| শনিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 1958 বার পঠিত
ঢাকা: রাইড শেয়ারিং সেবাকে একটি আইনি কাঠামোতে পরিচালনায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সেগুলো মেনে চলার তাগিদ দেখা যায় না সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে।
অনেকটা খোলামেলা ভাবেই নীতিমালার বিরুদ্ধে গিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সহজ, পাঠাও, উবারের মতো রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো।
২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭’ এর অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয় ওই বছরেই ২৮ ফেব্রুয়ারি। যা কার্যকর হয় ৩ মার্চ।
তবে এর প্রায় একবছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি এই নীতিমালা। ফলে বিশৃংখলা বাড়ছে সেবাভিত্তিক এই খাতে। আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।
নীতিমালায় থাকা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা না মেনেই কার্যক্রম পরিচালনা করায় সরাসরি প্রভাব পড়ছে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও জনজীবনে।
রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ এর অনুচ্ছেদ (ক) ধারা ১০ এ বলা আছে, ‘ব্যক্তিগত মোটরযান রেজিস্ট্রেশন গ্রহণের পর ন্যূনতম একবছর অতিক্রান্ত না হলে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় সেবা প্রদানে নিয়োজিত হতে পারবে না।’
কিন্তু এই নিয়ম না মেনেই রীতিমতো প্রচার প্রচারণা চালিয়ে নতুন বাইক সার্ভিস আনছে পাঠাও। এজন্য দেশীয় একটি মোটরসাইকেল প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও হয়েছে কোম্পানিটি। নতুন কেনা বাইক পাঠাও-তে রেজিস্ট্রেশন করলে পাওয়া যাবে সহজ মাসিক কিস্তি-নিজেদের রাইডার সংখ্যা বাড়াতে এমন লোভনীয় অফার দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া নতুন কেনা মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন এক বছর অতিবাহিত না হলেও সেটিকেও রাইড শেয়ারিং এ যুক্ত করার অভিযোগ আছে সহজ ও উবারের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত একবছরে রাজধানীতে ‘বহিরাগত’ মোটর চালকের সংখ্যা বেড়েছে খুব দ্রুত। নগরীতে হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়া এই বাইক ও বাইকারের চাপে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রাজধানীর যান চলাচল এবং জীবনযাত্রায়।
পথঘাট না চেনা এবং ঢাকার সড়ক-পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হওয়ায় বাইরে থেকে আসা বাইকাররা রাজপথে তৈরি বিশৃঙ্খলা করছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যান চলাচলে বিঘ্ন তৈরির পাশাপাশি ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পথচারী-যাত্রীরা। অনেক সময় নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
পাঠাও-উবারের কারণে এমন গাড়ি বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। সম্প্রতি ট্রাফিক পক্ষ উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, উবার ও পাঠাও-ও অহেতুক হাজার হাজার গাড়ি নামিয়ে দিয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল করিম আলম বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে বিআরটিএ-কে কাজ করতে হবে। আমরাও সাহায্য করছি। রাইড শেয়ারিংগুলোর কারণে হাজার হাজার মোটরসাইকেল আর মানুষ রাজধানীতে ঢুকে গেছে।
‘লাখ লাখ মানুষের এই শহরে যেখানে আমাদের মাঝে আইন মানার প্রবণতা অনেক কম, সেখানে নতুন করে এত গাড়ি ও চালক সড়কে নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি করছে। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ তার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে বছরখানেক ধরে রাইড শেয়ারিংয়ে আসা এসব যানবাহনকে ‘আন-অথোরাইজড’ বলছে বিআরটিএ। তবে আইন প্রয়োগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন সংস্থাটির পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী।
তিনি বলেন, আমরা তো এ ধরনের কোনো প্ল্যাটফর্ম বা যানবাহনকে অনুমোদন দিইনি। যদি দিতাম তাহলে আমাদের দোষ হতো। এক বছরের আগে যদি কোনো গাড়ি রাইড শেয়ারিংয়ে আসে তাহলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তারা নিতেই পারে।
আইন অমান্য করলেও বাস্তবতার নীরিখে রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি অনেকটা ‘নমনীয়’ অবস্থান নেওয়ার কথা স্বীকার করে শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, যেহেতু এটা একটা নতুন ব্যবস্থা, মানুষ চাচ্ছে এটিকে। এটা ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’। তাই বিষয়গুলোকে আমরা এখনো জোরালোভাবে দেখছি না।
অন্যদিকে এতসব অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ-ই সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। পাঠাওয়ের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান উবারের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে যোগাযোগ করা হলে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করে এক ই-মেইল বার্তায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (মার্কেটিং) শেজামি খলিল বলেন, দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সহজ দেশের সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭’-এর সকল অনুচ্ছেদ ও শর্তাবলী মেনে এবং জনসাধারণের সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়েই আমরা আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
Posted ৪:০৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed