বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 577 বার পঠিত
গাইবান্ধায় মাত্র এক পোন আমনের চারার জন্য ৪ মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। কিন্তু এখনও সরকারি তরফে মেলেনি কোনো প্রণোদনা। তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর চেস্টা করছেন তারা। আশায় আছেন হয়তোবা টানা পরিশ্রমে সংসারে আলো জ্বলতে পারে।
সাঘাটার তেলিয়ান সাহারভিটা গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। ভাল ফলনের আশায় উন্নত জাতের বীজতলা প্রস্তত করেন। কিন্তু ভাল ফলন তো দূরের কথা, বন্যায় সম্পূর্ণ বীজতলা ডুবে যাওয়ায় আমনের চারা পচে যায়। ভাল বীজ সংগ্রহ করতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই হটে গিয়ে তার মাথায় হাত। এক পোন (৮০ আটি) চারার দাম ১২শ থেকে ২ হাজার টাকা।
তিনি জানান, কী আর বলব বাবা, এবার ৩ মণ ধান বিক্রি করে ১ পোন বীজ কিনতে হচ্ছে। ১ মণ ধানের দাম ৫শ টাকা। ২ হাজার টাকা দিয়ে ভাল জাতের ১ পোন চারা নিতে গেলে ৪ মণ ধান বিক্রি করেতে হচ্ছে।
জানা গেছে বন্যার কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় এবার অনেকেই চারা সংকটে পড়েছেন। তারপরও কিছু কিছু স্থানে ৫শ থেকে ৭শ টাকায় জয়পুরহাট ও দিনাজপুর থেকে আনা আমনের চারা পাওয়া যায়। কিন্তু সেই চারা লাগানোর পরে ভাল ফলনের সম্ভবনা কম। কারণ এসব চারা কোন জাতের তা বিক্রেতারা নিজেরাও সঠিক জানেন না। এই চারা লাগানোর পরে ফলন কেমন হবে সেই শঙ্কায় কৃষকরা বেশি দাম দিয়ে ভাল জাতের চারা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ধান চাষে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও এখনও কৃষকদের চারা দেয়া শুরু করেনি কৃষি বিভাগ।
সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের বুরুঙ্গী গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, ২০১৬ সালের ভয়াবহ বন্যায় তারা ৫ বিঘা জমির পটল ও ১০ বিঘা জমির করলাসহ আন্যান্য ফসল তলিয়ে এতে তার কয়েক কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি হয়। সে বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোবিন্দগঞ্জে বন্যাদুর্গতদের দেখতে আসেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সবাইকে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু গত ২ বছরেও আব্দুর রশিদের কপালে জোটেনি সরকারি সহযোগিতা বা কৃষি পুনর্বাসন। অথচ সরকারি তালিকা অনুযায়ী সাঘাটার কচুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ও বুরুঙ্গী গ্রামের ইউপি সদস্য আইয়ুব হোসেন, গাছাবাড়ী গ্রামের ইউপি সদস্য হাবিজার রহমানসহ ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সবাই ও তাদের লোকেরা এই কৃষি প্রণোদনা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, দু’বছর চেষ্টার পরে ২০১৯ সালে কিছুটা ঘুড়ে দাঁড়ালেও ফের সাম্প্রতিক বন্যার কাছে হেরে গেছেন। এ বছর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, কয়েক একর জমিতে টানা ৬ মাসের পরিশ্রমে পটল, করলা, শশাসহ বিভিন্ন সবজী উৎপাদন করেন । যে সময় প্রতি সপ্তাহে সবজি বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা পাচ্ছিলেন ঠিক তখনই ভয়াবহ বন্যায় কপাল পুড়েছে। এখন পুরো ক্ষেত বন্যায় বিধ্বস্ত। এ পর্যন্ত কোনো সরকারি কৃষি কর্মকর্তা তার খোঁজ নেননি। রশিদের মতো গাইবান্ধার হাজার হাজার কৃষক এবারের বন্যায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
পুটিমারী গ্রামের সফল কৃষক আমির হোসেন। ধান নয় সবজি চাষে মিলেছে সফলতা। একই জমিতে বছরে ৪ বার ফসল উৎপাদনের কারণে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক। তার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবজি চাষ করেই তিনি শূন্য থেকে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
কিন্তু সেই সফল কৃষকের স্বপ্ন এবারের বন্যায় ভেঙে গেছে। তার প্রায় ২০ লাখ টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। বন্যার থাবায় লন্ডভন্ড হয়েছে তার মালটার বাগান। এছাড়া পটল, করলা, মরিচ, পেপে, কচুসহ বিভিন্ন ক্ষেতের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনোভাবেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না।
এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, সাঘাটা উপজেলায় বন্যায় ফসলি জমির ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৬০ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্তদের কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত চলছে। দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে তালিকাভুক্ত সব কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে ১ একর ৬৫ শতাংশ জমির জন্য আমনের চারা দেয়া হবে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার মোট ১৪ হাজার ২১ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। এছাড়াও সব উপজেলায় নতুনভাবে ফসলের ক্ষতির তালিকা হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির যে তালিকা আসছে সেগুলো এক করে ক্ষতির নতুন পরিমাণ জানানো হবে।
Posted ২:৪০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed