| মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট | 260 বার পঠিত
এম এ খালেক: গত ১২ জানুয়ারি থেকে বরিশালে তিনদিনব্যাপী জাতীয় বীমামেলা অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল, যদিও তা করোনার কারণে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বীমামেলা সাধারণ মানুষের মাঝে বীমা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে কতটা সহায়ক হবে বলে মনে করেন?
মো. মাহফুজুর রহমান: আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশে বীমাশিল্প প্রত্যাশা মতো এগোতে পারেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনের সুবিধার্ধে এই বীমা-সেক্টরে চাকরি গ্রহণ করেছিলেন। অর্থাৎ আমি বলতে চাই জাতির পিতার সেন্টিমেন্টের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে এই বীমা-সেক্টর। তিনি বীমা-সেক্টরের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বীমাশিল্পের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্তত জাতির পিতার স্মৃতির জন্য হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বীমাশিল্পের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করে চলেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের জনসংখ্যার অন্তত ৯৫ শতাংশই এখনো বীমাশিল্পের আওতার বাইরে রয়ে গেছেন। অর্থাৎ মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ বীমা-সেবা গ্রহণ করছেন। যারা বীমা-সেবার বাইরে রয়েছেন এটা তাদের দোষ তা আমি মনে করি না। যারা বীমা-সেবা প্রদানের নিয়োজিত এই ব্যর্থতা সম্পূর্ণরূপেই তাদের। কারণ তারা সাধারণ মানুষকে বীমার উপকারিতা সম্পর্কে বোঝাতে পারেননি। বীমা একজন মানুষের জীবনে সহায়ক শক্তি কতটা কাজ করে এই বার্তা আমরা সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছাতে পারিনি। যারা বীমা-সেবার আওতার বাইরে রয়েছেন, তাদের নিকট বীমার কি সুবিধা সেই বার্তা পৌঁছানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর এবং ফলপ্রসূ একটি পদ্ধতি। ইতিপূর্বে আমরা ব্যাংকিংমেলা এবং রোডশো করার মাধ্যমে ব্যাংকিংয়ের বার্তা গ্রামগঞ্জে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম। কীভাবে ব্যাংকিংসেবা গ্রহণ করা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই উদ্যোগগুলো বেশ কাজে লেগেছে। ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) বীমা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করার জন্য জাতীয় বীমামেলা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা অত্যন্ত ভালো একটি পদক্ষেপ বলেই আমি মনে করি। বীমামেলা দেশের বিভিন্ন শহরে যত বেশি আয়োজিত হবে সাধারণ মানুষ ততই বীমাশিল্পের প্রয়োজনীয়তা এবং সুফল সম্পর্কে জানতে পারবে। বীমামেলা আয়োজন করা হলে সব বীমা কোম্পানির খবর মানুষের নিকট পৌঁছবে। একজন সাধারণ মানুষ তখন বেছে নিতে পারবে কোন কোম্পানি থেকে তিনি পলিসি গ্রহণ করবেন। বীমা খাতে দু’ধরনের প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। কিছু কিছু বীমা কোম্পানি আছে যারা অত্যন্ত সুনামের অধিকারী। তারা গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু বীমা কোম্পানি আছে যারা যথেষ্ট দুর্নামের অধিকারী। আসলে ভালো-মন্দ সবখানেই আছে। জনগণের নিকট উন্মোচন হওয়া উচিত কোন প্রতিষ্ঠান ভালো আর কোন প্রতিষ্ঠান মন্দ। তাহলে তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো কোম্পানি বেছে নিতে পারবেন। বীমামেলা গ্রাহকদের ভালো কোম্পানি বেছে নেবার সুযোগ করে দেবে।
এম এ খালেক: কিছু কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের কর্মীদের বীমা পলিসি নেই। এদের জন্য কি আইন করে বীমা পলিসি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে মনে করেন?
মো. মাহফুজুর রহমান: আমি তো মনে করি, কোনো কিছুই আইন করে বাধ্য করা উচিত নয়। আমি একজন মানুষকে বাধ্য করবো কেনো অর্থ ব্যয় করার জন্য? আমি এমনভাবে সেবাটা তাদের নিকট নিয়ে যাবো যাতে তারা নিজেরাই বীমা পলিসি গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ হয়। আপনি একজন মানুষকে উদ্বুদ্ধ না করে বাধ্য করবেন বীমা পলিসি গ্রহণের জন্য আমি এটা কখনোই বিশ্বাস করি না। বীমা কোম্পানিগুলো তাদের সেবাগুলোকে জনগণের নিকট নিয়ে যাবে। তাদের আচরণ এবং সেবা দিয়ে জনগণের মন জয় করবে। জনগণ এমনিতেই বীমা পলিসি গ্রহণে আগ্রহী হবে। জনগণ যখন দেখবে বীমা পলিসি গ্রহণ করলে তার লাভ হবে তখন সে নিজেই বীমা পলিসি গ্রহণের জন্য এগিয়ে আসবে।
এম এ খালেক: ছাত্র-ছাত্রীদের বীমার আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন কথাবার্তা শোনা যায়। এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলবেন কি?
