বৃহস্পতিবার ৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতির এক ডজনের বেশি অভিযোগ

বায়রা লাইফের নতুন পলিসি ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   349 বার পঠিত

বায়রা লাইফের নতুন পলিসি ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা

গ্রাহক হয়রানি, দাবি পরিশোধে ব্যর্থতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অমান্যসহ জাল-জালিয়াতি ও অনিয়মের এক ডজনের বেশি অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে পড়া বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে। এ কারণে কোম্পানিটির নতুন বীমা ব্যবসা সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে কোম্পানিটিকে নিয়ম মেনে চলার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে আইডিআরএর পক্ষ থেকে। তারপরও অবস্থার উন্নতি হয়নি। এ কারণে বায়রা লাইফের প্রতারণার হাত থেকে সাধারণ গ্রাহকদের রক্ষার জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছে আইডিআরএ।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, সঠিক সময়ের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধ না করা, ঝরে পড়া বা তামাদি পলিসির সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন না করানো, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ দীর্ঘদিন শূন্য রাখা ও নিবন্ধনের তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়া ইস্যুতে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগের মুখে পড়েছে বায়রা লাইফ। সেইসঙ্গে কোম্পানির দায়িত্বশীলদের অধিক মূল্যের গাড়ি ব্যবহার, নিয়ম ভেঙে পরিচালনা পর্ষদে ‘উপদেষ্টা সদস্য’ রাখা, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অমান্য করার বিষয়গুলোও সামনে এসেছে। যে কারণে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে আইডিআরএ।

জানা গেছে, বায়রা লাইফের বিরুদ্ধে ছোট-বড় মিলিয়ে এক ডজনেরও বেশি অভিযোগ পাওয়ায় গত ৭ অক্টোবর এক চিঠিতে কোম্পানিটির নতুন বীমা ব্যবসা বা পলিসি ইস্যু (প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আদায়) সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। সাধারণ বীমা গ্রাহক বা জনগণকে বায়রা লাইফের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বায়রা লাইফ নতুন কোনো পলিসি ইস্যু করতে পারবে না।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা প্রসঙ্গে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ‘নতুন পলিসি ইস্যু বন্ধের বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরে এ নিয়ে আইডিআরএতে কথা বলেছি। তারা মৌখিকভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে বলেছেন। আমরা কিছু বিষয়ে ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু ব্যবসা বন্ধের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনসহ যেসব বিষয়ে সংস্থাটির আপত্তি আছে, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।’

জানা গেছে, নিয়ম না থাকলেও দীর্ঘদিন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদটি শূন্য রাখে বায়রা লাইফ। গুরুত্বপূর্ণ এ পদটিতে স্থায়ীভাবে কাউকে বসানো হয়নি। প্রায় আট বছর শীর্ষপদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ওমর ফারুক ভুঁইয়া। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের শর্তপূরণে ব্যর্থতার কারণে ওই পদে তাকে নিয়োগের অনুমোদন দেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরপর সানলাইফের সাবেক মুখ্য নির্বাহী সোলায়মান হোসেনকে ওই পদে নিয়োগের অনুমতি চেয়েছিল। তিনিও কয়েক মাস পর স্বেচ্ছায় সরে গেছেন। মুখ্য নির্বাহীর পদ শূন্য রাখা নিয়ে বিতর্কের পর স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক সিইও মো. জাকির হোসেনকে বায়রা লাইফের সিইও হিসেবে নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনিও এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পাননি, প্রস্তাবিত সিইও হিসেবে ওই কোম্পানিতে কাজ করছেন। অথচ বিদ্যমান আইন মেনে মুখ্য নির্বাহীর পদ ছয় মাসের বেশি শূন্য রাখা বা কাউকে ওই পদে চলতি দায়িত্বে রাখার সুযোগ নেই। এ নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মো. জাকির হোসেন আইডিআরএর চিঠির কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এদিকে ২০১১ সালের পর প্রায় আট বছর ধরে সম্পদ-দায় মূল্যায়ন (অ্যাকচ্যুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন) করেনি বায়রা লাইফ। এ-সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদনও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জমা দেয়নি। নির্দেশনা মেনে অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন না করানোর কারণে কোম্পানির বর্তমান অবস্থার প্রকৃত তথ্য মিলছে না। এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা ভঙ্গের কারণে এর আগের কোম্পানিটিকে এককালীন প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ও প্রতিবছরের জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে ৩৫ লাখ টাকা এবং দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা আরও চার কোটি ১৩ লাখ টাকাসহ প্রায় ১৮ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা ও জরিমানার পরও অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন না করায় তোপের মুখে পড়েছে বায়রা লাইফ। দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মালিকানাধীন জীবন বীমা কোম্পানি বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০০০ সালে বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে পথচলা শুরু করে কোম্পানিটি। এরপর প্রায় দুই দশকেও কোম্পানিটির অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং অনিয়ম, জাল-জালিয়াতি, বীমা দাবি পরিশোধে ব্যর্থতা, গ্রাহক ভোগান্তি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অমান্য করে শুরু থেকেই বিতর্কের মুখে বায়রা লাইফ। এসব কারণে ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়েছে কোম্পানিটি।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:২৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।