এস জেড ইসলাম | সোমবার, ২৩ আগস্ট ২০২১ | প্রিন্ট | 1767 বার পঠিত
পূর্বের প্রতিষ্ঠানের অব্যাহতিপত্র ছাড়াই কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাধারণ বীমাখাতের মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির লিমিটেডের বিরুদ্ধে। এর ফলে বীমা আইন লঙ্ঘন হওয়ায় সাবেক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের পক্ষ থেকে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ও বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএকে অবহিত করা হয়। এরপরও এ নিয়ে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তারা। এমনটাই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের শেষদিকে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের এসইভিপি ও গুলশান শাখা ইনচার্জ পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের দিলকুশা শাখা ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন মো. খলিলুর রহমান। এক্ষেত্রে পূর্বের কোম্পানির হিসাব-নিকাশ না বুঝিয়ে দিয়ে এবং ছাড়পত্র না নিয়েই মেঘনা ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেন, যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাছাড়া মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পর্ষদও এ অনিয়মে সম্পৃক্ত। তবে অনিয়মের বিষয়টি কেন দীর্ঘ পাঁচ বছর গোপন রাখা হলো তা নিয়ে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের দিকেও অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ।
চিঠিতে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স জানায়, ওই কর্মকর্তার নিকট কোম্পানির ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু তা পরিশোধ না করেই এবং ছাড়পত্র ব্যতীত তিনি মেঘনা ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেন। এরপর মেঘনার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে অভিযুক্ত খলিলুর রহমান গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের কাছে তার দেনার পরিমাণ জানতে চান। এর প্রেক্ষিতে ওই বছরেরই ২৮ নভেম্বর তাকে জানানো হয় কোম্পানি সর্বমোট ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা তার নিকট পাওনা রয়েছে। ওইদিনই মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একটি চেকের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা কোম্পানিকে প্রদান করে এবং বাকি টাকা পর্যায়ক্রমে প্রদান করা হবে বলে জানায়। কিন্তু টাকা তুলতে গেলে চেকটি ডিজঅনার হয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান ওই কর্মকর্তার হিসাবে চেকে উল্লিখিত পরিমাণের টাকা নেই। এরপর ফের খলিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স। কিন্তু সে সময় তিনি আর্থিক সমস্যায় আছেন এমনটা জানিয়ে টাকা পরিশোধে জন্য সময় চেয়ে নেন। কিন্তু এরপর দীর্ঘ ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও কোম্পানির কোন টাকাই আর পরিশোধ করেননি অভিযুক্ত খলিলুরর রহমান।
এ বিষয়ে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের সিইও আবু বকর সিদ্দিকীর সাথে কথা বললে জানান, আমি এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি দু’বছর হলো। কিন্তু বিষয়টি জেনেছি মাত্র কয়েকদিন আগে। এরপরই ওই কর্মকর্তাকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে। তবে দীর্ঘ ৫ বছর পর কেন ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স থেকে বিষয়টি সামনে আনা হলো তা নিয়ে কিছুটা সন্দিহান এই বীমাবিদ।
এছাড়া ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের সিইও তালুকদার মো. জাকারিয়া হোসেনের সাথেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ নিয়ে আমরা মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আমরা এবার আইডিআরএকে জানিয়েছি। তবে অভিযোগ দিতে ৫ বছর সময় লাগলো কেন- এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি। জবাবের পরিবর্তে কোম্পানির প্রশাসন বিভাগের ইভিপি আশরাফুল হক ঝন্টু’র সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন তিনি। তার পরামর্শ মোতাবেক ওই কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সার্বিক ঘটনা পর্যালোচনায় ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের কর্মকাণ্ডকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে এসব ঘটনাকে বীমা খাতের জন্য অশনিসংকেত হিসেবেই দেখছেন খাত বিশ্লেষকরা। তারা বলেন- একজন কর্মকর্তার কাছে দীঘ ৫ বছর যাবত একটি কোম্পানি এতোগুলো টাকা কিভাবে অনাদায়ী থাকে। এটি মূলত গ্রাহকদের প্রিমিয়ামের টাকা, যা বীমা কর্মকর্তার কর্তৃক গৃহিত হলেও কোম্পানিকে পরিশোধ করা হয়নি। বীমা আইনে এই বাকি ব্যবসা কঠোরভাবে বন্ধের নির্দেশ রয়েছে এবং এটা করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়ে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকায় দীর্ঘদিন যাবৎ লেখালেখি করলেও কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। তাদের মতে- এ বিষয়ে যদি প্রতিটি কোম্পানিতে আইডিআরএ নিরপেক্ষভাবে চিরুণী অভিযান পরিচালনা করে তবে হাজার কোটি টাকার প্রিমিয়াম গোপনের তথ্য বেরিয়ে আসবে।
Posted ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৩ আগস্ট ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy