বিবিএ নিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 372 বার পঠিত
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষীদেরকে বিশেষ ঋণ দেবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক)। এই ঋণের আওতায় ১ হাজার ৬০০ জন লবণ চাষীকে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষিখাতসহ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ঋণ দেয়া হলেও লবণ চাষিদের কোনো প্রকার ঋণ দেয়া হয়নি। যদিও বিসিকের পক্ষ থেকে লবণ চাষ এলাকার সংশ্লিষ্ট সাত ব্যাংকে চাষিদের ঋণ দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। বিসিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, করোনার শুরুতে দেশে সাধারণ ছুটি চলছিল তখন লবণ উৎপাদন অব্যাহত রাখে চাষীরা। এতে প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপাদন হয়। তবে চাষিরা এর উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছে না। ফলে লবণের মূল্য উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেক। সেই সঙ্গে অবিক্রিত রয়েছে এতে করে দেশীয় কৃষিভিত্তিক লবণ শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে শিল্প লবণ আমদানি করে তা ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারজাত করায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে লবণ শিল্প।
চলতি বছরের মে মাসে কক্সবাজারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয় থেকে কক্সবাজারের অবস্থিত সাতটি ব্যাংকে লবণ চাষীদের ঋণ দেয়ার জন্য এক চিঠি দেওয়া হয়। তবে এসব ব্যাংক লবণ চাষীদের ঋণ দিয়েছে কি না জানতে চাইলে বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, এ তথ্য আমাদের জানা নেই। তবে আমরা বিসিকের পক্ষ্য থেকে লবণ চাষিদের সল্প সুদে ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তিনি জানান, ১ হাজার ৬০০ জন লবণ চাষিকে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে। ঋণের সময়কাল হবে ৬ মাসে। অর্থাৎ ৬ কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
তিনি আরও জানান, লবণ চাষিদের উৎপাদনের চেয়ে ১০০ টাকা কমে প্রতি মণ লবণ বিক্রি করতে হয়। বাজারে চাহিদা কম থাকায় দাম কম পাচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে ভোজ্য লবণ আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে কিছু ব্যবসায়ী শিল্প লবণকে ভোজ্য লবণ বলে বাজারজাত করছে। এতে দেশিও লবণ শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে।
মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, আমরা বিসিকের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি। তারা যাতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটাও জানিয়েছি।
তিনি জানান, চাষিদের কাছে গত বছরের উৎপাদকৃত ২ লাখ ৫ হাজার টন লবণ অবিক্রিত রয়েছে। এর মধ্যেই বর্তমানে চলছে লবণ চাষের ভরা মৌসুম। অন্যদিকে কারখানায় রয়েছে ১ লাখ ৫৩ টন লবণ অবিক্রিত রয়েছে। তবে চাষীদের এখন দুই দিকেই ক্ষতি হচ্ছে। একদিকে গত বছরের অবিক্রিত লবণ। অন্যদিকে উৎপাদনের চেয়ে দাম কম। আমরা জানিয়েছি দেশের লবণ শিল্প ও লবণ চাষিদেরকে রক্ষা করতে হলে লবণ আমদানি কমাতে হবে। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৫ লাখ মানুষ। কারণ লবণ চাষ থেকে শুরু করে কারখানা পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ লোক জড়িত। এটাই লবণ চাষিদের জন্য প্রথম ঋণ কিনা জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান জানান, ১৯৯৬ সালে একবার লবণ চাষিদের ঋণ দেয়া হয়েছিলো। সেই হিসেবে এই ঋণ হবে লবণ চাষিদের জন্য দ্বিতীয় ঋণ।
তিনি জানান, চলতি লবণ মৌসুমে ২৮ হাজার ৭৯১ জন লবণ চাষি ৫৭ হাজার ৭২২ একর জমিতে লবণ চাষ করছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন শিল্পখাতের ন্যায় লবণ শিল্পখাতও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মহেশখালী উপজেলার নলবিলা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হক জানান, বিগত ৪০ বছর ধরে তিনি লবণ চাষের সাথে জড়িত। লবণের উৎপাদন এখনো আশানুরুপ হচ্ছে না। এ পর্যন্ত তার জমিতে একর প্রতি লবণ উৎপাদিত হয়েছে ৫০ মণ। অথচ গতবছর এসময়ে উৎপাদন হয়েছিল একশ মণ।
বিভিন্ন শিল্প কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী তিনি লবণ জোগান দিতেন। গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে ওই সব কারখানার মালিক তার কাছ থেকে লবণ কিনছেন না। কারণ তারা আমদানিকারকদের কাছ থেকেই লবণ কিনছেন। ব্যাংকগুলোতে মে মাসের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ চাষিদেরকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে লবণ চাষকে একটি উপখাত হিসেবেও দেখানো হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় সরকার প্রদত্ত সুদ ক্ষতি পুনর্ভরণ করে লবণ চাষীদের জন্য রেয়াতি সুবিধায় ৪ শতাংশ সুদহারে ঋণ প্রদানের সুযোগ রয়েছে।
Posted ৪:৫৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | rina sristy