| রবিবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 1974 বার পঠিত
এই উপমহাদেশে জীবন বীমার প্রতিমূর্তি হিসেবে খোদা বকস-এর কর্মজীবনের কাহিনীর সূত্রপাত ১৯৩২ সালে – ‘ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিয়ন ইনসিওরেন্স কোম্পানী লিমিটেড’ এর জন্মলগ্ন থেকে। খোদা বকস তাঁর উদ্যম ও প্রেরণাশক্তি দিয়ে কোম্পানীর বীমা ব্যবসাকে প্রাথমিক ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে এতটাই উন্নত পর্যায়ে তুলে এনেছিলেন যে, কেবল ইস্টার্ন ফেডারেল নয়, স্বয়ং খোদা বকসের জনপ্রিয়তাও শীর্ষে উঠেছিল, ঘরে ঘরে সে নাম পরিচিত হয়ে গিয়েছিল। খোদা বক্স এর জীবন নিয়ে ব্যাংক বীমা অর্থনীতির ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব।
১০৯৫ সালের তার্ক-ই-মাওয়ালাত আন্দোলন, ১৯১৯ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং ১৯২৯ সালের আইন অমান্য আন্দোলন, উপমহাদেশে বীমাকরণ ব্যবস্থা বিকাশের পথে এক একটি উত্তরণ ফলক হিসেবে কাজ করেছিল। কারণ এই আন্দোলনগুলির ফলশ্রুতিতেই কার্যত বিদেশী পুঁজির প্রতিযোগিতা খর্ব হয়েছিল উল্লেখযোগ্যভাবে। এই আন্দোলনগুলিই বিলাতি দ্রব্য বর্জন ও বিলাতি প্রতিষ্ঠান বয়কট করার প্রেরণা দিয়েছিল। ফলে তৎকালীন জাতীয়তাবোধের উজ্জীবন থেকে দেশী বীমা প্রতিষ্ঠানগুলির আত্মবিকাশ সম্ভব হয়েছিল।
এশিয়ার বীমা ব্যবসায় মার্কিন উদযোগের অনুপ্রবেশ
স্টার-এর প্রাচীনতম জীবন বীমা কোম্পানী ‘এশিয়া লাইফ’ ১৯৫১ সালে নাম পরিবর্তন করে হয় ‘আমেরিকান লাইফ ‘আলিকো’ যখন ১৯৫২ সালে পাকিস্তানে জীবন বীমা ব্যবসায় নিবন্ধভুক্ত হয়, তখন সে দেশে এরূপ কার্য পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য স্থানীয় মানুষ ওয়াইসাল উদ্দিন-এর চেয়ে যোগ্যতর ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। ওয়াইসাল উদ্দিন ১৯৫৪ সালে ‘ইস্টার্ন ফেডারেল’ ছেড়ে দিয়ে ‘আমেরিকান লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানী’তে যোগ দেন সহ-সভাপতি (Vice President) হিসেবে। এর জন্য ইস্টার্ন ফেডারেলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে জীবন বীমা মার্কেটিং পরিচালনার কাজে বড় এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। মি. জে বি আলাদিনা (যিনি ‘ইস্টার্ন ফেডারেল’-এ যোগ দিয়েছিলেন ১৯৫০ সালে) বলেন, তখন করাচিতে বীমা ব্যবসা সামলানোর জন্য ফেডারেলের ‘চীফ এজেন্ট অব মার্কেটিং’ রেয়াসাতুল্লাকে ‘এসিসট্যান্ট ম্যানেজার ডেভেলপমেন্ট’ পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ; রেয়াসাতুল্লা ছিলেন এক প্রীতি পূর্ণ কর্মোদ্যোগী মানুষ।
এদিকে কে এফ হায়দার, একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রত্যয়নিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, আমেরিকান লাইফ কোম্পানীর (Alico) আগ্রাসী বাণিজ্যিক অগ্রগমনকে লক্ষ্য করছিলেন। ১৯৬০ (১৯৫৯ ?) সালে তিনি খোদা বকসকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং তাঁকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে জীবন বীমা কর্মোদ্যোগের কর্তৃত্ব দিয়ে করাচিতে ‘লাইফ ম্যানেজার’ পদে নিয়োগ করেন। খোদা বকস এই কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন, যেন একটা বাঞ্ছিত সুযোগ তাঁর হাতে এসে গেল। দায়িত্ব হাতে নিয়েই খোদা বকস দ্রুত কিছু সুপরিকল্পিত কর্মসূচী নির্ধারণ করলেন। মার্কেটিংয়ের জন্য একটি উদ্যমী কর্মনিষ্ঠ কর্মীদল গড়ে তুললেন। ব্যাপক স্তরে পৌঁছে দিলেন, ছড়িয়ে দিলেন জীবন বীমার বার্তা। এই ঝটিকা উদযোগ কার্যত বিদেশী প্রতিযোগীদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুললো।
মাত্র তিন বছরের মধ্যে (১৯৬২) ইস্টার্ন ফেডারেল যে পরিমাণ বীমা লগ্নি ও বীমাপত্র (Policy) নথিভুক্ত করে ফেলেছিল সেটা সারা পাকিস্তানের চারটি বিদেশী ইনসিওরেন্সের মোট বীমাকৃত অর্থ পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। একইভাবে দেখা গেল, ১৯৬৫ সালের শেষে বাজারে লগ্নীকৃত বিদেশী শেয়ারের পরিমাণ ইস্টার্ন ফেডারেলের শেয়ারের থেকে কমে গেছে। ১৯৭০ সালের মধ্যে পাকিস্তানে চারটি বিদেশী ইনসিওরেন্স কোম্পানী ও চল্লিশটি দেশী কোম্পানীর মোট বীমা ব্যবসার ৩৭% দখল নিল একা ফেডারেল কোম্পানী।…খোদা বকস-এর লেগে থাকা ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। তিনি তাঁর এই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানীর বেশ কয়েকজন কর্তা স্থানীয় ব্যবসা উৎপাদককে ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিয়নে যোগদান করাতে সফল হয়েছিলেন।
খোদা বকস সম্পর্কে ধারাবাহিক প্রতিবেদন গুলো পড়তে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি অনলাইনের সাথে থাকুন।
Posted ৩:৩৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed