শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি

জরিমানা গুনছে সিলভার কম্পোজিট ও সিরাজ খান বসাক কোম্পানি

আদম মালেক   |   মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২১   |   প্রিন্ট   |   312 বার পঠিত

জরিমানা গুনছে সিলভার কম্পোজিট ও সিরাজ খান বসাক কোম্পানি

বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের যোগসাজসে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি করে। এ জালিয়াতির দায়ে কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল(এফআরসি) সূত্র জানায়, জালিয়াতির ঘটনায় সিলভার কম্পোজিট ও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের জালিয়াতির ঘটনায় শুনানি হবে। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এফআরসির প্রয়োগ (এনফোর্সমেন্ট) বিভাগ থেকে নোটিশ পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

এফআরসির চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে গঠিত প্যানেল বোর্ডে এ শুনানি হবে। শুনানিতে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সিলভার কম্পোজিট ও সিরাজ খান বসাক কোম্পনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সকল সুযোগ পাবে।
ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের ৪৮ ধারা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫ বছর কারাদণ্ড ও নূন্যতম ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সিলভার কম্পোজিট মিলে আর্থিক প্রতিবেদনে যে মারাত্মক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে তাতে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান থাকলেও এ মুহূর্তে কোম্পানিগুলোকে শুধু জরিমানা করতে চায় এফআরসি। এফআরসি কারাদণ্ডে না গিয়ে অর্থদণ্ডের মাধ্যেমে কোম্পানিগুলোকে সংশোধনের সুযোগ দিতে চায়। যাতে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিয়ে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে।

২০১৮-১৯ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে সিলভার কম্পোজিট ওয়ান ব্যাংকে প্রদত্ত আর্থিক প্রতিবেদনে আয় দেখায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আর আইএফআইসি ব্যাংকে দাখিল করা প্রতিবেদনে দেখায় ৭৩৪ কোটি টাকা। একইভাবে মুনাফা, সম্পদ ও আয়করের তথ্যেও রয়েছে বিশাল ফারাক। অন্যান্য তথ্যেও ব্যাপক গরমিল। আর্থিক জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করেছে এফআরসির অডিট প্র্যাকটিস রিভিউ (এপিআর) বিভাগ। বিভাগটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো. সাঈদ আহমেদ এফসিএ গত ১৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেন।

জালিয়াতির চিত্র তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, ওয়ান ব্যাংকের কাছে জমা দেয়া আর্থিক প্রতিবেদনে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় দেখানো হয়েছে ৪৯৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অথচ আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে জমা দেয়া একই বছরের আরেকটি আর্থিক প্রতিবেদনে আয় দাঁড়িয়েছে ৭৩৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। একইভাবে ওয়ান ব্যাংকের কাছে মোট মুনাফা ৭৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা দেখানো হলেও আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে সেটি হয়ে গেছে ১৪২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ওয়ান ব্যাংকের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসের পরিচালন মুনাফা দেখানো হয়েছে ৬১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যেখানে আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে দেয়া প্রতিবেদনে পরিচালন মুনাফা ছিল ১২৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

একইভাবে ওয়ান ব্যাংকের কাছে জমা দেয়া আর্থিক প্রতিবেদনে কর-পূর্ববর্তী মুনাফা ১৫ কোটি ৭৯ লাখ, সংরক্ষিত আয় ২২ কোটি ৮৫ লাখ, মজুদ পণ্য ২৩৫ কোটি ৭৮ লাখ, বিবিধ দেনাদার ১১৮ কোটি ২৩ লাখ, চলতি সম্পদ ৩৭২ কোটি ২৭ লাখ, মোট সম্পদ ৯৬৯ কোটি ৮১ লাখ এবং মোট ইকুইটি ১৭১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে কর-পূর্ববর্তী মুনাফা ৭৭ কোটি ৯ লাখ, সংরক্ষিত আয় ৩৯০ কোটি ৭১ লাখ, মজুদ পণ্য ২৫৯ কোটি ৮৯ লাখ, বিবিধ দেনাদার ২০৩ কোটি ৮ লাখ, চলতি সম্পদ ৫২০ কোটি ৪৬ লাখ, মোট সম্পদ ১ হাজার ৩৪৮ কোটি ৪০ লাখ এবং মোট ইকুইটি ৫৩৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এমনকি আয়কর সঞ্চিতি হিসেবে ওয়ান ব্যাংকের কাছে ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা দেখানো হলেও আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে তা দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৬ লাখ টাকা।

দুটি আর্থিক প্রতিবেদনে ব্যাপক গরমিলের কারণে সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসের কাছে নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী এবং নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাছে নিরীক্ষা নথি তলব করে এফআরসি। কোম্পানি কর্তৃক জমা দেয়া আর্থিক বিবরণী এবং নিরীক্ষক কর্তৃক জমা দেয়া নিরীক্ষা নথি পর্যালোচনায় এফআরসি দেখতে পায় যে ওয়ান ব্যাংকের কাছে জমা দেয়া নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন কোম্পানি ও নিরীক্ষক কর্তৃক জমা দেয়া আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে মিল রয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংকে জমা দেয়া নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জাল বলে প্রতীয়মান হয়েছে এফআরসির কাছে।

এ বিষয়ে সিলভার লাইন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী (সিইও) হেলাল মোহাম্মদ নূরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলেননি। ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে যান। পরে যোগাযোগ করবে বলে জানানো হয়।

এফআরসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া জানান, এফআরসির তদন্তে সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসের আর্থিক জালিয়াতির বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। কোম্পানিটি ওয়ান ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এক্ষেত্রে তথ্যগত ব্যাপক গরমিল রয়েছে। এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এরই মধ্যে এফআরসির প্রয়োগ (এনফোর্সমেন্ট) বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৫:৩১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11187 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।