মো. মাহফুজুর রহমান: শুধু ছাত্র-ছাত্রী কেনো আমি মনে করি বীমা পলিসির আওতার বাইরে কাউকেই রাখা উচিত নয়। কারণ বীমা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে। কাজেই সবারই বীমা পলিসি গ্রহণ করা উচিত। ছাত্র-ছাত্রীরা বীমা পলিসির আওতায় এলে তাদের একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। তারা প্রিমিয়াম দেবে। ভবিষ্যতে যে টাকা পাবে তা দিয়ে বিভিন্ন কাজ করতে পারবে। উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। কাজেই তাদের বীমা করা থাকলে এ ব্যাপারে সুবিধা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা টিউশনি করে বা পার্টটাইম চাকরি করে টাকা জমিয়ে সেই টাকা থেকে বীমার প্রিমিয়ার পরিশোধ করতে পারে। ভবিষ্যতে এই টাকা তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে। তারা যদি ভাবতে পারে যে আমার টাকা দিয়ে আমি পড়াশোনা করছি বা অন্য কাজ করছি সেটা তাদের জন্য গৌরবের ব্যাপার হবে। শিক্ষাজীবনে যদি একজন ছাত্র বা ছাত্রী বীমা পলিসি গ্রহণ করে, তাহলে সে পরবর্তী জীবনে তার আর্থিক বিষয়গুলো গুছিয়ে নিতে পারবে।
এম এ খালেক: বাংলাদেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা অনেক। আপনি কি মনে করেন বীমা কোম্পানির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয়ে গেছে?
মো. মাহফুজুর রহমান: আমি মনে করি না যে দেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয়ে গেছে। আমাদের একটি বিষয় স্মরণ রাখতে হবে, এখনো দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ বীমা পলিসির আওতার বাইরে রয়েছে। তাহলে বীমা কোম্পানির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয় কি করে? ৫ শতাংশ মানুষকে বীমা কাভারেজের মধ্যে থাকার পরও এই সেক্টরের অবস্থা ভালোই বলতে হবে। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কোম্পানি এই সেক্টরে আসছে। এই সেক্টরের অবস্থা ভালো না হলে নতুন কোম্পানি কেনো আসবে। আমাদের কোম্পানিও নতুন। আরো অনেক নতুন কোম্পানি আসছে। তবে তাদের এগিয়ে যাবার পথটা আরো মসৃণ হওয়া দরকার। যারা সরকারিভাবে এই সেক্টর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন, তারা এই কোম্পানির প্রচারের জন্য যেমন চেষ্টা করবেন। তেমনি যারা অন্যায় করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
এম এ খালেক: আপনি একজন প্রাক্তন ব্যাংকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদে ছিলেন। আপনি অবসর গ্রহণের পর ব্যাংকে না গিয়ে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে এলেন কেন?
মো. মাহফুজুর রহমান: আমি দীর্ঘদিন ব্যাংকে চাকরি করেছি। অবসর গ্রহণের পার আমি আর চাকরিতে যেতে চাইনি বরং আমি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। মূলত সে কারণেই আমার ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে আসা। ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে লাগে ৪০০ কোটি টাকা। আর বীমা কোম্পানি করতে ১২ জন উদ্যোক্তা মিলে লেগেছে ১৮ কোটি টাকা। বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে তুলনামূলকভাবে কম অর্থ প্রয়োজন হয়। আর এর পরিধিও বেশ ছোট। আমি চাইলেই ব্যাংকের মতো বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবো না। তাই আমার বীমা কোম্পানিতে আসা। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর আর কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবো না। আমি উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে উঠতে চাই।
এম এ খালেক: কিছু কিছু বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ শোনা যায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইডিআরএ’র ভূমিকা কি যথেষ্ট বলে মনে করেন?
মো. মাহফুজুর রহমান: আইডিআরএ’র ভূমিকা জানতে হলে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস জানতে হবে। আইডিআরএ’র জন্ম হয়েছে খুব বেশিদিন আগে নয়। আইডিআরএ গঠিন হবার আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ইউনিট থেকে বীমাখাত নিয়ন্ত্রিত হতো। পরে এক সময় বীমা কোম্পানি নিয়ন্ত্রণের অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাতে যায়। প্রথম থেকেই বীমা কোম্পানি যেভাবে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত ছিল তা হয় নি। সঠিক সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি। আইডিআরএ প্রতিষ্ঠিত হবার পর তারা বিভিন্নভাবে এই খাতকে শৃঙ্খলা মধ্যে আনার চেষ্টা করছে। আইডিআরএ বীমা খাতের উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বেশ ভালো ভালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কথা বলছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্ম কিন্তু আজকে নয়। পাকিস্তান আমলে ছিল স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান। তার আগে ছিল রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক এভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে করতে এতদূর এসেছে। অর্থাৎ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কিছু অভিজ্ঞ লোকবল পেয়েছিল। কিন্তু আইডিআরএ’র ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। তাদের সম্পূর্ণ নতুনভাবে শুরু করতে হয়েছে। তবে আইডিআরএ নতুন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বীমাশিল্পের নিয়ন্ত্রণে যেভাবে কাজ করে চলেছে তা খুবই প্রশংসনীয়। আমি মনে করি, বাংলাদেশে বীমা সেক্টরের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল এবং ব্যাপক। অদূর ভবিষ্যতে এই খাতে বিপ্লব সাধিত হবার সম্ভাবনা আছে। নতুন কোম্পানি যারা আসছে তারাও ভালো করছে। তারা নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে জনগণের নিকট যাচ্ছে। সাড়াও পাচ্ছে ভালো। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই মুসলিম এবং তারা ধর্মপ্রাণ। এই বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে বেশ কয়েকটি ইসলামিক বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা বেশ ভাালো করছে। এসব প্রতিষ্ঠান ইসলামি শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে। যারা আগে বীমা পলিসি গ্রহণকে ধর্ম সম্মত মনে করতেন না তারাও এখন ইসলামি শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত বীমা কোম্পানিতে আসছে। আমাদের দেশে বীমা সেক্টরের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। আইডিআরএ চেষ্টা করছে কীভাবে বীমাকে সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া যায়।
Posted ৩:২০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy
এ বিভাগের আরও খবর
আর্কাইভ ক্যালেন্ডার
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |