• ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের ভ্যাট

    বিবিএনিউজ.নেট | ১৩ জুন ২০১৯ | ১২:৩২ পিএম

    ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের ভ্যাট
    apps

    আগামী অর্থবছরে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের ভ্যাট বা মূসক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। এর পরিমাণ এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এ লক্ষ্য অর্জনে ঢালাওভাবে নতুন ভ্যাট আরোপের পরিবর্তে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এত দিন হিসাবের চেয়ে কম ভ্যাট দিয়েছে বা একেবারেই দেয়নি তাদের কাছ থেকে আদায়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিছু খাতে, বিশেষভাবে তামাক, বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল, মদ খাতে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তৈরি পোশাক খাত, আবাসন, ওষুধ, সিরামিক, প্রাকৃতিক গ্যাস, অটোমোবাইল, পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আদায়ে গতি আনার চেষ্টা থাকছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

    সূত্র মতে, একই সঙ্গে আয়কর ও শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ছে। আয়করের লক্ষ্য অর্জনে করদাতার সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশে উন্নীত করার হিসাব কষা হয়েছে। শুল্ক খাতে বছরে মিথ্যা ফাঁকি বাবদ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি এড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে।
    আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের তিন খাত—আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক মিলিয়ে এনবিআরের জন্য তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা যায়। এটি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি।

    গত পাঁচ বছর ধরেই এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি রয়েছে। এবার ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। গত ৯ মাসে এনবিআরের আদায়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। তা সত্ত্বেও এনবিআরের আকাশছোঁয়া লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।
    তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর ঘাটতির পরও এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোয় সিদ্ধান্ত অবাস্তব। এতে অর্থনীতির আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হবে।’

    তবে এনবিআরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করছেন, আগের যেকোনো বাজেটের তুলনায় আগামী দিনে রাজস্বজাল বিস্তারে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দ্রæত রাজস্বের আওতায় আসবে। এতে আদায় বাড়বে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ঘাটতি হবে না।
    এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগামীতে রাজস্বের আওতা বাড়িয়ে এবং রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা করা হবে।’


    চলতি অর্থবছরের শুরুতে ভ্যাট খাতে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, আয়কর এক লাখ দুই হাজার ২০১ কোটি টাকা এবং শুল্ক ৮৪ হাজার কোটি টাকা ধার্য করা হয়। এই তিন খাত মিলিয়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। ঘাটতির মুখে এ লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ১৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি আছে গড়ে ৭ শতাংশ।

    চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত ভ্যাট। অর্থবছরের শুরুতে এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে সবচেয়ে বেশি ছয় হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় এক লাখ চার হাজার কোটি টাকা।
    আয়করে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্য ৯৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। শুল্ক খাতে ৮৪ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

    ২০১৯-২০ অর্থবছরে এনবিআরকে এবারের চেয়ে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় করতে হতে পারে। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়ে ১৭ শতাংশ বা প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে ভ্যাট খাতে এক লাখ ১৭ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা আদায়ের কথা রয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। আয়কর খাতে এক লাখ ১৫ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা আদায়ের কথা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্য থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। আর শুল্ক খাতে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর কথা ১৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে শুল্ক খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য হতে পারে ৯২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।

    গত এপ্রিলে এনবিআরে চিঠি পাঠিয়ে সারা দেশে ভ্যাট প্রদানে সক্ষম কিন্তু দিচ্ছে না এমন প্রায় এক কোটি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এনবিআরের আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী জুলাই থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরের পাড়া-মহল্লায় হাজির হয়ে ভ্যাট দিচ্ছে না এমন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছে। সমান গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় রাজস্ব দফতর স্থাপন করে ভ্যাট প্রদানে সক্ষম প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটজালে আনতে বলেছে। আগামী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর ৫০ লাখ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়মিত ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। শিল্পের বিভিন্ন খাতে সুবিধা দিয়ে আদায়ে গতি আনার কৌশল করা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে শিল্পে অধিক ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি শুল্ক কমানো হচ্ছে। দেশি শিল্পের সুরক্ষা হিসেবে বহাল থাকা সম্পূরক স্তরে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। কর অবকাশ সুবিধা বহাল রাখা হচ্ছে। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের আওতা বাড়িয়ে আবাসন খাতের সঙ্গে শিল্পে বিনিয়োগের সুবিধা রাখা হয়েছে। পুঁজিবাজারে ছাড় থাকছে। টার্নওভার করের সীমা বাড়িয়ে তিন কোটি টাকা ধার্য করে হার ৩ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং কম ব্যবহৃত কিছু পণ্য নিম্ন হার থেকে উচ্চ হারে আনা হচ্ছে। শিল্প বিকাশে বিভিন্নভাবে রাজস্ব ছাড় দেওয়ায় সুফল হিসেবে বিনিয়োগ বাড়বে। ফলে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে অনলাইন ও ইফডি যন্ত্র সরবরাহ করা হবে।

    অদূর ভবিষ্যতে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হিসেবে আয়কর নির্ধারণের পরিকল্পনার কথা রয়েছে প্রতিবেদনে। করদাতা ২-২.৫ শতাংশ থেকে ৫-৬ শতাংশে উন্নীত করার হিসাব করা হয়েছে। আগামী দিনে করদাতাকে রাজস্ব দফতরে হাজির হয়ে করজালে আসতে হবে না বরং বাড়ির দরজায় হাজির হয়ে করদাতাকে ইটিআইএন দেওয়া হবে। বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি হয় মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রফতানিতে। শুল্ক খাতে মিথ্যা ঘোষণা ঠেকাতে প্রত্যেক বন্দরে স্ক্যানিং যন্ত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করাসহ অনলাইনে আমদানি-রফতানিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ১২:৩২ পিএম | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০১৯

    bankbimaarthonity.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    রডের দাম বাড়ছে

    ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

    December 2023
    S S M T W T F
     1
    2345678
    9101112131415
    16171819202122
    23242526272829
    3031  
  • ফেসবুকে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি