শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইনে কেনাকাটা: মান নিয়ন্ত্রণে নজরদারি নেই

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   561 বার পঠিত

অনলাইনে কেনাকাটা: মান নিয়ন্ত্রণে নজরদারি নেই

দেশে অনলাইনে কেনাকাটার পরিমাণ বছরে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা না থাকায় লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং মান নিয়ন্ত্রণে নজরদারির অভাবে থেকে যাচ্ছে।

অনলাইনের ক্রেতারা এখনো পণ্য হাতে পাওয়ার পর নগদ টাকায় মূল্য পরিশোধে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, যাকে বলা হয় ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’। কিন্তু তাতে লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায় না, কর বা শুল্ক ফাঁকির সুযোগ থেকে যায়।

আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা না থাকায় গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা, নিম্নমানের বা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সরবরাহের মত অভিযোগের ক্ষেত্রে ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বাংলাদেশে অন-লাইনে কেনাবেচার শুরু মূলত ২০১১ সাল থেকে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ (এনএসপিবি) চালু করলে ব্যাংকের মাধ্যমে অন-লাইনে মূল্য পরিশোধের পদ্ধতিটি চালু হয়।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, দেশে অনলাইনে ব্যবসার আকার এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

দেশে এখন প্রায় দুই হাজার ই-কমার্স সাইট এবং ৫০ হাজার ফেইসবুক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন দেশের মধ্যে ডেলিভারি হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার পণ্য।

এই মুহূর্তে অন-লাইনে বিক্রি হওয়া পণ্যের ৮০ শতাংশ যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে। তবে ফেইসবুকের মাধ্যমে অনেকে যেভাবে পণ্য বিক্রি করছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার আইনগত বৈধতা নেই।

এ খাতকে নিয়মের মধ্যে আনতে সরকার ২০১৮ সালে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা’ করলেও ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্সের জন্য কোনো নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এখনও তৈরি হয়নি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, “ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স যাই বলুন না কেন, যদি চান যে সব নিয়মের মধ্যে চলবে, তাহলে একটা মনিটরিং অথরিটি লাগবেই।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “এই মুহূর্তে তেমন তো রেগুলেটারি অথরিটি আমাদের নেই। তবে আমারা এ ব্যাপারে কথাবার্তা বলছি। খুব তাড়াতাড়ি আমরা কিছু একটা করব। আমাদের চিন্তা ভাবনায় আছে।”

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের দুই শিক্ষার্থী গতবছর অক্টোবরে একটি সমীক্ষা চালান। দেশের অন-লাইন বাজারের হাল হকিকত বুঝতে ১০৬ জন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন তারা।

উত্তরদাতাদের ৮০ শতাংশ মনে করেন, অনলাইন কেনাকাটায় সময় বাঁচে। আবার ৬০ শতাংশ বলেছেন, সব দিক হিসাব করলে অন-লাইন কেনাকাটায় সময় বেশি খরচ হয়, আর এটা ঝুকিপূর্ণও বটে।

জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় সবাই মনে করেন, অন-লাইনে কেনাবেঁচা একটি নতুন কনসেপ্ট এবং গ্রাহকের সুবিধার জন্য পেমেন্ট সিস্টেম বাড়ানো প্রয়োজন।

মাছ, মাংস, সবজি, ফলমূল থেকে শুরু চাল, ডাল, কাপড়, প্রসাধনী, আসবাবপণ্য, বই, ইলেকট্রনিক পণ্য, গয়না এমনকি মোটর গাড়িও এখন অন-লাইনে বিক্রি হচ্ছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, অনলাইনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে পোশাক, প্রসাধনী ও গয়না। মাছ, মাংস আর সবজির মত কাঁচা পণ্যের বিক্রি সবচেয়ে কম।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ২৫ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে যাদের বয়স, বাংলাদেশে মূলত তারাই অনলাইনে পণ্যের প্রধান ক্রেতা।

অন-লাইনে পণ্য বিক্রি করে এরকম ৮১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জরিপকারী শিক্ষার্থীরা দেখতে পেয়েছেন, একটি মাত্র পণ্য বিক্রি করেন- এমন ওয়েবসাইটের বিক্রি ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর যারা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন- তাদের বিক্রি বেড়েছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

অনলাইন পণ্যের ক্রেতাদের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ক্রেতাদের ৪০ শতাংশের মাসিক আয় ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে।

অনলাইনে পণ্য কেনার কারণ হিসাবে ক্রেতারা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ কল্যাণে ডিগ্রিধারী একজন নারী অনলাইনে মেয়েদের পোশাক বিক্রি করছেন। পাশাপাশি ঢাকার দুই প্রান্তে তার দুটি দোকানেও প্রচলিত পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রি হয়। দুই দোকান মিলিয়ে তার কর্মচারী চারজন। আর অনলাইনে তার সঙ্গে কাজ করেন ১৬ জন।
তিনি বলেন, “আমার দুই দোকানে দিনে যদি ৪০টি পোশাক বিক্রি হয়, অনলাইনে হয় ১৬০টি।”

ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করেন এরকম এক নারী বলেন, “অনলাইনে তো ভ্যাট বা ট্যাক্সের কোনো ঝামেলা নেই। ঘরে বসে করা যায়, তাই লাভ থাকে বেশি।”

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফোলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, “যারা বৈধ ব্যবসা করতে চায়, তাদের সে সুযোগ দিতে হবে, উৎসাহ যোগাতে হবে। উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে আগ্রহী করতে হবে। আর যারা বড় ব্যবসা করছে, কিন্তু ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের ধরতে হবে।”

দেশে বড় যে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো এখন ব্যবসা করছে, তাদের মধ্যে দারাজ অন্যতম। তারাও মনে করে, দেশে ই-কমার্সের বিকাশের স্বার্থেই একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা জরুরি।

দারাজ অনলাইন শপিং এর হেড অব পাবলিক রিলেশন্স সায়ন্তনী তিশা বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থা না থাকায় অনেক সময় ই-কমার্স সংশ্লিষ্টদের দ্বিধায় পড়তে হয়- তারা কার কথা শুনবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় না আইসিটি মন্ত্রণালয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলে উভয়পক্ষেই স্বচ্ছতা রাখা সহজ হবে, যা ই-কমার্স শিল্পকে ভবিষ্যতে আরও জোরদার করবে।”

নিজেদের ব্যবসার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিশা বলেন, দারাজে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ পদ্ধতিতে দাম পরিশোধের হার প্রায় ৬০ শতাংশ। আর ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতা ‘প্রি-পেমেন্ট’ পদ্ধতিতে পণ্যের দাম আগাম পরিশোধ করেন।

এই ৪০ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতা মূল্য পরিশোধ করেন ডেবিড বা ক্রেডিট কার্ডে। বাকি ৩০ শতাংশ হয় মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে। বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের সময় প্রি-পেমেন্টের হার বাড়ে বলে জানান তিশা।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:২৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11188 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।