শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউনিলিভারের কাছে সেটফার্স্টের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা

চূড়ান্ত পর্যায়ে জিএসকে বাংলাদেশের অধিগ্রহণ

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ২৭ জুন ২০২০   |   প্রিন্ট   |   392 বার পঠিত

চূড়ান্ত পর্যায়ে জিএসকে বাংলাদেশের অধিগ্রহণ

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) বাংলাদেশ লিমিটেডের সব শেয়ার ইউনিলিভারের সাবসিডিয়ারি ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির কাছে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে জিএসকের মূল কোম্পানি যুক্তরাজ্যের সেটফার্স্ট লিমিটেড। ইউনিলিভারের সঙ্গে জিএসকে বাংলাদেশের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে এ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

শুক্রবার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে জিএসকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, কোম্পানিটির সিংহভাগ শেয়ার ধারণ করা প্রতিষ্ঠান সেটফার্স্ট লিমিটেড গত ২৪ জুন চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে, তাদের কাছে থাকা জিএসকে বাংলাদেশের ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি শেয়ার তারা ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির কাছে বিক্রি করবে। এ শেয়ার বিক্রির বিষয়টি সেটফার্স্ট পর্ষদে অনুমোদন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ইউনিলিভার ও জিএসকের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার শর্ত পূর্ণ হবে।

এর আগে এ বছরের ২২ মার্চ অধিগ্রহণ প্রস্তাবে আংশিক পরিবর্তন আনে ইউনিলিভার। অধিগ্রহণ চুক্তি অনুসারে প্রথমে সেটফার্স্টের কাছে থাকা জিএসকে বাংলাদেশের সব শেয়ার ইউনিলিভারের মূল কোম্পানি ইউনিলিভার এনভির কাছে বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটি পরিবর্তন করে ইউনিলিভারের মূল কোম্পানির পরিবর্তে এর সাবসিডিয়ারি ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির কাছে সেটফার্স্টের সব শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ইউনিলিভার ও জিএসকের পক্ষ থেকে জারি করা দুটি পৃথক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয় যে ভারত, বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্য ২০টি দেশের বাজারে জিএসকের চলমান কনজিউমার হেলথ ড্রিংকস ব্যবসা কিনে নিচ্ছে অ্যাংলো-ডাচ জায়ান্ট ইউনিলিভার। এজন্য ইউনিলিভারের ব্যয় হবে ৩৩০ কোটি ইউরোর সমপরিমাণ অর্থ, যা নগদ অর্থ ও শেয়ারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। চুক্তি অনুসারে ইউনিলিভার ও জিএসকের এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া তিন ধাপে সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ভারতে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার লিমিটেডের (এইচইউএল) সঙ্গে জিএসকে কনজিউমার হেলথকেয়ার ইন্ডিয়ার শতভাগ একীভূতকরণ হবে। দ্বিতীয় ধাপে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জিএসকে বাংলাদেশ লিমিটেডের ৮২ শতাংশ শেয়ার (সেটফার্স্টের মালিকানাধীন) কিনে নেবে ইউনিলিভার, যার ইকুইটি ভ্যালু দাঁড়ায় প্রায় ১৭ কোটি ইউরো। তৃতীয় ভাগে নগদ ৪৭ কোটি ডলার ব্যয়ে এশিয়ার অন্য ২০ দেশে জিএসকের হেলথ কেয়ার নিউট্রিশন ব্যবসা ও ব্র্যান্ডস্বত্ব কিনে নেবে ইউনিলিভার।

এরই মধ্যে প্রথম ধাপে ভারতে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার ও জিএসকের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালের (এনসিএলটি) চণ্ডীগড় বেঞ্চ জিএসকে ও হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের একীভূতকরণ স্কিম অনুমোদন করে। স্কিম অনুসারে জিএসকের একটি শেয়ারের বিপরীতে শেয়ারহোল্ডারদের হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের ৪ দশমিক ৩৯টি শেয়ার দেয়া হবে। হিন্দুস্তান ইউনিলিভার জিএসকের সঙ্গে একীভূতকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে এ বছরের ১ এপ্রিল পর্ষদ সভা আহ্বান করেছে। সেদিন থেকেই ভারতে এ দুই বহুজাতিক কোম্পানির একীভূতকরণ কার্যকর হয়েছে। একীভূতকরণের পর আগামী বছর থেকে কোম্পানিটির ব্যবসা ৪৫ হাজার কোটি রুপিতে দাঁড়াবে বলে সেসময় জানিয়েছিলেন হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের চেয়ারম্যান সঞ্জীব মেহতা।

৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৫৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে জিএসকে বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৮১ টাকা ৮৩ পয়সা, যেখানে আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৫২ টাকা ৭৫ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩২ টাকা ১৪ পয়সা, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ১০৪ টাকা ১১ পয়সা।

২০১৮ সালে চট্টগ্রামের ওষুধ কারখানা বন্ধ ও কর্মীদের পাওনা বাবদ বড় অংকের অর্থ ব্যয় হওয়ার কারণে সে বছর কোম্পানিটির লোকসান হয়েছিল। তবে ২০১৯ সালে কারখানা বন্ধের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যয় সংকোচনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে কোম্পানিটি গেল হিসাব বছরে প্রত্যাশিত মাত্রায় মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই জিএসকের পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশে ওষুধ উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছরের ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) শেয়ারহোল্ডাররা এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। তবে ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করলেও কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত কনজিউমার পণ্যের ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে।

জিএসকে বাংলাদেশ ১৯৭৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর অনুমোদিত মূলধন ২০ কোটি টাকা। বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১৪৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৮১ দশমিক ৯৮ শতাংশই রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালক সেটফার্স্টের কাছে। এছাড়া ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ দশমিক ৫৩, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ৩৭ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ২ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

সর্বশেষ গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) জিএসকে বাংলাদেশের শেয়ার ২ হাজার ৪৬ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ ২ হাজার ২৪৪ টাকা ও সর্বনিম্ন ১ হাজার ৪০০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:১৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ জুন ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11187 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।