শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনার মধ্যেও পোয়াবারো ঋণখেলাপিদের

আদম মালেক   |   বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   280 বার পঠিত

করোনার মধ্যেও পোয়াবারো ঋণখেলাপিদের

আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে না পারলেও ঋণখেলাপিদের একের পর এক ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা হয়েছে তাদের জন্য পোয়াবারো। এসব সুবিধার মধ্যে রয়েছে বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে গৃহিত ঋণে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ঋণ ১০ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়েছে। সুনাম যাতে ক্ষুন্ন না হয় একারণে তাদের নাম পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। আরেকটি সুবিধা হলো ঋণগ্রহীতা করোনাকালী ঋণ কিস্তি পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি সাব্যস্ত করা যাবে না। খেলাপিদের এ সুবিধা ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল করার প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ঋণের জন্য দণ্ড সুদ বা কোনো প্রকার ফি আদায় করা যাবে না। শুধু এখানেই শেষ নয় খেলাপিদের কল্যাণে গণছাড় দিয়েছে সরকার। ১৩ হাজার ৩০৭ জন খেলাপির ৯ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে সরকার।

এদিকে করোনা সংকটকালে ঋণগ্রহীতাদের আরও কিছু সুবিধা দিয়েছে সরকার, আগে থেকে যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি তারাও এ সুবিধা পাচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া গ্রাহকরা কিস্তি পরিশোধ না করলেও খেলাপি করা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন নির্দেশনা জারি করেছিল গত ১৮ মার্চ। ওই সময় বলা হয়েছিল, ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কোনো গ্রাহক কিস্তি পরিশোধ না করলেও তার ঋণমান খারাপ হবে না। তবে কোনো ঋণখেলাপি ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করলে তার ঋণমান উন্নত করা যাবে। পরে এ নির্দেশনার মেয়াদ আরো ৩ মাস বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিস্থিতির বিচারে ঋণখেলাপি না করার নির্দেশনার সময়সীমা আরো ৩ মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে চলতি বছরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার আর কোনো সুযোগ থাকছে না।

চারটি সরকারি ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঋণের নামে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পরে সেই ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আবার বিশেষ সুবিধার আওতায় ১০ বছরের জন্য ওই খেলাপি ঋণই নবায়ন করা হয়। শুধু তা-ই নয়, এক খাতের ঋণ অন্য খাতে নেয়াসহ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বের করা অর্থও নবায়ন হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও আট ধরনের ঋণ অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা উল্লেখ করা হয়। তবে এতে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাংক এবং ঋণ অনিয়মে জড়িত প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, অর্থ পাচার একটি ফৌজদারি অপরাধ। সে অপরাধী কীভাবে ১০ বছরের সুবিধা পায়? কী করে ঋণখেলাপিমুক্ত হয়? এসব সুবিধা বাতিল করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সূত্র জানায়, মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছরে গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ১৬ মে। সুদহারও কমিয়ে ৯ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে একবারে কেউ ঋণ পরিশোধ করতে চাইলে তার সমুদয় সুদ মওকুফ করে এক বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিতে ‘ওয়ান টাইম এক্সিট’ সুবিধা দেওয়া হয়। এ দুটি সুবিধা নিতে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ ছিল। এ সুবিধা নিতে সর্বমোট ২০ হাজার ৭০৩ ঋণখেলাপি আবেদন করেন। তাদের কাছে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক ব্যাংকগুলোর পাওনা ছিল ২২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। আবেদন করা গ্রাহকদের মধ্যে সুবিধা পেয়েছেন ১৩ হাজার ৩০৭ গ্রাহক। এ গ্রাহকদের ৯ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। আর ব্যাংকের আদায় হয়েছে মাত্র ৫৪৮ কোটি টাকা।

তবে ঋণখেলাপিদের ছাড় দেওয়ার ঘটনা এটি নতুন নয়। ২০১৩ সাল থেকে বিশেষ ছাড়ে পুনঃতফসিল করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে বড় ঋণখেলাপিদের দেওয়া হয় ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা। গত পাঁচ বছরে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে পুনঃতফসিল করা হয়েছে ৫২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। এ সুবিধা নিয়েও অনেকে আবার খেলাপি হয়ে গেছেন। এমনকি ১২ বার পর্যন্ত সুবিধা নেওয়ার নজিরও রয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে ৩ বারের বেশি ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আবার তৃতীয়বার ছাড় দেওয়ার নিয়মনীতিও অনেক কঠিন। কিন্তু বারবার ছাড় গ্রহণ করতেও খেলাপিদের বড় বাধার মুখে পড়তে হয়নি। বরং তাদের ছাড় দিতে সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাণিজ্যিক ব্যাংক সব সময় উদার ছিল।

সর্বশেষ গণছাড় দেওয়ার সময় জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উৎপাদনশীল খাতসহ অন্য খাতে স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ বজায় রাখাসহ ব্যাংকিং খাতে বিরূপমানের খেলাপি ঋণ নিয়মিত আদায়ের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলকরণ ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরে মন্দমানের খেলাপি গ্রাহকরা এ সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর এক তথ্যে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন ঋণগ্রহীতা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়েছেন। ফলে ঋণখেলাপি হিসাবে তাদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) উল্লেখ করা হয় না।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৫৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11168 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।