বুধবার ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪ হাজার কোটি টাকা লোকসানে বাপেক্স

অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ৩১ আগস্ট ২০২২   |   প্রিন্ট   |   77 বার পঠিত

অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ প্রয়োজন

রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্সে) বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের (জিডিএফ) দেনার দায়ে আরও বেশি বির্তকে জড়াচ্ছে বাপেক্স। বাপেক্সের কর্তাব্যক্তির অদক্ষতা, উদাসিনতা ও নানা অনিয়মের কারণে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাপেক্সের ঋণ খেলাপির কারণসহ নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ রয়েছে, গত ২৭ জুন অনুসন্ধান কূপ খনন উদ্বোধনের নামে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন এমডি মোহাম্মদ আলী। কূপ খনন উদ্বোধনে পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) ও পরিচালক (পরিকল্পনা) অংশ গ্রহণের কথা থাকলেও নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির আভাস পেয়ে তারা অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। পরে এমডি মোহাম্মদ আলী নিজেই কূপ খনন উদ্বোধন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে , গত গত ১০ বছরে ১৯ প্রকল্পের অনুকূলে বাপেক্স ঋণ নিয়েছে তিন হাজার এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু ঋণের কিস্তি বাবদ ফেরত দেয়া অর্থের পরিমাণ খুবই কম। বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্ত করলে বাপেক্সের ঋণ খেলাপির কারণসহ নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির পুরো চিত্র ফুটে উঠবে।

সূত্র মতে, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম এবং জনবল নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। এর আগেও অনেক অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। গত ৩ বছরে ৫ শতাধিক কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগে নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতি অভিযোগে নিজস্ব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয় বিভিন্ন দপ্তরে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের অনেকের অভিজ্ঞতার সনদপত্র ভুয়া। কিন্তু কমিটির সুপারিশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি চাপাপড়ে রয়েছে। আরও অভিযোগ উঠেছে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বাপেক্সের বিভিন্ন শাখায় কার্যক্রম। ১৪২ জন কর্মকর্তাসহ পাঁচ শতাধিক জনবল নিয়োগ হয়েছে এমডি মোহাম্মদ আলীর পরামর্শে।

সূত্র মতে, গ্যাসের অনুসন্ধান-উত্তোলনে সহায়তা করার জন্য গ্রাহকের অর্থে ২০০৯ সালে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গড়ে তোলা হয়। নীতিমালা তৈরির পর এই তহবিল থেকে ২০১২ সাল থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালাতে সুদসহ এই অর্থ ১০ বছরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। তবে বাপেক্স যা নিচ্ছে তা থেকে ফেরত দিতে পারছে খুব সামান্যই।

গত কয়েক বছরে বাপেক্স তিন হাজার এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এই টাকায় ১৯টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরও সাত প্রকল্পের জন্য তারা ঋণের আবেদন করতে যাচ্ছে। মাত্র দুই ভাগ সার্ভিস চার্জ দিয়েই এই ঋণ পরিশোধ করা যায়। ঋণ পরিশোধের সময় পাওয়া যায় ১০ বছর। এরপর আরও দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড থাকে।

সূত্র মতে, শ্রীকাইল নর্থ এ-১ অনুসন্ধান কূপ একটি ডিরেকশনাল কূপ। এর টার্গেট গভীরতা মূলকূপ থেকে প্রায় ৭০০ মিটার দূরে কূপ খননের জন্য বিশেষ ধরনের একটি যন্ত্র। যন্ত্রটি ক্রয়ের এখনও চুক্তি হয়নি। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এলসি খোলার ন্যূনতম তিন মাস পরে যন্ত্রটি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ আরও তিন থেকে চার মাস যন্ত্রের জন্য খনন কাজ শুরু করা যাবে না। কিন্তু কুপটি ইতিমধ্যে উদ্বোধন করায় সেখানে ব্যবহৃত রিগ বিজয়-১১ এর জেনারেটরের জন্য প্রতিদিনের ডিজেল, অস্থায়ী শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, স্থায়ী লোকবলের জন্য প্রতিদিনের ভোজনভাতাসহ দৈনন্দিন যানবাহন ব্যয় টিএডিএ ইত্যাদি বাবদ পূর্ণাঙ্গ খনন ফিল্ডের খরচ বহন করতে হবে।

প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলীর পিএস আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘স্যার (মোহাম্মদ আলী) বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তার বক্তব্য নিতে হলে, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর যোগাযোগ করুন। আবু বকর সিদ্দিক বাপেক্স এবং ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি’র বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে বাপেক্সের সঙ্গে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর করা যৌথ উদ্যোগ (জয়েন্ট ভেনচার) চুক্তি বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পেট্রোবাংলার সঙ্গে নাইকোর গ্যাস সরবরাহ ও কেনাবেচার চুক্তিও বাতিল করেছেন উচ্চ আদালত। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় প্রদান করেন।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৩২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩১ আগস্ট ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।