শনিবার ৪ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য

দুদকের মামলায় ফেঁসে গেলেন জীবন বীমার জহুরুল ও এজিএম মাহবুবুল

আবুল কাশেম   |   রবিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২২   |   প্রিন্ট   |   423 বার পঠিত

দুদকের মামলায় ফেঁসে গেলেন জীবন বীমার জহুরুল ও এজিএম মাহবুবুল

৪০ কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় ফেঁসে গেলেন জীবন বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব ) মো. জহুরুল হক ও সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম। শুধু তাই নয় জীবন বীমা কর্পোরেশনের এমডি ও এজিএম’এর নিয়োগ বাণিজ্য বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীদের ধরার জন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগঠিত অপরাধের উপর অনুসন্ধান শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। তবে মামলার তদন্তে আরও অনেকের সংশ্লিষ্টার বিষয়টি বেরিয়ে আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দুদক সচিব মাহবুব হোসেন।
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেছেন, জীবন বীমা কর্পোরেশনে উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এবং অফিস সহায়ক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় জীবন বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব ) মো. জহুরুল হক ও সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহবুবুল আলমকে আসামি করা হয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে আসবে কারা কিভাবে জীবন বীমায় লোক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি এবং ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত। এ মামলায় সংশ্লিষ্ট কোন অপরাধীকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জীবন বীমা করপোরেশনের উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এবং অফিস সহায়ক পদে মোট ৫১২ জনকে নিয়োগ দেওয়ার নামে ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জালিয়াতি মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষার নাটক মঞ্চস্থ করেন ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি ও এজিএম’এর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি সিন্ডিকেট। কিন্তু জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর এবার ফেঁসে গেলেন এমডি-এজিএমসহ পুরো সিন্ডিকেট চক্র।
এদিকে গত ২০ জানুয়ারি জীবন বীমা কর্পোরেশনে নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি ও মোটা অংকের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি জহুরুল হক এবং সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুর আলম সিদ্দিকী বাদী হয়ে একটি মামলাটি দায়ের করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা নম্বর-১৫।
মামলার অভিযোগে প্রকাশ, ২০২১ সালের ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর জীবন বীমা কর্পোরেশনের উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও অফিস সহায়ক পদে ৫১২ জন নিয়োগের জন্য এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় জীবন বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহুরুল হকের বিরুদ্ধে এসব পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে নিয়োগ বাণিজ্যের তথ্য উপাত্তসহ অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এই নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অন্তত ৪০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে।

জীবন বীমা কর্পোরেশনের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজীর নেতৃত্বে একটি টিম জীবন বীমা করপোরেশন অফিসে অভিযান চালায়। অভিযানকালে দুদক কর্মকর্তারা প্রাপ্ত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করেন।

সূত্র মতে, এসব পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জীবন বীমা কর্পোরেশনের চুক্তি হয় এবং তারা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করে দেন। কিন্তু জীবন বীমার এমডি ওই প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করেন এবং তার পছন্দের লোকদের দিয়ে একটি কমিটি করে প্রশ্ন তৈরি করে ৫১২ জন পরীক্ষার্থীর কাছে তা বিলি করেন। তবে চাকরি প্রার্থী প্রত্যেকের কাছ থেকে গড়ে ৮ (আট) লাখ টাকা করে অগ্রিম হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছে দুদক। আর এসব অপকর্মে এমডির সঙ্গে কর্পোরেশনের আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত থাকার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে দুদক।

দুদকের মামলায় আরও উল্লেখ রয়েছে, জীবন বীমা কর্পোরেশনের উক্ত তিন পদে নিয়োগ পরীক্ষার এমসিকিউ প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে অভিনব পন্থায় প্রশ্ন কর্তাদের প্রস্তুতকৃত প্রশ্ন ও তার সঠিক উত্তর নিজের মতো করে প্রশ্নপত্রের মধ্যে সাজিয়ে তা ছাপিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি’র সিন্ডিকেট। পরবর্তীতে তা চাকরি প্রার্থীদের সরবরাহ করে পরীক্ষা নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে তাদের উপর অর্পিত সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনকভাবে বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের লোকদের নিয়োগদানের জন্য প্রশ্নের উত্তরের ধারাবাহিক ক্রমবিন্যাস পরিবর্তন করেছেন।

জীবন বীমার এমডি মো. জহুরুল হক এবং এজিএম মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম পারস্পরিক যোগসাজশে তাদের উপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অসৎ উদ্দেশ্যে জীবন বীমা কর্পোরেশনে নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়াধীন উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও অফিস সহায়ক পদে লিখিত (গঈছ) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির সরবরাহকৃত প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র নিজেদের মনমতো পরিবর্তন করেন। পরে নিজেদের মনমতো ক্রমবিন্যাস সাজান, যেমন- যে সকল প্রশ্নপত্রের সিংগেল ডিজিট (১ হতে ৯ ক্রমিক) ক্রমিকে ২, ৭ এবং ডাবল ডিজিট (১০ হতে ৮০ ক্রমিক) ক্রমিকের শেষের ডিজিট ০, ২ ও ৭ আছে তার সঠিক উত্তর অ তে। যে সকল প্রশ্নপত্রের সিংগেল ডিজিট (১ হতে ৯ ক্রমিক) ক্রমিকে ১ অথবা ৫ এবং ডাবল ডিজিট (১০ হতে ৮০ ক্রমিক) ক্রমিকের শেষের ডিজিট ১ অথবা ৫ আছে তার সঠিক উত্তরটি ই- তে। যে সকল প্রশ্নপত্রের সিংগেল ডিজিট (১ হতে ৯ ক্রমিক) ক্রমিকে ৪, ৮, ৯ এবং ডাবল ডিজিট (১০ হতে ৮০ ক্রমিক) ক্রমিকের শেষের ডিজিট ৪, ৮, ৯ আছে তার সঠিক উত্তরটি ঈ-তে। যে সকল প্রশ্নপত্রের সিংগেল ডিজিট (১ হতে ৯ ক্রমিক) ক্রমিকে ৩, ৬ এবং ডাবল ডিজিট (১০ হতে ৮০ ক্রমিক) ক্রমিকের শেষের ডিজিট ৩, ৬ আছে তার সঠিক উত্তরটি উ-তে উল্লেখ করা হয়। যার ফলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় দুদক মামলা দায়ের করেছে। এ ব্যাপারে জীবন বীমা কর্পোরেশনের এমডি মো. জহুরুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

 

 

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।