বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

৯ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ প্রায় ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   423 বার পঠিত

৯ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ প্রায় ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত

খেলাপি ঋণের কবল থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংকিং খাত। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের বোঝা বইতে বইতে অনেক ব্যাংক নিজেই নুয়ে পড়ছে। ঋণ নেয়ার পর বিভিন্ন অজুহাতে একের পর এক খেলাপি হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকারও বেশি। দেশের ৫৯টি ব্যাংকের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি আছে নয় ব্যাংকের।
খেলাপি ঋণে থাকা ব্যাংকগুলো মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। তাদের খেলাপি ৯৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর দেশি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের। যাদের ঋণ খেলাপ হয়েছে ৭৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এভাবে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে ঋণ খেলাপি থেকে ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে দিয়েছেন নানান পরামর্শ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী যে ৯টি ব্যাংকের ঋণ উদ্বেগজনক হারে খেলাপ হয়েছে, সেগুলো হলো- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ), বেসিক ব্যাংক (৫১ দশমিক ৭৩ শতাংশ), জনতা ব্যাংক (২৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ), সোনালী ব্যাংক (২০ দশমিক ৯১ শতাংশ), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক (৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ), আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (৭৯ দশমিক ৮১ শতাংশ), পদ্মা ব্যাংক (৬৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (৩০ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং দেশে কার্যরত বিদেশি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান (৯৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত ২০১৯ সালের ১৬ মে ঋণ খেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুযোগ দেয় সরকার। ওই সুবিধার আওতায় জুন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ব্যাংক নবায়ন করে, যার অর্ধেকই করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে, যার পরিমাণ ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) করেছে।
খেলাপি ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকিং সেক্টরের প্রধান সমস্যা খেলাপি। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, সেটা অনেক। এখন খেলাপিদের অনেকেই ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নতুন করে প্রণোদনার ঋণ নিতে চাচ্ছেন। ফলে ডাউন পেমেন্ট হিসেবে কিছু টাকা আদায় হয়েছে, এটা খুব বেশি বলা যাবে না। তাছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ আদায়ে শিথিলতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সময় শেষে মোট খেলাপি বৃদ্ধির জোর আশঙ্কা রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংক।’
তিনি আরও বলেন, ‘হালনাগাদ প্রতিবেদন মতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে তিন মাসে মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা কমেছে। এ কমাটা খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। কিছু সময় গেলে বোঝা যাবে অবস্থা আসলে কেমন। তবে কমে আসাটা ইতিবাচক। হয়তো নতুন ঋণে শর্ত যোগ হওয়ায় বড় খেলাপিরা কমিয়ে দিচ্ছে নতুনটি পাওয়ার আশায়। আবার কমে আসার কারণটা হতে পারে ব্যাংকারদের কড়াকড়ি আরোপ। ব্যাংক খাত টিকিয়ে রাখতে খেলাপিদের আরও কঠিন বার্তা দেয়া উচিত।’
সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘খেলাপি সমস্যার কারণে নতুন করে গ্রিন ব্যাংকিংয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, এটা ভবিষ্যতের জন্য ওয়ার্নিং। আমার সময়ে দু-একটি এমন বিষয় এসেছিলো আমি সেগুলো মূল্যায়ন করিনি। এটা আমাদের দেখতে হবে যে কোথায় আমরা বিনিয়োগ করছি।’

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৩০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।