সোমবার ১৭ জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩ আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিভায় উজ্জ্বল আলহাজ্ব মকবুল হোসেন ছিলেন আমাদের অভিভাবক আমাদের ছায়া

শরীফুর রহমান ভূঁয়া   |   রবিবার, ২৬ মে ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   30 বার পঠিত

প্রতিভায় উজ্জ্বল আলহাজ্ব মকবুল হোসেন ছিলেন আমাদের অভিভাবক আমাদের ছায়া

মানবিক গুনাবলী আর নানামুখী প্রতিভায় উজ্জ্বল এক নাম আলহাজ্ব মকবুল হোসেন। তিনি ছিলেন একজন সফল সাংসদ, শিল্পপতি, আইনজীবী, সমাজসেবক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ। ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য একজন। ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠায় অক্ষয় হয়ে আছেন ইতিহাসের পাতায়।
আলহাজ্ব মকবুল হোসেন ১৯৫০ সালে ১৫ মার্চ মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ডুলিহাটা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই তিনি যেমন মেধাবী ছাত্র হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন তেমনি ক্যাপ্টেন হিসেবেও তাঁর সফল নেতৃত্বের প্রকাশ ঘটে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তিনি ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে হাতে খড়ি নেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন তিনি। মিছিলের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিতেন এই দীর্ঘদেহী, সুদর্শন অবয়বের লড়াকু জননেতা। কোন লোভ ও ক্ষমতার প্রলোভনে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। ষাটের দশকে গণআন্দোলনের অন্যতম সংগঠক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে ছাত্র অবস্থায়ই তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ জগন্নাথ কলেজ শাখার যুগ্ম সম্পাদক-এর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭২ সালে এমএ, এরপর এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাকে দ্বিতীয়বার কারাবরণ করতে হয়। ১৯৯০ সালের গণআন্দোলন ও গণঅভ্যুথানের একজন সফল সংগঠক ছিলেন। ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন।

১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তিনি তৎকালীন ঢাকা-৯ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এরপর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র এ্যাডভোকেট এবং ঢাকা বার এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য ছিলেন।

তিনি কেবল বাংলাদেশের রাজনীতিকেই সমৃদ্ধ করেননি; তার কর্মময় জীবনে দেশে বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ ঔষধ শিল্পের সফল উদ্যোক্তা, প্রনেতা এবং কর্ণধার ছিলেন। ব্যবসা-বাণিজ্্েযর সকল শাখায় তার ছিল গভীর জ্ঞান। প্রতিষ্ঠা করেছেন সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পূরবী জেনারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি ছাড়াও মধুমতি ব্যাংক, সন্ধানী লাইফ ফাইন্যান্স লি., সন্ধানী ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ, এ্যামিকো ল্যাবরেটরিজ, পান্না টেক্সটাইল (স্পিনিং) মিলস লি., মোনা গ্রুপ অব গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্ট্রীজ, দৈনিক আল-আমীন পত্রিকা। তার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম সিটি ইউনিভার্সিটি, আলহাজ্ব মকবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ, এম. এইচ. ডেন্টাল ইউনিট কলেজ, মোহাম্মদপুর ইসলামিক সেন্টার, হাফেজিয়া জামিয়া মাদ্রাসা, মোহাম্মদ আলী গলবাহার হাসপাতাল। এ সকল প্রতিষ্ঠান তিনি দক্ষ হাতে দৃঢ়তার সাথে পরিচালনা করেছেন।

সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ছিল তাঁর প্রাণ। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের জীবন বীমা সেক্টরে সন্ধানী লাইফের অনন্য মাত্রা আনয়নের সফল কারিগর এই আজন্ম স্বপ্নবাজ মানুষটি। তার দৃঢ় বুদ্ধিমত্তায় প্রতিষ্ঠানটি ইন্স্যুরেন্স সেবায় শীর্ষ নাম। যারা মাঠে কাজ করেন তারাই তার কাছে ছিলেন প্রকৃত বীমাকর্মী। তার কর্মকান্ড ঘিরে থাকতো কর্মীদের সুখশান্তি; তিনি বিশ্বাস করতেন কর্মীরা ভালো থাকলে কোম্পানির উন্নতি হবে। তাঁর বিশ্বাস ছিল, নিজেকে সৎ এবং নিয়ন্ত্রণে রেখেই লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। সাধারণ মানুষের বীমার প্রতি আস্থা কম। ফলে দেশের বড় একটি অংশ বীমার বাইরে রয়েছে। বীমাকে জনপ্রিয় করা এবং বীমার প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সন্ধানী লাইফ হতে বীমা দাবী পরিশোধের অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলক করেন। জনগণের মধ্যে বীমার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে পলিসি বোনাসের হার সর্বোচ্চ করার কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেন; যার ধারাবাহিকতায় আজ সন্ধানী লাইফ অধিক হারে গ্রাহকদের পলিসি বোনাস দিচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। অসাধারণ দুরদর্শি চিন্তার অধিকারী ছিলেন তিনি; তিনি যে কাজেই হাত দিয়েছেন সে কাজেই সফল হয়েছেন। প্রশাসনিক কাজেও তিনি ছিলেন সুদক্ষ, সাহসী ও সুনামধারী একজন সফল মানুষ।

তিনি ছিলেন একাধারে বিশিষ্ট শিল্পপতি সিআইপি, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, দক্ষ সংগঠক, দানশীল, সাহসী রাজনীতিবিদ ও মানবতার সেবক। করোনা মহামারির মধ্যেও তিনি ঢাকা, টাঙ্গাইল ও মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অসহায় মানুষের মধ্যে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণসহ আর্থিক সহায়তা করেছেন।

তার কাজের মূল্যায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ সাফল্যের স্বর্ণমুকুট পেয়েছেন; ভূষিত হয়েছেন অনেক পদকে। শের ই বাংলা জাতীয় স্বর্ণপদক পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্বর্ণপদক পুরস্কার, শহীদ সোরওয়ার্দী জাতীয় স্বর্ণপদক পুরস্কার, বিচারপতি আবু সাঈদ স্বর্ণপদক পুরস্কার, শহীদ বদিউজ্জামান স্বর্ণপদক পুরস্কার, আমরা সূর্যমুখী স্বর্ণপদক পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি।
ছাত্রজীবন থেকে সংগ্রাম করে সকল যুদ্ধে জয়ী হয়ে হার মানলেন করোনার কাছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২৪ মে ২০২০ সালে রাত নয়টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:২৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৬ মে ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।