মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লিচুর বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ১৯ মে ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   759 বার পঠিত

লিচুর বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই

চলতি বছরে ফরিদপুরে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে গাছে গাছে লিচুর ভালো গুটি থাকলেও শেষ সময় প্রচণ্ড দাবদাহে আর সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে অনেক লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক লিচুতে কালো কালো দাগ পড়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চাষির সেই স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে।
একযুগের বেশি সময় লিচুর চাষ করেন ফরিদপুরের জাহাপুর এলাকার বৃদ্ধ চাষি কদম আলী (৭২)। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বুকবড়া স্বপ্ন নিয়ে আশায় ছিলেন ভালো উৎপাদন হবে। এতে আসবে অধিক মুনাফা, সংসারে সচ্ছলতা ফিরবে। কিন্ত মৌসুমের শুরুতে গাছে গাছে লিচুর ভালো গুটি থাকলেও শেষ সময় প্রচণ্ড দাবদাহে আর সম্প্রতি সময়ে ফণীর আঘাতে সেই স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে।

প্রতি বছর মধুখালী ও বোয়ালমারী উপজেলায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে লিচুর আবাদ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। বাজারে লিচু উঠার মাসখানেক আগে (আগড়) এ অঞ্চলে লিচু ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। যে কারণে দামও ভালো পান চাষিরা। কিন্তু চলতি মৌসুমে এবার কৃষকদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার রেখা। বাগানের শত শত গাছের লিচু ঝরে গেছে। যেগুলো রয়ে গেছে তার মধ্যে অনেকগুলোতে দেখা যাচ্ছে কালো দাগ, অধিকাংশ গাছের লিচু ফেটে নষ্ট হচ্ছে। জেলার সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ জানায়, প্রচণ্ড গরম আর খড়ায় লিচুর এ অবস্থা হয়েছে।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী, মধুখালী, ফরিদপুর সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নজুড়ে গত কয়েক বছরে লিচুর চাষাবাদ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এ অঞ্চেলে গড়ে উঠেছে লিচুর কয়েক শতাধিক বাগান, কিন্তু চলতি মৌসুমে লিচুর আবাদকারীরা লাভের মুখ দেখতে পারবে কি না-তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে মধুখালীর জাহাপুর, বোয়ালমারীর কাদিরদী ও সদর উপজেলার চানপুর এলাকার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পরিবারের বিভিন্ন বয়সী সদস্যরা বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে তারা বাছাই করছে। শুধু পুরুষরাই নয়, নারী ও কিশোরীরাও এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। কিন্তু অধিকাংশ বাগানে প্রচণ্ড খড়া আর রোদের তাপে লিচুর একাংশ প্রায় পুড়ে গেছে। বাগানগুলোতে লিচু তাপে শুকিয়ে ঝড়ে পড়ছে। অন্যদিকে সম্প্রতি সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ফণীর আঘাতেও বাগানগুলো বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ওই এলাকার চাষিদের কাছ থেকে যে সব ব্যবসায়ীরা লিচু ক্ষেত কিনেছে তাদের মূলধন তুলতে পারবেন কি না তা নিয়েও শঙ্কিত তারা। মধুখালীর জাহাপুর এলাকার লিচু চাষি মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, বাগানে কীটনাশক, সার ও ওষুধ ব্যবহার করেও লিচুর ফলনের ভালো মান ধরে রাখা যাচ্ছে না।
একই এলাকার কলেজ শিক্ষক লিচু চাষি সেলিম ভূঁইয়া জানান, এ মৌসুমে অধিক খড়ার কারণে লিচুগুলো ঝড়ে যাচ্ছে এবং যেগুলো গাছে রয়ে গেছে তার গায়ে কালো দাগ পড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ না পেলে বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

বোয়ালমারীর কাদিরদী এলাকার চাষি মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে লিচু চাষে বেশি লাভ থাকায় বেশি করে লিচুর বাগান করেছি। তাছাড়া এ অঞ্চলের কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস লিচু চাষ। ‘বেশ কয়েক বছর ধরে লাভের মুখ দেখলেও এবারে পুঁজি তোলা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি,’ বলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, দাবদাহ থেকে লিচুর ফলন ধরে রাখতে হলে ডায়বেন এন-৪৫ অথবা টিল্ট পানিতে মিশিয়ে লিচু পাকার আগে (সময় মতো) গাছে স্প্রে করতে হবে কমপক্ষে তিনবার। এছাড়াও খড়ার পরিমাণ বাড়লে গাছে সকাল-বিকাল পানি দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দাবদাহের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই সৃষ্টি হয়, এ জন্য চাষিকে যত্নবান হতে হবে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:২৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ মে ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11185 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।