বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 460 বার পঠিত
একজন বাঙালি অসমীয়া সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্ম ১৪ ডিসেম্বর ১৯১২ সালে। কিংবদন্তি এ শিল্পী ইহধাম ত্যাগ করেন ২২ নভেম্বর ১৯৮৭ সালে। লোকসঙ্গীতকে কেন্দ্র করে গণসঙ্গীত সৃষ্টির ক্ষেত্রে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অবদান উল্লেখযোগ্য।
হেমাঙ্গ বিশ্বাস ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটের মিরাশির বাসিন্দা। হবিগঞ্জ হাইস্কুল থেকে পাস করার পর তিনি ভর্তি হন শ্রীহট্ট মুরারিচাঁদ কলেজে। সেখানে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কারাবন্দী থাকাকালে যক্ষারোগে আক্রান্ত হন। তারপর যাদবপুর হাসপাতালে কিছুকাল চিকিৎসাধীন থাকেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তেলেঙ্গানা আন্দোলনের সময়ে তিনি গ্রেফতার হয়ে তিন বছর বন্দী থাকেন। ১৯৫৩ সালের এপ্রিল মাসে মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত আইপিটির সপ্তম সর্বভারতীয় সম্মেলনে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের নেতৃত্বে অসমের ৪০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
১৯৩৮-৩৯ খ্রিস্টাব্দে বিনয় রায়, নিরঞ্জন সেন, দেবব্রত বিশ্বাস প্রমুখের সাথে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা আইপিটিএ গঠন করেন। পঞ্চাশের দশকে এই সংঘের শেষ অবধি তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার প্রগতিশীল লেখক শিল্পীদের আমন্ত্রণে তিনি প্রথম কলকাতায় আসেন সঙ্গীত পরিবেশন করতে। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে তার উদ্যোগে এবং জ্যোতিপ্রকাশ আগরওয়ালের সহযোগিতায় সিলেট গণনাট্য সংঘ তৈরি হয়। স্বাধীনতার আগে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের গানের সুরকারদের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রধান। সেই সময়ে তার গান তোমার কাস্তেটারে দিও জোরে শান, কিষাণ ভাই তোর সোনার ধানে বর্গী নামে প্রভৃতি আসাম ও বাংলায় সাড়া ফেলেছিল। আসামে তার সহযোগী ছিলেন নগেন কাকতি, বিনোদবিহারী চক্রবর্তী, সাহিত্যিক অশোকবিজয় রাহা, সেতারবাদক কুমুদ গোস্বামী প্রভৃতি।
১৯৫৬ সালে চিনে যান চিকিৎসার জন্য। আড়াই বছর থাকেন এবং খুব কাছ থেকে দেখেন চিনের সাংস্কৃতিক আন্দোলন। ১৯৬১ সালে স্থায়ীভাবে চলে আসেন কলকাতা এবং সেই সময়েই চাকরি নেন সোভিয়েত কনস্যুলেটের সোভিয়েত দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরে। কাজ করার সময় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতপার্থক্য হলে তিনি কাজ ত্যাগ করেন। চীন – ভারত মৈত্রীর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল। দুবার তিনি চিনে গিয়েছিলেন। চীনা ভাষায় তার অনেক গান আছে।
জ্যোতি প্রসাদ, মঘাই ওজা সাথে বিষ্ণু প্রসাদ রাভা ,ফনী শর্মা ,লক্ষীনাথ বেজবরুয়া ,ভূপেন হাজরিকা আদি অসমের জাতীয় সংস্কৃতির সম্মানীয় ব্যক্তিদের হেমাঙ্গ বিশ্বাস মূল্যায়ন করে গেছেন এবং বঙ্গের সমাজের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছেন । ১৯৭১ সালে মাস সিঙ্গারস নামে নিজের দল গঠন করে জীবনের শেষদিকেও তিনি গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে বেড়িয়েছেন । তিনি কল্লোল, তীর, লাললণ্ঠন প্রভৃতি নাটকের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। লাললণ্ঠন নাটকে তিনি বিভিন্ন চীনা সুর ব্যবহার করেছিলেন। রাশিয়ান গানও অনুবাদ করেন।
Posted ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed