নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২ | প্রিন্ট | 189 বার পঠিত
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একদিনে ১২টি ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি শেষে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ৩৩ আসামির ২৬ জনের সাজা কমে যাবজ্জীবনের রায় প্রদান। গত ৯ মার্চ প্রধান বিচারপতির বিশেষ উদ্যোগে এসব মামলার দ্রুত শুনানির জন্য ১১টি বেঞ্চ অবকাশকালী গঠন করেন। গত ২০ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অবকাশকালীন ১১টি বেঞ্চে শুনানির জন্য ৫২টি মামলার তালিকাও প্রকাশ করা হয়।
এরমধ্যে শুধু ৩০ মার্চ এক দিনেই ১২ টি মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি করা হয়। এতে বাদীপক্ষ যেমন দ্রুত ন্যায় বিচার পেল তেমনি কনডেম সেলে বন্দি কয়েদিদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত হলো বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। এসব মামলা শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবীরা অংশ নিচ্ছেন।
বিচারিক আদালত ২০১৬ সালের বিভিন্ন তারিখে ৩২ আসামিকে মত্যুদন্ড এবং এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। পরে নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলাগুলো হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা ফৌজদারি আপিল ও জেল আপিল করেন।হাইকোর্টে ১২টি মামলায় ৩২ মৃত্যুদন্ডের আসামির মধ্যে ৪ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল , দুইজনকে খালাস, ২৬ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং যাবজ্জীবন দন্ডিত আসামির দন্ড বহাল রেখেছেন।
অ্যাটির্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, অতীতে কখনো একসাথে এতগুলো ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চ ছিল না। এবার প্রধান বিচারপতি অবকাশকালীন এই বন্ধটাকে কাজে লাগিয়েছেন। ডেথ রেফারেন্সের বেঞ্চ গঠন করে দিয়ে গত দুই সপ্তাহে ৩০টিরও বেশি মামলার নিষ্পত্তি করেছেন। এর ফলে বিচার প্রার্থী মানুষ কিছুটা হলেও প্রতিকার পেয়েছেন। বলা যায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলো।
শুধু ৩০ মার্চের মামলার তথ্য:
২০১৩ সালের ১৪ মার্চ ঢাকার খিলগাঁওয়ে যৌতুক না দেওয়ায় কেরোসিনের আগুনে স্ত্রী পলি আক্তারকে হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত স্বামী ফারুক সিকদারকে মৃত্যুদন্ড দেন। শুনানি শেষে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
২০১৫ সালে তাস খেলাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা ছোট লতিফপুর এলাকায় কলেজ ছাত্র মাসুদ রানা (১৭) হত্যার দায়ে তারই দুই বন্ধু মো. পারভেজ ও অমিত হাসানকে বিচারিক আদালত মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন। শুনানি শেষে ওই আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর গাজীপুরে দশম শ্রেণীর স্কুলছাত্রী কবিতা মনি দাসকে হত্যার দায়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিক্রম চন্দ্র সরকারকে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় । শুনানি শেষে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের নাজিরপুরে মামা হেমলালকে খুনের দায়ে ভাগ্নে নিবাস চন্দ্র শীলকে মৃত্যুদন্ড দেন বিচারিক আদালত। হাইকোর্ট শুনানি শেষে নিবাসকে যাবজ্জীবন দিয়েছেন।
২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপরহণ করে মুক্তিপণ না পেয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে নারী পোশাক শ্রমিক রূপালী খাতুনকে (২৫) হত্যার দায়ে দুই আসামিকে মৃত্যুদন্ড এবং দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন বিচারিক আদালত। বিচারপতি মো. ইকবাল কবির ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত শ্রীপুর উপজেলার বরমী কাদীরাপাড়ার আব্দুল হেকিম মিয়ার ছেলে আবুল কালাম (৩২) ও একই এলাকার হাছেন আলীর ছেলে মো. ইকবাল হোসেন (২৫)। যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্তরা হলেন- ওই এলাকার ছবুর উদ্দিনের ছেলে আব্দুল লতিফ (২৬) ও মফিজ উদ্দিনের ছেলে মো. মোখলেছ মিয়া (২১)।
২০০৬ সালে জয়পুরহাট সদরের ধারকী গ্রামের আব্দুল মতিন হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত ৭ আসামিকে মৃত্যুদন্ড এবং এক আসামিকে যাবজ্জীবন দন্ড দেন। হাইকোর্টে এক জনের মত্যুদন্ড বহাল রেখে ৬ জনকে যাবজ্জীবন দিয়েছেন, আর যাবজ্জীবন দন্ডিত মাহবুব আলম বাবুর সাজা বহাল রেখেছেন। মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা আসামি জয়পুরহাট সদরের ধারকী গ্রামের মো. মাজিরউদ্দিন। যাবজ্জীবন কারাদন্ডিতরা হলেন- একই গ্রামের ওয়াজেদ আলী ওরফে তোরাফ, মো. চৈতুন মোল্লা, ছাবাদুল, মো. আনু, আবু হাসান দিলীপ, মন্টু মিয়া।
২০০৮ সালের ১৭ মার্চ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ডেউয়াতলা গ্রামে অখিল বৈরাগীকে হত্যার দায়ে তার ভাই ভবসিন্ধু বৈরাগীকে বিচারিক আদালত মত্যুদন্ড দেন। বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের বেঞ্চ তার মত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখেন।
২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোয়ারী ইউনিয়নের কামারদহ গ্রামে শিশু ইয়াসিন আরাফাত ইমন(৮) হত্যায় বাবা ইমদাদুল হক মিলন ও সৎ মা নাহিদা বেগমকে মৃত্যুদন্ড দেন বিচারিক আদালত। হাইকোটে তাদের যাবজ্জীবন দন্ড দেন।
২০১৪ সালের ১৭ মে বগুড়ায় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার নাফিজ সিয়ামকে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি ও হত্যার দায়ে আল আমিন সোহাগ নামে এক যুবককে বিচারিক আদালত মৃত্যু দেন। হাইকোর্টে সোহাগকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন।
২০০৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর এরশাদ নগরে চাঁদার দাবিতে মোকছেদ আলী সেন্টু নামের এক ব্যবসায়ীকে হত্যার দায়ে বিচারিক আদালত ৪ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেন। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চে আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন । দন্ডপ্রাপ্তরা টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকার মো. রুবেল ওরফে টাইগার রুবেল (৩৫), একই এলাকার বাবু (৩২) ও আশরাফ আলী (৩০) এবং টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার ছলেমান (৩১)।
২০০৮ সালের ৯ মার্চ শিক্ষানবিশ আইনজীবী ফিরোজ্জামান ওরফে সোহেলকে (২৮) গাজীপুরের দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকায় কুপিয়ে হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত ৫জনকে মৃত্যুদন্ড দেন। বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ একই পরিবারের তিথী ও সজলের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেন বহাল, আমেনা ও বাপ্পীর যাবজ্জীবন এবং এবং বাদলকে খালাস দেন।
২০১৩ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা নরসিংদী শহরে ৬ বছরের শিশু হাসিবুল হাসান অয়নকে অপরহরণ করে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩ আসামিকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন। আর এক আসামিকে ৭ বছরের কারাদন্ড এবং একজনকে খালাস দেন।
৫ আসামির মধ্যে সজিব খান (২২), শাকিল মিয়া (১৮), ইমরানকে (২০) যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। শামীম ওসমানকে (১৯) সাত বছর এবং রুবেল মিয়াকে (১৮) খালাস দেন। আইনজীবীরা বলছেন,আসামীদের কম বয়স বিবেচনা,চাক্ষুষ সাক্ষী না থাকা, সাক্ষীদের পরস্পরবিরোধী সাক্ষ্যের কারণে আসামীদের দন্ড কমিয়েছেন হাইকোর্ট। আর সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় দুইজনকে খালাস দিয়েছেন।
Posted ৬:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy