নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 333 বার পঠিত
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড চীনে বিলেট রপ্তানি শুরু করেছে। প্রথম ধাপে কোম্পানিটি ২৫ হাজার টন বিলেট রপ্তানি করছে। এই পণ্যের রপ্তানিমূল্য ১ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ থেকে একসঙ্গে এত বড় চালান কখনো রপ্তানি হয়নি।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) আলোচিত পণ্যের জাহাজীকরণ শুরু হয়। অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি এটি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি।
উল্লেখ, বিলেট হচ্ছে ইস্পাতের মধ্যবর্তী পণ্য। আয়রন ওর ও স্ক্র্যাপ থেকে বিলেট উৎপাদন করা হয়, যা থেকে পরবর্তীতে ইস্পাতের ফিনিশড প্রোডাক্ট বা চূড়ান্ত পণ্য উৎপাদন করা হয়।
২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড চলতি বছরে বড় ধরনের সম্প্রসারণে গিয়েছে। কোম্পানিটি বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ইএএফ কোয়ান্টাম ব্যবহার করে নতুন ইউনিট স্থাপন করেছে। এই প্রযুক্তি একদিকে জ্বালানী সাশ্রয়ী, অন্যদিকে অধিক বিশুদ্ধ ইস্পাত উৎপাদনে সক্ষম।
সম্প্রসরিত ইউনিটসহ জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানার বার্ষিক বিলেট উৎপাদনক্ষমতা ১০ লাখ মেট্রিক টন। কোম্পানির ইস্পাত পণ্য (এমএস রড, ফ্ল্যাটবার, অ্যাঙ্গেল, চ্যানেল ইত্যাদি) উৎপাদনের পরও বিলেটের উৎপাদনক্ষমতা কিছুটা অব্যবহৃত থাকবে। তাই কোম্পানিটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিলেট বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে, যার অংশ হিসেবে চীনে বিলেট রপ্তানি শুরু হয়েছে।
রপ্তানিকৃত বিলেট জাহাজীকরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন এমপি বলেন, জিপিএইচ ইস্পাত দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। ২৫ হাজার টন বিলেট রপ্তানির মাধ্যমে এটি শুরু হলেও আগামীতে রপ্তানির পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, জিপিএইচ ইস্পাতের বিলেট রপ্তানির মাধ্যমে ইস্পাতের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ একটি সুসংহত অবস্থান তৈরি করে নেবে। দেশের ভাবমূর্তি আরও উন্নত হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরা একটু তৎপর হলে বিলেট ও ইস্পাত পণ্য রপ্তানির নতুন বাজার তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। বাণিজ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে সব সময় রপ্তানির জন্য নতুন বাজার ও নতুন পণ্য খোঁজার তাগিদ দিয়ে থাকেন। আজ প্রধানমন্ত্রীকে একটি বড় সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে, যে খবরটির জন্ম দিয়েছে জিপিএইচ ইস্পাত।
তিনি বলেন, চিন দিয়ে শুরু হলেও উদ্যোক্তারা অন্যান্য দেশেও এই পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করেন তিনি। তাছাড়া জিপিএইচ ইস্পাতকে দেখে দেশের অন্যান্য ইস্পাত কোম্পানিও উদ্বুদ্ধ হবে আশা করা যায়।
বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন, বিলেট রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা দেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
অনুষ্ঠানে জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রথমবারের মতো আমরা চীনে ২৫ হাজার মেট্রিক টন বিলেট রপ্তানি করছি। আজকের দিনটি আমাদের দেশের জন্য খুবই আনন্দের দিন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তা পেলে আগামী বছর ৭ থেকে ৮ কোটি ডলার মূল্যের বিলেট ও ইস্পাত পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হবে জিপিএইচ ইস্পাত।
তিনি বলেন, দেশের ইস্পাত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। প্রায় ৫০ শতাংশ উৎপাদনক্ষমতা অব্যবহৃত থাকছে। এটিকে কাজে লাগানোর একমাত্র উপায় রপ্তানিতে যাওয়া। ইস্পাত পণ্য রপ্তানিতে সরকারের নীতি সহায়তা পাওয়া গেলে বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তাতে দেশে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। রপ্তানির মাধ্যমে দেশে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আসবে। তাছাড়া প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগও আকৃষ্ট হবে।
তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে বিলেট ও ইস্পাত পণ্য রপ্তানিতে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, জিপিএইচ ইস্পাতের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর কবির, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল, পরিচালক মোঃ আশরাফ্জুামান, আব্দুল আহাদ, নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম এফসিএ উপস্থিত ছিলেন প্রমুখ।
Posted ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan