রবিবার ১৯ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ই-কমার্স খাতের বিকাশে সমন্বিত নীতিমালা জরুরি’

বিবিএ নিউজ.নেট   |   শনিবার, ১৪ আগস্ট ২০২১   |   প্রিন্ট   |   321 বার পঠিত

‘ই-কমার্স খাতের বিকাশে সমন্বিত নীতিমালা জরুরি’

ই-কমার্স খাতের বিকাশে জনগণের আস্থা, স্বচ্ছতা ও অটোমেশন কার্যক্রমের বাস্তবায়ন, নীতিমালার সহজীকরণ, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন জরুরি। একই সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয় বৃদ্ধি, সহায়ক কর ও শুল্ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য দেশের ই-কমার্স খাতের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখবে। এজন্য সমন্বিত নীতিমালা ও দিক-নির্দেশনা প্রয়োজন।

শনিবার (১৪ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ই-কমার্স খাতের বিকাশে টেকসই ইকোসিস্টেম প্রণয়ন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল ডায়ালগে এসব মন্তব্য করেন দেশের বিশিষ্টজনরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এখানে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের কারণে বেশি লাভের আশায় মানুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক সময় নিয়মের ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে বিষয়ে সবাইকেই আরও বেশি সচেতন হতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে রেগুলেশন থাকা প্রয়োজন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ই-কমার্স খাতে একটি এসওপি প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে আসবে। পাশাপাশি পণ্য ডেলিভারির পরপরই গ্রাহকদের পণ্যপ্রাপ্তির তথ্য প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এ খাতে আরও অগ্রগতি হবে।

বাণিজ্যসচিব বলেন, ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে একটি সহায়ক নীতিমালা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। তবে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এ খাতের জন্য বিদ্যমান নীতিমালা ও ভোক্তা অধিকার আইনেও প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংস্কার প্রয়োজন।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের ক্ষেত্রে ই-কমার্স অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ খাতে কিছু অসঙ্গতি ও ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ নিয়ে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তা নিরসনে ই-কমার্স খাতের টেকসই উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য। ২০২০ সালে ই-কমার্স খাতে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছে এবং ২০২১ সালে এ খাতে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি জানান, ২০২০ সালে এফ-কমার্স খাতে লেনদেনের পরিমাণ ৩২০ কোটি টাকা, যা সামনের দিনগুলোতে এ খাতে আরও বিকাশকেই প্রতিফলন করে। এ খাতের কর্মকাণ্ডের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কারণে ডিজিটাল ব্যবসায় বেশ ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিজনেস অ্যান্ড ইকোনোমিকস অনুষদের ডিন প্রফেসর এ কে এনামুল হক, ই-ক্যাব’র জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, নগদ’র প্রধান তথ্য কর্মকর্তা আশীষ চক্রবর্তী, দারাজ বাংলাদেশ’র চিফ অপারেটিং অফিসার খন্দকার তাসফিন আলম, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশেদ আনোয়ার, পাঠাও’র সভাপতি ফাহিম আহমেদ ও তানজিব আলম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট’র হেড অফ চেম্বার ব্যারিস্টার কে এম তানজিব-উল-আলম প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

পাঠাও’র সভাপতি ফাহিম আহমেদ বলেন, জনগণের ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টেকসই অবকাঠামো ও নীতি সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। এ খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও ভোক্তাদের আস্থা অর্জন নিশ্চিতকরণে দীর্ঘমেয়াদি বৃহৎ বিনিয়োগ খুবই জরুরি।

দারাজ বাংলাদেশ’র চিফ অপারেটিং অফিসার খন্দকার তাসফিন আলম বলেন, নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান নিজেদের পরিচিতির জন্য স্বল্প সময়ের বিভিন্ন ছাড়ের প্যাকেজ প্রবর্তন করলেও তা দীর্ঘ সময়ের জন্য ভালো নয়। তিনি ভোক্তা ও বিক্রেতার সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি জোরারোপ করেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অতিমাত্রায় প্রদত্ত ডিসকাউন্ট প্রদানের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান। পাশাপাশি এ খাতে স্বচ্ছতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর জোরারোপ করেন।

নগদ’র প্রধান তথ্য কর্মকর্তা আশীষ চক্রবর্তী বলেন, বর্তমানে সারাদেশের মাত্র ৩০-৩৫ হাজার পিওএস মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ প্রান্তিক পর্যায়ে এমএফএস-এর জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যক্তি পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমেই নিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে, যা অত্যন্ত যুগান্তকারী উদ্যোগ। এর ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মার্চেন্ট-এর আওতায় নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য লেনদেনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে প্রদত্ত পরিসীমার পুনর্মূল্যায়ন বিবেচনার আহ্বান জানান। তিনি এসক্রো প্রক্রিয়ার আওতায় পণ্য ডেলিভারির তথ্য হালনাগাদের ক্ষেত্রে অটোমেশন কার্যক্রম প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন।

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশেদ আনোয়ার বলেন, বেশিরভাগ স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাসহ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের অর্থায়নে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

ব্যারিস্টার কে এম তানজিব-উল-আলম বলেন, একটি কার্যকর ই-কমার্স ইকো-সিস্টেমের জন্য ভোক্তাদের আস্থা, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সক্ষমতা ও প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ই-কমার্স খাত বর্তমানে একটি অর্গানিক ডেভেলপমেন্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এ খাতের উন্নয়নে গ্রাহকদের আস্থার কোনো বিকল্প নেই বলে।

তানজিব-উল-আলম বলেন, মার্কেট-প্লেস মডেলের আরও সম্প্রসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। তিনি ই-কমার্স খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান।

ই-ক্যাব’র জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ২০১৬ সাল হতে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা প্রণয়নে ই-ক্যাব কাজ করে। যেখানে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হলেও তেমনিভাবে এর বাস্তবায়ন এগোয়নি। এ খাতের সঙ্গে সরকারের বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ভূমিকা থাকলেও সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘ডিজিটাল কমার্স সেল’-এর কার্যক্রম দ্রুত শক্তিশালী করা ও এর আওতায় একটি নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেন।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৬:৩১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৪ আগস্ট ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11221 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।