০১৪ সালে ফিল্ড ভিজিটে এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। গুগলের স্যাটেলাইট ইমেজেও দেখা গেছে, ২০১৪ সালে এ স্থানটি ফাঁকা ছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে স্যাটেলাইট ইমেজে তৃতীয় গুদামটির চালা দেখা যায়। এটি নতুন করে পলিসিতে অন্তর্ভুক্ত করলে বীমাকৃত সম্পত্তির আর্থিক মূল্য বাড়ত। তবে ২০১২ সাল থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত মোশারফ কম্পোজিটের বীমা সুবিধার অংকটি একই জায়গায় আটকে রয়েছে।

এদিকে শুনানিতে বীমাগ্রহীতা কোম্পানির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, শুরু থেকেই তৃতীয় গুদামটি ছিল এবং বীমা চুক্তিতে উল্লিখিত গুদাম বলতে এটিকেও বোঝানো হয়েছে।

আইডিআরএতে করা আবেদনে তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে সার্ভেয়ারের ১১ মাস সময় নেয়ার বিষয়েও অভিযোগ করেছেন। সার্ভেয়ার তার জবাবে বলছে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র জমা দিতে দফায় দফায় সময় নেয়ায় এ বিলম্ব হয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:২৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11188 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।