বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রণোদনার অর্থ বিতরণে অনীহা বাণিজ্যিক ব্যাংকের

আদম মালেক   |   বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   430 বার পঠিত

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রণোদনার অর্থ বিতরণে অনীহা বাণিজ্যিক ব্যাংকের

করোনা সংকট মোকাবেলায় ব্যাপক চাহিদার কারণে বড় শিল্পমালিকদের জন্য প্রণোদনা তহবিলের আকার ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। অথচ দু’দফা সময় বাড়িয়েও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নির্ধারিত ২০ হাজার কোটি টাকার এক-তৃতীয়াংশও এখন পর্যন্ত বিতরণ হয়নি। আর এজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনীহাকে দায়ী করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।

প্রণোদনা তহবিলের ঋণ বিতরণে সরকার নানা উৎসাহ উদ্দীপনা দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কেউ কেউ মনে করেন, প্রণোদনা তহবিল সম্পর্কেও বেশিরভাগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তেমন জানেন না। আবার জামানত ছাড়া এ তহবিল থেকে ঋণ দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক। তাই সুদ ভর্তুকি প্রদান, প্রভিশন সংরক্ষণে ছাড়সহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ শিথিল করেও হালে পানি পাচ্ছে না ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রণোদনার কাক্সিক্ষত অর্থ বিতরণ।

এ প্রসঙ্গে চলতি বছর বর্ষসেরা জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার পাওয়া পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজবিন হাফিজ বলেন, প্রণোদনার ঋণের জন্য সাভার ও আশুলিয়ার দুটি ব্যাংক শাখায় গিয়ে তিনি ঋণ পাননি। দুটি শাখা থেকেই তাকে জানানো হয়েছে, সিএমএসএমই খাতের জন্য নির্ধারিত প্রণোদনার ঋণ আপাতত তারা দিচ্ছেন না। তবে চাইলে তিনি জামানত দিয়ে নিয়মিত সুদে ঋণ নিতে পারবেন। এ কারণে তিনি ঋণ নেননি।

করোনাভাইরাসের কবলে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন বন্ধ না হয়, সে লক্ষ্যে গত এপ্রিলে এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে ঋণ হিসেবে ৯২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বিতরণের ঘোষণা আসে। গত আগস্টের মধ্যে পুরো ঋণ বিতরণ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গ্র্রাহকরা এ তহবিলের আওতায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। ৯ শতাংশ সুদ ধরে বাকি অর্থ সরকার ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি দেবে। আর ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের পর বড় অংশই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন পাবে। ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি আশানুরূপ না হওয়ায় তিন দফায় সময় বাড়িয়ে সিএমএসএমই খাতের জন্য ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় সব সময় বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশে এ যাবৎ বিশেষ ছাড়ে ঋণ পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিলের সুবিধার বেশিরভাগই বড় গ্রাহকরা পেয়েছেন। অন্যদিকে বরাবরের মতো ব্যাংকারদের মধ্যেও ক্ষুদ্র গ্রাহকদের ঋণ দিতে অনীহা রয়েছে। এসএমই উদ্যোক্তাদের অনেকে ব্যাংকে গিয়ে ঋণ পাননি এমন অভিযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকারদের অনেকে অবশ্য বলছেন, উপযুক্ত গ্রাহক না পাওয়ায় তারা ঋণ দিতে পারছেন না। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফসির সা¤প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৬৩ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তা প্রণোদনার তহবিল বিষয়ে জানেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রণোদনার আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য নিয়ম-কানুন শিথিল করা হয়েছে। বিশেষ করে ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে নানা ছাড় দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৫৯ হাজার ২৫০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। এর পরও কোনো ব্যাংক যেন তারল্য সংকটে না পড়ে সে জন্য আমানতের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ বা সিআরআরের হার দেড় শতাংশ কমানো হয়েছে। অবশ্য প্রণোদনার টাকা আদায় হোক বা না হোক, ব্যাংকগুলোকে তা যথাসময়ে ফেরত দিতে হবে। কোনো ব্যাংক ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত হিসাব থেকে কেটে সমন্বয় করা হবে। এসব কারণে অনেক ব্যাংক এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণে হয়তো অনীহা দেখাচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, বড় ঋণের তুলনায় ছোট ঋণের চাহিদা কম। এর অন্যতম কারণ হতে পারে, অনেকে এই প্রণোদনার ঋণ বিষয়ে জানেন না কিংবা ব্যাংকের সঙ্গে তাদের আগে থেকে যোগাযোগ না থাকায় ব্যাংকও হয়তো সেভাবে সহযোগিতা করছে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে জামানত দেওয়ার মতো অবস্থা না থাকায় ঋণ নিতে আসেন না। এসব কারণে ছোট উদ্যোক্তারা কম ঋণ পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শিল্প ও সেবা খাতের ৩৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে গত ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৫১১টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ২১৭ কোটি টাকা, যা ওই তহবিলের ৮৬ শতাংশ। এর মধ্যে চলতি মূলধন হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। আর রফতানিমুখী শিল্পের জুনের বেতন বাবদ আড়াই হাজার কোটি এবং জুলাইয়ের বেতন হিসেবে ২ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এর বাইরে এপ্রিল ও মে মাসের বেতন-ভাতা বাবদ দেওয়া হয় ৫ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। সিএমএসএমই খাতের জন্য ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ৬ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। মোট সিএমএসএমই ঋণের যা ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দেশের ৪০ হাজার ৯২৫টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে এ পরিমাণ অর্থ দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

শিল্প খাতের বাইরে নিম্নআয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এনজিওর মাধ্যমে বিতরণের লক্ষ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণাদনার আওতায় একটি তহবিল রয়েছে। গত ২১ অক্টোবর পর্যন্ত এ তহবিল থেকে ৭২টি এনজিও ৯ শতাংশ সুদে ৯০ হাজার ৪১ জনের মাঝে এক হাজার ৩৩৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। পোলট্রি, মৎস্য, ডেইরি, প্রাণিসম্পদ, মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষের জন্য গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার স্কিম থেকে ৮৪ হাজার ৯৪১ জনকে দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।

রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার ৩৫০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলার করা হয়েছে। ইডিএফের ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা সমপরিমাণের নতুন এ তহবিল থেকে গত ২১ অক্টোবর পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। তবে প্রাক-জাহাজীকরণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে মাত্র ৪৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৫৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11192 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।