বিবিএনিউজ.নেট | বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 552 বার পঠিত
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতারা (ডিসিসিআই) ধাপে ধাপে করপোরেট করহার কমানো ও দ্বৈত কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি মানুষের আয় ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় আগামী বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোরও প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলনকক্ষে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন ডিসিসিআই নেতারা। আলোচনায় একই ধরনের প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) নেতারাও।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় আয়কর ও ভ্যাট খাতের ২০টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি ওয়াসামা তাসীর। এ সময় এনবিআরের আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কনীতির সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ডিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী, সহসভাপতি ইমরান আহমেদ, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজসহ দুই সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
করপোরেট করহার কমানোর বিষয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে করপোরেট করহার অনেক বেশি। এখানে শেয়ারবাজারে লিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার ভিয়েতনামের তুলনায় ১৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ার তুলনায় ১১, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের তুলনায় ১০, পাকিস্তানের তুলনায় ৬ এবং ভারত ও ফিলিপাইনের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি।
শেয়ারবাজারের তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ করপোরেট করহার কমিয়ে আগামী তিন অর্থবছরে যথাক্রমে ২৫, ২৩ ও ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি ওয়াসামা তাসীর।
একইভাবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পাানিগুলোর করহার আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে কমিয়ে ২০, ১৭ ও ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে ডিসিসিআই।
এদিকে ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা রয়েছে। কিন্তু ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওয়াসামা তাসীর বলেন, সাধারণ মানুষের জীবনধারণ ব্যয় বেড়েছে ও ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে করহার কমালে মানুষ কর প্রদানে উৎসাহিত হবে। এ সময় করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব বলেও উল্লেখ করে তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতি আগামী অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা সর্বনিম্ন ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করে অন্যান্য ব্যক্তিশ্রেণীর করহারও কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেন।
বর্তমানে নিট সম্পদ ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সার চার্জ দিতে হয় না। এ সীমা বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন ডিসিসিআই সভাপতি। সেই সঙ্গে অন্যান্য স্তরেও করহার কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ কর কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং তা চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করেছে ডিসিসিআই। নন-সাবসিডিয়ারি কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর দ্বৈত কর বিলুপ্ত করারও দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠন।
একই আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও তরুণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বাজেটে বিশেষ ব্যবস্থা রাখার দাবি জানান। তরুণ উদ্যোক্তাদের ন্যূনতম পাঁচ বছর কর অবকাশ সুবিধা এবং ৫ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কর্মসংস্থান করা প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ কর সুবিধা দেয়ার দাবি জানান তিনি। এ সময় বিসিআইয়ের পক্ষে কর রেয়াত নিশ্চিত, আয়কর রিফান্ড পেতে হয়রানি লাঘব, ডিভিডেন্ডের দ্বৈত কর প্রত্যাহারসহ ১১০টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশে করপোরেট করহার বেশি স্বীকার করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত বাজেটে করপোরেট করহারে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে। পর্যায়েক্রমে তা আরো কমানো হবে। আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত অনেক কম। এ কারণে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণে বিদ্যমান করদাতাদের ওপরই অধিক নির্ভর করতে হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উপজেলা পর্যায়ে কর বিভাগ চালুর বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
Posted ১:০৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed