শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

দারিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর দাবি টিআইবির

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০৯ জুন ২০২০   |   প্রিন্ট   |   312 বার পঠিত

দারিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর দাবি টিআইবির

অপর্যাপ্ত অর্থায়ন ও দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য খাতের সত্যিকার উন্নয়নে অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী পর্যাপ্ত বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং করোনোর প্রভাবে নতুন করে দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাওয়া মানুষের জন্য কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে টিআইবি। শুধু বরাদ্দ বা আওতা বাড়ানোই নয়, এসব খাতে সকল প্রকার ক্রয়, বিতরণ, ব্যয় ও বণ্টনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে কার্যকর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের রোডম্যাপের ঘোষণা ও এর বাস্তবায়ন দেখতে চায় সংস্থাটি।
একইসঙ্গে করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সচল করা, রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার নামে আসন্ন জাতীয় বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা সাদা করার সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে মর্মে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সরকারকে এ জাতীয় দুর্নীতি সহায়ক ও স্ববিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (০৯ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় টিআইবি।

বিবৃতিতে টিআইবি জানিয়েছে, সুশাসন ও ন্যায্যতার পরিপন্থী হলেও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সরকার আসন্ন বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা সাদা করার সুযোগকে আরও বিস্তৃত করতে যাচ্ছে। আবাসন খাতে ফ্ল্যাটের পাশাপাশি এবার জমি কেনা ও উন্নয়ন এবং শেয়ার বাজারের বিনিয়োগেও এই অনৈতিকতার বৈধতা দেওয়া হচ্ছে।

করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের নামে সরকারের এমন পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আসন্ন বাজেটে বড় পরিসরে আবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগই কেবল দেওয়া হচ্ছে না, বরং অর্থের উৎস নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রশ্ন করার বিধানটিও উঠিয়ে দিতে যাচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণা আর দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকে বৈধতা দেওয়া শুধু পরস্পর বিরোধী নয়, বরং সরাসরি দুর্নীতি সহায়ক, অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক। বছরের পর বছর এই সুবিধা দিয়ে দেশের অর্থনীতির কোনো উপকার হয়নি, উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আদায় হয়নি, কোনো বিনিয়োগ তো নয়-ই। অথচ অনৈতিকতা প্রশ্রয় পেয়েছে আর সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী এই ব্যবস্থা সৎপথে উপার্জনকারী নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক, এমন বাস্তবতায় সরকারকে এই আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছি।

পাশাপাশি বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া লক্ষাধিক কোটি টাকার যে খতিয়ান দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানে বিভিন্ন সময়ে বেরিয়ে এসেছে, তা দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি, বলেন তিনি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অতি সম্প্রতি একাধিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অজ্ঞাত উৎস থেকে দেশের বাইরে বিপুল বিনিয়োগের সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। সরকারকে এইসব ‘দৃশ্যত আইনের ঊর্ধ্বে স্থান পাওয়া’ প্রভাবশালীদের আরও প্রশ্রয় দেওয়ার পরিবর্তে সম্পদের উৎস অনুসন্ধান করে উপযুক্ত কার্যকর জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সরকার এখনও মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষীদের হাতে জিম্মি হয়ে যায়নি।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্যখাতের দুর্বল অবস্থা অত্যন্ত করুণভাবে ফুটে উঠেছে। সরকারি হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হিমশিম খাচ্ছে, সেবা না পেয়ে হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে অসহায় মৃত্যুর খবরও উঠে এসেছে গণমাধ্যমে।

স্বাস্থ্য খাতের এমন ভঙ্গুর পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বছরের পর বছর স্বাস্থ্য খাতে অপর্যাপ্ত অর্থায়ন (যা বিব্রতকরভাবে জিডিপির এক শতাংশেরও কম), বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে সমন্বিত কৌশলের অভাব আর এ খাতে ক্রমবর্ধমান লাগামহীন দুর্নীতি এহেন বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। যেখানে ক্রয় ও অবকাঠামো খাতের বরাদ্দকে স্বার্থান্বেষী মহল যোগসাজশ করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ বিকাশে এতটাই তৎপর থেকেছে যে স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও সেবার মান বাড়ানোর বিষয়টি নিতান্তই উপেক্ষিত ছিল বলা যায়।

এ খাতের দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে কাঠামোগত আমূল সংস্কারের এখনই উপযুক্ত সময় মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, আসন্ন বাজেটে সরকার এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বা পথ-নকশা তুলে ধরবে বলে আশা করছি। যেখানে সার্বজনীন স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা চালুর সময়াবদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় দুর্নীতির মূলোৎপাটনের কার্যকর দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ শুধু স্বাস্থ্য খাতেরই নয়, দেশের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা এবং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকেও মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। ভয়াবহ এই সংকট যে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতের বড় সংখ্যক মানুষকে শুধু কর্মহীন করে তুলেছে তাই নয়, বরং ঠেলে দিয়েছে দারিদ্রসীমার নিচেও।

অর্থনৈতিকভাবে অসহায় এসব মানুষের কর্মসংস্থানের গুরুত্ব উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্র মানুষের জন্য নির্ধারিত সহায়তা আত্মসাতে তৎপর স্বার্থান্বেষী মহলকে নিয়ন্ত্রণের কার্যকর কর্মকৌশল নেওয়া আবশ্যক, যার ঘোষণাটি আসতে হবে আসন্ন বাজেটেই। এক্ষেত্রে শুধু বরাদ্দ বাড়ানোই নয়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তির যোগ্য সকল উপকারভোগীর কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলে নিয়মিত হালনাগাদ অবস্থায় ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সহজে অভিগম্য মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে এবং প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতির সুযোগ কমিয়ে আনায় গুরুত্ব দিতে হবে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৬:৪৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ জুন ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।