নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট | 218 বার পঠিত
শেয়ারবাজারে বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জিকিউ বলপেনের ধারাবাহিক লোকসানের কারণ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখা হবে। একইসঙ্গে কোম্পানিটির অফিস ও কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ বিষয়টি এখনও জিকিউ বলপেন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, জিকিউ বলপেনের আর্থিক দুরাবস্থা নিয়ে কমিশনে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় সার্বিক দিক বিবেচনা করে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটির অফিস ও কারখানাও পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। শিগগিরই এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে অবহিত করা হবে। এ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে ৩০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর জিকিউ বলপেন প্রায় ৩০ বছর ভালো ব্যবসা করেছে। তবে ২০১২ সালের পর থেকে নানামুখী চ্যালেঞ্জের কারণে কোম্পানিটি মার্কেট শেয়ার হারাতে শুরু করে। মূলত কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি অব্যাহত কমে যাওয়ার এর অন্যতম কারণ। এতে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক লোকসান গুনছে কোম্পানিটি। তবে সম্প্রতি কোম্পানিটি তাদের মূল ব্যবসা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এরই মধ্যে নতুন ধরনের পণ্য বাজারজাত করা হয়েছে। এতে ভালো সাড়া মিলছে।
এদিকে জিকিউ বলপেনের অর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষেণে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি হয়েছিল ২২ কোটি ২৮ লাখ টাকায়। তবে আগের বছরের তুলনায় পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ায় কোম্পানির নিট লোকসান হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১.১৭ টাকা। সেই হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে।
২০১৬-১৭ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি নেমে আসে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকায়। তারপরেও ওই বছর কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছিল ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১.৬৬ টাকা। ওই বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল।
২০১৭-১৮ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি নেমে আসে ৭ কোটি ৯২ লাখ টাকায়। ফলে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয় ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ৫.১২ টাকা। ওই বছরও কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে।
২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি হয় ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার। সেই বছর কোম্পানির নিট লোকসান হয় ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ১.৭২ টাকা। ওই বছরও কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে।
সর্বশেষ ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি নেমে আসে ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকায়। সেই সময় কোম্পানিটির নিট লোকসান হয় ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। তখন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ৭.৬৪ টাকা। ওই বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে আলোচ্য হিসাব বছরে।
উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালে দেশের বাজারে বলপেন উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করে জিকিউ বলপেন। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৬ সালে। ৫০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৮ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ‘এ’ ক্যাটাগিরির কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮৯ লাখ ২৮ হাজার ৯১টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪১.৮৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.৪৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৫৬.৬০ শতাংশ। সোমবার (১১ অক্টোবর) ডিএসইতে জিকিউ বলপেনের শেয়ার সর্বশেষ ১২৪.১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
Posted ১২:০৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১
bankbimaarthonity.com | saed khan