নিজস্ব প্রতিবেদক: | বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 662 বার পঠিত
দেশের স্টক মার্কেটে গণহারে কোম্পানিগুলোর দরপতনে বিপদ ঘন্টার আভাস পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এই অবস্থার দ্রুত উত্তরণে ফের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এসময় প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বন্ধের দাবিসহ বাজার স্থিতিশীলতায় ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন বিনিয়োগকারীরা।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে ধরনের জাং শেয়ার এসেছে, অস্থিরতা সৃষ্টিতে তা অনেকাংশেই দায়ী। এক সময়ে যে শেয়ারগুলো ১০ টাকা অভিহিত মূল্যসহ ৩০ টাকায় কিনতে হতো, এখন তা অভিহিত মূল্যেরও নিচে নেমে গেছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, সেটাও বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের মতে, অর্থনীতির সব সূচকই ভালো। তারপরও পুঁজিবাজার ভালো নেই। বাজারে তারল্য বা নগদ অর্থের সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। ক্রমাগত লোকসান কমাতে শেয়ার বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন। যে কারনে বাড়ছে শেয়ার বিক্রির চাপ। ফলে তৈরী হচ্ছে আস্থা সংকট।
সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচকের ৩৩৫ পয়েন্ট অবনতি হয়েছে। আর লেনদেন নেমেছে তলানিতে। ডিএসই’র এক পরিচালকের ভাষ্যমতে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের ধসের চেয়েও ভয়াবহ। প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা বের হয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে স্বাভাবিক হচ্ছে না বাজারের গতি।
বিক্ষোভরত এক বিনিয়োগকারী বলেন, লাভের প্রত্যাশায় বিনিয়োগ করেছিলাম, এখন দেখছি শুধুই লোকসান। পরিসংখ্যানও যেন সে কথাই বলছে। গত এক মাসে পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে প্রায় সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা। যেখানে প্রতিদিন ৩৫০ কোটি টাকা লেনদেন কমেছে। অথচ আগের মাসেও লেনদেন হয়েছিল ৭০০ কোটি টাকা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এই দরপতনের পেছনে একটি চক্রের কারসাজি রয়েছে। একটু একটু করে পুঁজি শেষ হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। তবে পতন ঠেকাতে বিএসইসি বা ডিএসই কেউই নিচ্ছে না পদক্ষেপ।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী জানান, অনেকগুলো কারণে পুঁজিবাজারে পতন হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। বাজারে পতন হলেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের শেয়ার বিক্রির প্রবণতা দেখা যায়, যা পুঁজিবাজারকে নেতিবাচক অবস্থায় নিয়ে যায়। তিনি বলেন, তারল্য সমস্যা সমাধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আসতে হবে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু বিধিনিষেধ আছে। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারকে কিভাবে স্বাভাবিক অবস্থা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থায় পরিনত করা যায়, তা নিয়ে সভা করেছি। এজন্য সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থারও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, বাজারের এমন অবস্থায় কেউ কোনো কথা বলছেন না। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আইসিবি থাকলেও তাদের কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না। বিএসইসি থেকেও বাজারের জন্য কোনো নির্দেশনা আসছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সম্পৃক্ত থাকলেও পুঁজিবাজার উন্নয়নে তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পুঁজিবাজারের এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা কোন দিকে যাবেন, সেটি স্পষ্ট নয়; যা বাজারকে আরও নেতিবাচকের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
Posted ৯:১২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed