| ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ৩:১৬ অপরাহ্ণ
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম বিবেচনা করা হয় স্বর্ণকে। বিশেষত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সময় মূল্যবান ধাতুর বাজারে বিনিয়োগ বেড়ে যায়। ২০১৮ সালেও অনেকটা একই চিত্র দেখা গেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি তুলনামূলক শ্লথ হয়ে আসা, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার আলোচনা এগিয়ে নেয়া, ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় আরো জটিল হয়েছে, বেড়েছে অনিশ্চয়তা। এর প্রভাব পড়েছে স্বর্ণের বাজারে। মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় চাঙ্গা হয়েছে। ২০১৮ সালে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৩০০ টন ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা পাঁচ বছরের গড়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গোল্ড ডিমান্ড ট্রেন্ডস শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৩৪৫ টন, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা ছিল ৪ হাজার ১৬০ টন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়েছে ১৫৮ দশমিক ১ টন। গত পাঁচ বছরে স্বর্ণের গড় বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৩৪৭ দশমিক ৫ টন। বিদায়ী বছরে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে স্বর্ণ কিনেছে। এর প্রভাব পড়েছে মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধিতে। এর জের ধরেই ২০১৮ সালের স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে পাঁচ বছরের গড়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদার ব্যাখ্যায় পুরো খাতকে চারটি ধাপে ভাগ করেছে ডব্লিউজিসি।
প্রথমত, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর চাহিদা। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সরকারি রিজার্ভে ৬৫১ দশমিক ৫ টন স্বর্ণ যোগ করে। এটি ছিল ২০১৭ সালের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি। গত পাঁচ দশকের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় এটি মূল্যবান ধাতুটির সর্বোচ্চ চাহিদা। চীন, পোল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও কাজাখস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সময় সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ কিনেছে।
দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে স্বর্ণালঙ্কার। ২০১৭ সালে এ খাতে স্বর্ণের চাহিদা ছিল ২ হাজার ২০০ টন। ২০১৮ সাল শেষে এ চাহিদা অপরিবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ভোক্তা দেশ চীনের স্বর্ণালঙ্কার খাতে চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৬৭২ দশমিক ৫ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬৫১ দশমিক ২ টন। অন্যদিকে গত বছর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ভোক্তা দেশ ভারতের স্বর্ণালঙ্কার খাতে মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৫৯৮ টনে। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৬০১ দশমিক ৯ টন।
তৃতীয় ধাপে স্বর্ণভিত্তিক ইটিএফ (এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড) খাতে ২০১৮ সালে মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫৯ দশমিক ১ টনে। ২০১৭ সালে এ খাতে স্বর্ণের চাহিদা ছিল ১ হাজার ২৫১ দশমিক ৬ টন। এ সময় বার ও কয়েন হিসেবে মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ১ হাজার ৪৫ দশমিক ২ টন। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী বার ও কয়েন হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা ৪ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯০ দশমিক ২ টনে দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ ধাপে রয়েছে প্রযুক্তি খাত। ডব্লিউজিসির হিসাব অনুযায়ী, বিদায়ী বছরে প্রযুক্তি খাতে স্বর্ণের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৩৩৪ দশমিক ৬ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে এ খাতে মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা ছিল ৩৩২ দশমিক ৬ টন। গত বছর প্রযুক্তি খাতের মধ্যে শুধু ইলেকট্রনিকস শিল্পেই ২৬৮ দশমিক ৩ টন স্বর্ণ ব্যবহার হয়েছে।
ডব্লিউজিসির হিসাব অনুযায়ী , বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানামুখী অনিশ্চয়তার জের ধরে বিদায়ী বছরে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণের বিক্রি বেড়েছে। বিশেষত বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণের চাহিদা ১৯৭১ সালের পর সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। এ পরিস্থিতি মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ৩:১৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed