| বৃহস্পতিবার, ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 991 বার পঠিত
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠন হতে যাওয়া মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী দায়িত্বে থাকছেন বলে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা নিশ্চিত করেছেন।
যেসব মন্ত্রণালয়ে নতুন মুখ আসতে পারে, সেগুলো হলো অর্থ, জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, পররাষ্ট্র, খাদ্য, দুর্যোগ ও ত্রাণ, শিক্ষা, আইন, ধর্ম, ভূমি, বস্ত্র ও পাট এবং পররাষ্ট্র।
আওয়ামী লীগ টানা দুই মেয়াদের যে শাসন চালিয়েছে, তাকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকারের পর সবচেয়ে সফল বলে দাবি করে আসছে। এই সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা এসেছে আন্তর্জাতিক পরিম-ল থেকেও। আর এই মন্ত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এখনো কর্মঠ, যাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক বা সমালোচনা নেই। তাই তাদের পাল্টানোর প্রয়োজন বোধ করছে না সরকার।
গত রবিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটে বর্তমান মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য হারেননি। যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো অভিযোগও নেই। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার বিষয়টিও সামনে আসেনি সেভাবে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে বয়স আর শারীরিক অসুস্থতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার প্রতিবারই আওয়ামী লীগ আনে নতুন মুখ। এসবই পরিবর্তনের কারণ হবে।
তবে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না কেউ। গতকাল সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বিশেষ কিছু বলেননি। তার বক্তব্য ছিল এমন: ‘এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখবেন। এটা একেবারেই তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। মন্ত্রিসভার বিষয়ে এ জবাবটা আমি দিতে পারছি না। এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
নতুন মন্ত্রিসভা কবে শপথ নেবেÑএটাও নিশ্চিত করে বলছেন না কেউ। তবে আগামী সপ্তাহে এবং ১০ জানুয়ারির মধ্যে এই শপথ হচ্ছে সেটা নিশ্চিত।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করে যাত্রা শুরু হয়েছিল বর্তমান সরকারের। এদের মধ্যে ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত ওই মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ৫৩ জন। এবারও নবগঠিত মন্ত্রিসভার আকার ৫০-এর আশপাশে থাকতে পারে।
যেসব মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বর্তমান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্বপদে থাকছেন, এটা নিশ্চিত। তবে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জাতীয় পার্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা পূর্ণমন্ত্রী হতে পারেন অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ে। সে ক্ষেত্রে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির কোনো নেতা।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বপদে বহাল থাকলেও এই মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
একই রকম হতে পারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেও। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী পুনরায় এ দায়িত্ব পেলেও প্রতিমন্ত্রীর বিষয়টি অনিশ্চিত।
বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয়েও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু ও মতিয়া চৌধুরীর কেউ যদি দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন, তাহলেই পরিবর্তন হতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামান খান কামালের দায়িত্ব পাল্টানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে এই মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হতে পারে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পরিবর্তন না হলেও সেখানে প্রতিমন্ত্রী আসতে পারে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরিবর্তিত থাকতে পারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা দুই প্রতিমন্ত্রীর।
নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় যারা
যুব ও ক্রীড়ায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নতুন যুক্ত হতে পারেন বাংলাদেশ ওডিআই ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
ঢাকার সালমান এফ রহমান, বেনজীর আহমেদ, এ কে এম রহমতুল্লাহ, হাবিবুর রহমান মোল্লা ও আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, সিলেটের ইমরান আহমেদ, পঞ্চগড়ের নুরুল ইসলাম সুজন, খুলনার পঞ্চানন বিশ^াস, রংপুরের টিপু মুনশি, জয়পুরহাটের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, নওগাঁর সাধন চন্দ্র মজুমদার, সিরাজগঞ্জের হাবিবে মিল্লাত মুন্না, কুষ্টিয়ার মাহবুব উল আলম হানিফ এবং বাগেরহাটের শেখ হেলালউদ্দিনের নামও আছে আলোচনায়।
যশোরের কাজী নাবিল আহমেদ, গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল, সিমিন হোসেন রিমি, কিশোরগঞ্জের নূর মোহাম্মদ, মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়, পিরোজপুর আসনের স ম রেজাউল করিম, মুন্সিগঞ্জের মৃণাল কান্তি দাশ, নারায়ণগঞ্জের গাজী গোলাম দস্তগীর, নরসিংদীর নূরুল মজিদ হুমায়ূন, মাদারীপুরের আবদুস সোবহান গোলাপ, ময়মনসিংহের শামসুদ্দীন আহমেদ, হবিগঞ্জের মাহবুব আলী, কুমিল্লার সেলিমা আহমাদ মেরী, চাঁদপুরের শফিকুর রহমান, চট্টগ্রামের মহিবুল হাসান নওফেল ও মোস্তাফিজুর রহমান। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে কুজেন্দ্র লাল আছেন আলোচনায়।
টাঙ্গাইল থেকে আব্দুর রাজ্জাক, গোপালগঞ্জের ফারুক খান, চাঁদপুরের দীপু মনি আবার ফিরতে পারেন মন্ত্রিসভায়। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার নামও আছে আলোচনায়। সে ক্ষেত্রে দলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন নাও থাকতে পারেন।
পদোন্নতি পেতে পারেন বর্তমান মন্ত্রিসভার পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী হতে পারেন তিনি।
পরিবর্তনের আলোচনা যাদের নিয়ে
অসুস্থতার কারণে মন্ত্রিপরিষদে স্থান নাও পেতে পারেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সে ক্ষেত্রে এই মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই থাকতে পারে।
তবে আশরাফের বাদ পড়ার একমাত্র কারণ হতে পারে তার শারীরিক অসুস্থতা। তিনি এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন থাইল্যান্ডে। কবে ফিরবেন, সেটা নিশ্চিত নয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে। মোহাম্মদ নাসিম বর্তমানে এই মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে দুটি নাম আছে আলোচনায়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা শেখ ফজলুল করিম সেলিম বা টেকনোক্রেট কোটায় প্রাণগোপাল দত্তের নাম আছে আলোচনায়। তবে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনকে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রীর বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত থাকলেও মন্ত্রী পরিবর্তনের গুঞ্জন আছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়েও দেখা যেতে পারে নতুন মুখ।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আনিসুল হকও থাকতে পারেন, আবার একজন ব্যারিস্টারকেও এই দায়িত্বে দেখা যেতে পারে। যোগ হতে পারে প্রতিমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন বৃহত্তর বরিশাল থেকে জয়ী একজন।
বার্ধক্যজনিত কারণে মন্ত্রিপরিষদে পুনরায় দায়িত্ব না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এমাজউদ্দিন প্রমাণিকের।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী এবার মনোনয়নই পাননি। তাকে এবার মন্ত্রী করতে হলে করতে হবে টেকনোক্র্যাট কোটায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও পরিবর্তন এলে আলোচনায় আছে সিলেট-১ থেকে নির্বাচিত এ কে আব্দুল মোমেনের নাম। তবে এই পরিবর্তন হবে কি না, সেটা নিয়ে দুই ধরনের কথাই আছে ক্ষমতাসীন দলে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু বয়সের কারণে দায়িত্ব নাও পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রীর পদোন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকতে পারেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু। তবে তার মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হতে পারে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপমন্ত্রী পদোন্নতি পেয়ে প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন।
Posted ৩:২২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed