শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমরা চাই কড়া নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে বীমা খাত পরিচালিত হোক -সাক্ষাৎকারে বদরুল আলম খান, চেয়ারম্যান, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স

  |   বুধবার, ০৯ মার্চ ২০২২   |   প্রিন্ট   |   303 বার পঠিত

আমরা চাই কড়া নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে বীমা খাত পরিচালিত হোক -সাক্ষাৎকারে বদরুল আলম খান, চেয়ারম্যান, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স

স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের পর সরকারি চাকরিতে যোগ না দিয়ে, উদ্যোক্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন বদরুল আলম খান। সামনে ছিল দেশগড়ার মহান লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০০১ সালে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন গাজী গ্রুপে। সেই থেকে এই গ্রুপের ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের সঙ্গে নিরলসভাবে যুক্ত রয়েছেন তিনি। ২০১৭ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন যমুনা লাইফ ইন্সু্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পদে। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শী ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি। যমুনা লাইফসহ বাংলাদেশের বীমা খাতের সমস্যা-সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও অগ্রগতি নিয়ে সম্প্রতি ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-নাসির আহমাদ রাসেল।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তাদের একজন আপনি। কোন লক্ষ্যকে সামনে রেখে এটি আপনারা প্রতিষ্ঠা করলেন?

বদরুল আলম খান: যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। আমরা এটিকে অত্যন্ত সেবামূলক কাজ মনে করেছি। এই ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে আমরা জনগণকে সেবা দিচ্ছি। পৃথিবীর সবখানে লাইফ ইন্স্যুরেন্স সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আমরা মনে করেছি, এদেশের মানুষও একদিন বীমার প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং বীমাকে গ্রহণ করবে। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাবে।

২০১৪ সালে সরকার যখন চতুর্থ প্রজন্মের বীমা কোম্পানি গঠনের সুযোগ দেয়, তখন এটি আমরা সাদরে গ্রহণ করি। ইতোমধ্যে আমাদের বিনিয়োগে সাধারণ বীমা শিল্পে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় জীবন বীমা শিল্পেও আমরা উদ্যোক্তা হই। দেশের মানুষের মাঝে জীবন বীমার সুফল ছড়িয়ে দেয়া আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। যে কারণে আমরা কোয়ালিটি ইন্স্যুরেন্সের কথা বলছি। কোয়ালিটি ইন্স্যুরেন্সের অর্থ হচ্ছে-গ্রাহক যাতে ভাল পলিসি গ্রহণ করতে পারেন এবং বীমা দাবি যেন সঠিকভাবে নিষ্পত্তি হয়।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বেকারত্ব দূরীকরণে বীমা খাত কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

বদরুল আলম খান: জীবন বীমা বেকারত্ব দূরীকরণে অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি।
অন্য যে কোনো পেশায় থেকেও বীমা পেশার সাথে সম্পৃক্ত হওয়া সম্ভব। অন্য যে কোনো পেশাজীবী ব্যক্তি, যে কোনো জায়গায় থেকে চারপাশের সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বীমা পেশায় কাজ করতে পারেন। অর্থনৈতিকভাবেও যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি বেকারত্ব দূরীকরণে যথেষ্ট কার্যকর। যে কোনো উদ্যোগী মানুষ, চারপাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ী ব্যক্তিদেরও এখানে কাজে লাগাতে পারেন।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: একজন সফল শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশের বীমা খাতে আপনি কতটা সম্ভাবনা দেখছেন?

বদরুল আলম খান: অতীতে দেশজ বীমা কোম্পানি সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা ছিল। ধীরে ধীরে সচেতনতা বাড়ছে। এর ফলে আশা করছি দু’য়েক বছরের মধ্যে যথেষ্ঠসংখ্যক মানুষ বীমা গ্রহণ করতে আগ্রহী হবেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে মানুষও অনেক বেশি সঞ্চয়ের দিকে আগ্রহী হবেন। এতে বীমা খাতও এগিয়ে যাবে। বীমায় এখন যারা আছেন তারা সুশিক্ষিত এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা মানুষের কাছে সঠিকভাবে বীমাকে উপস্থাপন করতে পারছেন। যেটি অতীতে ছিল না। এর ফলে জিডিপিতে বীমার কন্ট্রিবিউশন বেড়ে যাবে। তবে এটি অর্জন করতে মানুষকে আরো বেশি সচেতন করতে হবে। বীমা সম্পর্কে জানাতে হবে।
আর্থিকভাবে সক্ষম প্রতিটি ব্যক্তির বীমা করা উচিত। দৈহিক অসুস্থতা যাদের নেই তাদের বীমা করা উচিত। এই জাগরণটা মানুষের মধ্যে আনতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকার অথবা বীমা কোম্পানিগুলোর সমিতি কারো না কারো এর জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বীমা খাতে গ্রাহকদের আস্থা আনতে প্রচলিত আইন কী যথেষ্ঠ বলে মনে করেন?

বদরুল আলম খান: আইনই বড় কথা নয়। আস্থাহীনতার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমরা যে কর্মীদেরকে পাঠাচ্ছি তাদের প্রশিক্ষণ নেই। তারা বীমা পলিসি সঠিকভাবে বোঝাতে পারছেন না। বীমাকে সঠিকভাবে বোঝাতে হবে। যিনি ভালভাবে বুঝে পলিসি করবেন তিনি কখনোই মিথ্যা তথ্য বা ডকুমেন্ট দিবেন না। সঠিক ডকুমেন্টস না থাকলে দাবি নিষ্পত্তি কঠিন হয়ে পড়ে। তখন এ দায়দায়িত্ব কোম্পানির উপর এসেই পড়ে। এ জন্য বীমা কর্মীদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে পাঠানো উচিত। যাতে তারা সঠিক পলিসি নিয়ে আসতে পারে। প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরা বীমা পেশায় আসলে আস্থা ফিরে আসবে, ইমেজ সংকটও কেটে যাবে।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: আপনি কী মনে করছেন বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক বীমার পরিবেশ বা বাজার সৃষ্টি হয়েছে?

বদরুল আলম খান: সর্বক্ষেত্রে বীমা বাধ্যতামূলক করার পরিবশে এখনো আসেনি। সরকারের কাছেও সেই ডাটা নেই যে, প্রতিটি নাগরিকের আয় কত। শারীরিক অবস্থা কী,

আয়ের উৎস কী অথবা বীমা সুরক্ষার আওতায় থাকাকালে আয়ের নিশ্চয়তা রয়েছে কী না। বীমা চলাকালে আয়ের নিশ্চয়তা না থাকলে বাধ্যতামূলক বীমা করলেও অনেকে প্রিমিয়াম নিয়মিত করতে ব্যর্থ হবেন।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বীমা খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইডিআরএ’র পদক্ষেপ কীভাবে দেখছেন?

বদরুল আলম খান: দু’তিন বছর ধরে আইডিআরএ খুবই সক্রিয় এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। প্রতিনিয়ত দিক নির্দেশনা জারি করছে, বীমা কোম্পানিগুলোকে শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে। আমরা সেগুলো মেনে চলছি। এটি খুবই ভাল লক্ষণ। আইডিআরএ’র মাধ্যমে আরো অনেক কিছু করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে অত্যন্ত ভাল ভূমিকা পালন করছে। বীমা কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আইডিআরএ একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। কর্মীদের জন্য ৬ মাস অথবা ৩ মাসের প্রশিক্ষণ চালু করলে সমানভাবে প্রশিক্ষিত জনশক্তি মাঠে কাজ করতে পারবে। সব কোম্পানির জন্য সমপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল তৈরি করে দেয়ার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের উপরই বর্তায়।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের কারণে অনেক বীমা কোম্পানিতে ধস নেমেছে। এখান থেকে কীভাবে বের হওয়া সম্ভব?

বদরুল আলম খান: কেউ পলিসি নিয়ে আসলে তাকে ৬৫-৭০ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে অনেক সময় ১০০ ভাগের উপরে খরচ চলে যায়। কিন্তু পরের বছর প্রিমিয়াম নবায়ন হয় না। এগুলো করে খরচ বেড়ে যায়। আল্টিমেটলি এটি ব্যালেন্সশিটে গিয়ে আঘাত করে। প্রথম বছরে একশ ভাগেরও বেশি খরচ হয়ে গেলেও পরবর্তী বছরে যে টাকা আসার কথা সেটি আসে না। কারণ পরের বছরে বীমা কর্মীর আর প্রিমিয়াম আনার দায় থাকে না।

আইডিআরএ’র যদি একটি আইন থাকে যে কর্মীর প্রথম বছরের প্রাপ্য কমিশনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বীমা কোম্পানির কাছে জমা থাকবে। পরের বছর সন্তোষজনক প্রিমিয়াম আসলে সে ২৫ শতাংশ ফিরে পাবে। এসব বিধিবিধান যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে বীমা শিল্পে অর্থ স্বল্পতা, খরচ বেড়ে যাওয়া এসব থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

রিনিউয়াল প্রিমিয়াম সন্তোষজনক আসছে না বলেই অনেক কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে পারছে না। কারণ লাইফ ফান্ড পজিটিভ হচ্ছে না। মূল বিষয় হচ্ছে-প্রতিবছর রিনিউয়াল সঠিকভাবে আনার জন্য আইডিআরএ’র কিছু বিধি বিধান করা দরকার। আরেকটি বিষয় হচ্ছে-বীমা কর্মীদের অন্য কোম্পানিতে যোগদান। বীমা কর্মীরা যে কোনো সময় অন্য কোম্পানিতে চলে যাওয়ার কারণে রিনিউয়াল আনার দায়িত্ব থাকে না।

আমি মনে করি, অন্তত তিন বছর পূর্তি না হলে একজন কর্মীর কোম্পানি ছাড়ার সুযোগ থাকা উচিত নয়। এক্ষেত্রে একটি বিধি থাকা উচিত। খরচের ব্যাপারেও এ খাতে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা আছে। সেটি হচ্ছে কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক্সট্রা কমিশন দেয়ার প্রতিযোগিতা। এতেও কর্মীরা এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানিতে চলে যায়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এখন ৬-৭ টি লেয়ারে কোম্পানিগুলো চলে। এই লেয়ারগুলো আরো কমিয়ে দিতে হবে। এতে খরচ কমবে। আমি মনে করি, কোম্পানিগুলোকে আরো বেশি বিধি-বিধানে আবদ্ধ করে, আরো আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসে বীমা খাত পরিচালিত হোক। যেখানে ফেইক ব্যবসা, অপরিশোধিত ক্লেইম এসব বিষয়গুলো ঘটবে না। আমরা চাই সঠিকভাবে কড়া নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রি পরিচালিত হোক। তাহলেই দ্রুত এ খাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতিকে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৮:০৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৯ মার্চ ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।